জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয়। ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে।সময়ের বিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে।

এমন ঐতিহ্যের ধারক বাহক হয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরলে প্রথমেই নাম আসবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পার হলেও জবিতে এখনও আবাসন সংকট শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা এবং প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার পরই যখন ঢাকায় এসে এমন সংকটের মুখোমুখি হয় তখন চেপে ধরে তাদের একরাশ হতাশা ও অনিশ্চয়তা।অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার মেধার স্বাক্ষর রেখে বিশ্বিবদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারে না জবিতে। আবার এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী আছে যারা ঢাকায় আবাসন খরচ না জোগাতে পেরে নিজ স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও ফিরে যাচ্ছে নিজ গ্রামে।বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত- নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের।আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আশাবাদী থাকে যে স্বল্প খরচে নিজের উচ্চশিক্ষা অর্জন করবে।

আর এ আবাসন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় জবি হল আন্দোল। যার মধ্যে বড় দুটি হল আন্দোলন হয় ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে । তবে ২০১৬ সালের আগস্টের হল আন্দোলনের সময় প্রশাসন ঘোষণা দেন নদীর ওপার কেরানীগঞ্জে ছাত্রদের জন্য হাজার আসন বিশিষ্ট হল নির্মাণ কাজের।এর পূর্বে ব্যপক আন্দোলনের মুখে পড়ে ২০১৩ সালে প্রশাসন কর্তৃক শুরু হয় একটি ছাত্রী হল নির্মাণের এবং তা সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে। যা জবি শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী খুবই অপ্রতুল। অন্যদিকে কেরানীগঞ্জে আবাসিক হল সহ নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্প সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হলেও এবং কয়েকদফা বাজেট বৃদ্ধি করেও ২০২২ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও নানাবিধ দূর্নীতি ও ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা এবং কাজের ধীরগতির ফলে ২০২৩ সালে এসেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

আবাসন খরচ জোগাতে শিক্ষার্থীদের নিজ পড়াশোনার পাশাপাশি করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টিউশন। যার ফলে অর্থ চিন্তা সবসময়ই একজন জবি শিক্ষার্থীর মাথায় ভর করে থাকে, ফলাফলস্বরূপ শিক্ষার্থীরা না পারছে নিজের একাডেমিক পড়াশোনা সঠিক ভাবে সম্পাদন করতে আর না পারছে কোনো নতুন বিষয়ে গবেষণা কিংবা নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা করতে।জবিতে আসা প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীই তাই একরাশ হতাশা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন পার করছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা এসব তরুণ মেধাবীদের কাজ ছিল নিজের দেশকে নিয়ে চিন্তা করা। নতুনত্ব সংযোজন করে নিজের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানোর। কিন্তু আবাসন সংকট সহ নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে হচ্ছে মেসের ভাড়া নিয়ে, অর্থাভাব নিয়ে।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় হাসান বলেন, দুই বছর যাবত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। এখানে পড়াশোনার মান ভালো হলেও এর অবকাঠামো অনেক অনুন্নত ও অপর্যাপ্ত। এখানে যথেষ্ট আবাসন ও ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর যাবত নতুন ক্যাম্পাস তৈরির মাধ্যমে এই সংকট দূর করতে চাইলেও এখনো তা সম্পূর্ণ অকার্যকর।অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমরা খুবই কম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি।প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তত হল সুবিধা নিশ্চিত করা।

তাই অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধান এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রানের দাবি।