• যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের (জে.এম সেন) বাসভবন না ইতিহাস ঐতিহ্যর ধারক?

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

 

যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মতো ব্রিটিশ বিরোধী কিংবদন্তির স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে বুলডোজারের আঘাত! যে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সম্পত্তির উপরে আজ গোটা চট্টগ্রাম দাঁড়িয়ে তাঁর বাড়ির দখল নিতে বুলডোজারের আঘাত?

যে দেশপ্রিয়র কন্ঠে ব্রিটিশের মসনদ কাঁপতো! যে দেশপ্রিয়র টাকায় গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ডাক্তার খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়, কুসুমকুমারী বালিকা বিদ্যালয়, ত্রাহিমেনকা সংগীত মহাবিদ্যালয়, জে এম সেন হল, জে এম সেন স্কুল এন্ড কলেজ, বর্তমানে এই বাড়ির শিশুবাগ স্কুল, চট্টগ্রাম সংস্কৃতিক কলেজ, চন্দনাইশস্থ বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা ডিগ্রি কলেজ, বরমা উন্নতমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরমা দাতব্য চিকিৎসালয়, ভারতের কলিকাতা ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজ, দুর্গাপুর ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজ সব অজস্র প্রতিষ্ঠান!

যাঁর অবদান চট্টগ্রামের সমস্ত মানুষ গায়ের রক্ত দিয়েও শোধ করতে পারবেনা তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির উপর আঘাত!!! ছিঃ ছিঃ!!

যাঁর নামে কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্ক। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি তিনি। কলকাতার ৫ বারের মেয়র তিনি অথচ স্বাধীনতার জন্য নিজের সবটাকা বিলিয়েছেন এদেশের মানুষের জন্য। সহস্র বিপ্লবীদের পিছনে অকাতরে টাকা ঢেলেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য! ব্যারিস্টারি করে যে টাকা কামাই করেছেন সব মানবসেবায় দিয়েছেন, এক টাকাও নিজের বিলাসে ব্যয় করেননি; অথচ তিনি মরেছেন বিনা চিকিৎসায় জেলে!! একটা টাকাও রাখেননি উত্তরসূরীদের জন্য! তাঁর স্ত্রীও বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে! তাঁর বাড়ির উপর আঘাত!!

দেশভাগের পর চাইলে ভারতে চলে যেতে পারতেন তাঁর স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তা! অথচ যাননি! থেকেছেন এই চট্টগ্রামেই! বিলিয়েছেন মানুষের জন্য। ১৯৭০ সালে যখন চিকিৎসার জন্য নেলী সেনগুপ্তা কলকাতা যান, পাকিস্তান সরকার তাঁকে এদেশে নিষিদ্ধ করেছিলো। তাঁর বাড়ি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দখল নিয়েছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। নেলী সেনগুপ্ত ও আর ফিরতে পারেননি! ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীনের পর যখন নেলী সেনগুপ্তা এলেন সরকার তবুও দেয়নি তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে! তাঁরা বহুবার চেয়েছেন সম্পত্তি ফিরে পেতে, দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন অথচ ফিরে পাননি! অথচ আজ আদালত রায় দেয় অমুকের পক্ষে, কাল তমুকের পক্ষে!!

এই বাড়িতে একসময় এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শরৎ বসু, শওকত আলীর মতো মানুষেরা।

প্রচার চলছে আদালত নাকি ভূমিদস্যুদের পক্ষে রায় দিয়েছে! অথচ এটা অর্পিত সম্পত্তি। যে কারনে জেলা প্রশাসন ইজারা দেয় এই বাড়ি। বর্তমানে এখানে “শিশুবাগ” নামে একটা স্কুল আছে।
কতটা নিচু হলে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মতো কিংবদন্তির স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিতে পারে!!

অথচ এই বাড়িটির উচ্ছেদে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলোনা। কোন এসিল্যান্ড ও জানেনা! জেলা প্রশাসক বললেন তিনিও জানেন না! তবে পুলিশ কি করে এলো? আদালতের রায় কিভাবে হলো?
ভাগ্যিস আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সহ সচেতন নাগরিক সমাজের অনেকে শুনেই ছুটে গিয়েছিলেন।

রানা দাশগুপ্ত ছুটে গিয়ে বললেন; “এই ভবন ভাংতে হলে আগে আমাকে মেরে ফেলতে হবে। এটা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ভবন।”
প্রতিবাদকারী ও সাংবাদিকেরা এলে পুলিশ ও দখলকারীরা লেজ গুটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়! আর কতোটুকু বিশ্বাসঘাতক হতে পারেপ।
আদালত ভবনের জায়গাটাও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের দেয়া দানে নাকি