‘আইডিয়া’ মূলত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উদ্যোগ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যশোরের খড়কী শাহ্ আব্দুল করিম রোডে অবস্থিত ব্যতিক্রম এ প্রতিষ্ঠানটি ‘আইডিয়া পিঠা পার্ক’ নামেই পরিচিত। থরে-বিথরে সাজানো পিঠার পাশাপাশি এবার এখানে যুক্ত হয়েছে বাঁশজাত খাদ্যপণ্য ও পানীয়।

‘সুস্থ যদি থাকতে চান; নিয়মিত বাঁশ খান!’ ব্যতিক্রম এই স্লোগানকে ধারণ করে আইডিয়া পিঠা পার্ক সম্প্রতি সংযোজন করেছে ‘বাঁশ কাবাব’ ও ‘বাঁশপাতার চা’। বাঁশজাত স্বাস্থ্যসম্মত ও ভেষজ গুণসমৃদ্ধ খাবার ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থেকেই অভিনব এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাঁশ কাবাব ও বাঁশপাতার চা সম্পর্কে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সাবেক সভাপতি শাহরিয়া ইয়াসমিন মীম জানান, সরু তল্লা বাঁশের মধ্যে বিভিন্ন মসলা দিয়ে মেরিনেট করা মাংস কয়লায় পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাঁশ কাবাব। আর বাঁশের কচিপাতা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হচ্ছে বাঁশপাতার চা।

মীম বলেন, ‘বাঁশের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। কাঁচা বাঁশের মধ্যে থাকা রসে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে রান্না করা মাংস খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি ঔষধি গুণসমৃদ্ধ। বাঁশ পুড়িয়ে রান্না করা মাংসে যোগ হওয়া কাঁচা বাঁশের ফ্লেভারও খাবারে যোগ করছে ইউনিক স্বাদ।’

আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা ও পিঠা পার্কের প্রতিষ্ঠাতা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘এটি অভিনব ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ। কারণ বাঁশ ও বাঁশপাতার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। বাঁশ কাবাব আদিবাসীদের উদ্ভাবন হলেও আইডিয়ার কর্মীরা এর আধুনিকায়ন করেছে। আর বাঁশপাতার চা একেবারেই ইউনিক। স্বাস্থ্যকর এই খাবারকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন, পরিবেশন ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্যই এ প্রচেষ্টা।’

আইডিয়ার অন্য সব আয়োজনের মতো বাঁশজাত খাবারেও পুষ্টি ও গুণগত মানের ব্যাপারে কোনো আপস নেই বলে উল্লেখ করেন শাহীন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ জানান, বাঁশের রয়েছে বিস্ময়কর উপকারিতা।

তিনি বলেন, ‘বাঁশ নিয়ে গবেষণায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও চীন, যুক্তরাজ্য, কোরিয়া এমনি ভারতেও বাঁশের ওপর গবেষণা করে এর তৈরি খাদ্যপণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হচ্ছে। গবেষণা থেকে প্রমাণিত- বাঁশ ও বাঁশপাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানুষের হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। আবার এর অ্যান্টি এইজিং উপাদান চুল, ত্বক সুস্থ রাখে, ফলে বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।’

তিনি জানান, সাধারণ চায়ের মধ্যে ক্যাফেইন থাকে, যার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। বাঁশের কচি পাতা দিয়ে তৈরি চায়ে কোনো ক্যাফেইন কিংবা ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বরং এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও সিজনাল ফ্লু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়া বাঁশে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিংক, সিলিকা। এগুলো হাড়ের ঘনত্ব ও কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর বাঁশপাতায় থাকা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবেও ভালো কাজ করে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি ঘরোয়া আয়োজনে ‘বাঁশ কাবাব ও বাঁশপাতার চা’য়ের গুণাগুণ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই খাদ্য ও পানীয়র স্বাদ গ্রহণ করেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার।

তিনি বলেন, ‘আইডিয়ার চিন্তাধারা সব সময়ই অনন্য। শিক্ষার্থীরা এখানে উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে। তাদের নতুন এই দুটি খাবারের মান ও স্বাদ মন কেড়েছে।’