ত্যাগের মহিমা নিয়ে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদের দিন সকালে ঈদ জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঈদ উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দেন ধর্মপ্রাণ ও সামর্থ্যবান মুসলমানরা। আল্লাহর রাহে নিজের জানমাল ও প্রিয়তম জিনিস সন্তুষ্ট চিত্তে বিলিয়ে দেওয়ার এক সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়। মূলত মনের পশুকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়াই ঈদুল আজহা’র মূল উদ্দেশ্য। ঈদ নিয়ে তারুণ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আনন্দেও। নানা আয়োজন, কার্যক্রম ও ঘোরাঘুরির মধ্য দিয়ে কেটেছে তাদের ঈদ। তরুণ শিক্ষার্থীদের আনন্দে কাটানো ঈদ উদযাপন তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম।
আনন্দ ভাগাভাগি আর মিলনমেলাই ঈদ
মুসলিমদের জন্য বিশেষ দুটি ঈদ। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতেই ফিরে আসে দূরদূরান্তে অবস্থা করা আত্মীয় স্বজন। ব্যস্তময় ক্যাম্পাস থেকে ঈদে বাড়ি ফেরা আর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদ কাটানো মানে তো খুশি আর খুশির তুফান। ঈদুল আজহায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করার আনন্দ ভাষা প্রকাশ করার মত নয়। আমারও তার ব্যতিক্রম নয়। সকালে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের নামাজ শেষে কোরবানি করা, গরিবদের মাঝে মাংস বন্টন এবং বিকালে বন্ধুদের সাথে প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে ঘুরতে যাওয়া আর আড্ডার মাঝেই কেটেছে ঈদের দিনটি। ঈদুল আজহা আমাদের আত্মত্যাগের মহান শিক্ষা দেয়। সকলে যেন ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি সেটিই কাম্য।
আবদুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেয় ঈদুল আজহা
পবিত্র ইদুল আজহা শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনে। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হয় পবিত্র ইদুল আজহা। খুশির এ দিনটির শুরু হয় আব্বু ভাইয়ার ইদের নামাজ দিয়ে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে ঈদের সালাত আদায় করে। আর এদিকে পাশাপাশি চলতে থাকে আম্মুর পায়েস, পোলাও কোরমা রান্নার কাজ। তারপর আসে পশু কোরবানির পালা। আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি করা হয় হালাল পশু। আত্মীয়-স্বজনদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানো, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা চলতেই থাকে দিনভর। অনেক প্রতিক্ষিত ঈদে সকলের মাঝেই বাঁধভাঙা আনন্দ উল্লাসের জোগান দেয়। তবুও ছিল কিছু প্রতিকূলতা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর মূল্যবৃদ্ধি, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, ভয়াবহ বন্যা অনেক মানুষেরই ঈদের সেই উচ্ছ্বাস কেড়ে নেয়। প্রত্যাশা থাকবে শান্তির বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার আসবে খুশির ঈদ।
ফ্লোরা ইসলাম
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
এবারে ইদ আনন্দ নাকি আত্মউপলব্ধি
যিলহজ্বের কোন এক প্রান্তে চক্ষুদ্বয় মেলতেই মশারি ভেদ করে সিলিং ফ্যানের ঘুরতে থাকা নজরে আসলো। দূর থেকে আম্মুর স্পষ্ট কন্ঠস্বর “আজ ইদের দিনে আর কতক্ষণ ঘুমাবি!” কিছুক্ষণের মধ্যে আম্মুর কন্ঠস্বর মিলিয়েও গেলো। ঠোঁটের কোনে অস্ফুট হাসির রেখা ফুটে উঠল। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়েও ইদ শব্দটা একইরকম ভাবে আমার অন্তর ও বাহিরের সমস্ত জরাজীর্ণতাকে মাড়িয়ে বাঁধ ভাঙ্গা খুশির জোয়ার এনে দেই। এসব ভাবনা এখানেই শেষ করে ফ্রেশ হয়ে পার্থিব জগতের সবচেয়ে ভালবাসার মানুষের হাতের সেমাই লুচি খেয়ে আনন্দময় দিনের শুরু। অতঃপর উত্তম পোশাকে পারিবারিক আড্ডা, বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি মধ্যেই মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে পশু কুরবানির বিষয় সম্পন্ন হলো। এতসব আনন্দ, খুশি, ভালো লাগার মধ্যে মনে হতে লাগল হৃদয়ের পশুত্ব দমন করে ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল করতে হবে। এবারের ঈদ অসীম আনন্দ ও আত্মউপলব্ধির দোলাচালেই কেটেছে।
মাহজুবা তানিজ
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ত্যাগ ও মহিমার ঈদুল আজহা
করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এবারক প্রথম স্বাভাবিক ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে, খেজুর-সেমাই খেয়ে ঈদগায় সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বাবার সাথে রওনা হই। নামাজ শেষ করে এসে বেশি দেরি না করে আল্লাহর নামে বাবা গরু জবাই করা হয়। এরপর শুরু হয় মাংস কাটাকাটি। ঈদুল আজহাতে মাংস কাটার মজাই আলাদা। কাটাকাটি শেষ হওয়ার পর আত্মীয় এবং গরিবদের মাঝে তাদের প্রাপ্য অংশ ভাগ করে দেয়া হয়। ভাগাভাগি পর্বের পর হাত মুখ ধুয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সবাই দুপুরের খাবার খেতে বসে। এরপর বিকেল বেলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরতে বের হই। সব মিলিয়ে এই ঈদের দিনটি অনেক আনন্দের ছিল। প্রায় দুই বছর পর এরকম স্বাভাবিক ঈদ উদযাপন করে সবাই আনন্দে মেতে উঠে। এই ঈদের মাধ্যমে যেমন মানুষে মানুষে সম্পর্ক মজবুত হয়েছে তেমনি দূর হয়েছে ধনী গরীবের বৈষম্যও।
সিনদীদ চৌধুরী
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় ঈদ উদযাপন
ঈদ প্রধানত মুসলিমদের উৎসব। কিন্তু ঈদ যে সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য এতোটা আনন্দের হতে পারে তা জানা ছিলো না। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর পর ই আসে এক বন্ধু থেকে ফোন। বন্ধুর সাথে তার বাড়িতে সারাদিন তাদের সাথে ঈদ পালন করি। সকালে চলে গেলাম ওদের বাসায়। আন্টি বিভিন্ন রকম সেমাই, পিঠা, চটপটি, নুডলস খেতে দিলেন। এরপর মাংস বিতরণ শেষে অনেক অবাক হলাম। গরুর মাংস খাই না বলে আন্টি অন্য আয়োজন করেছে। প্রতি ঈদেই গরুর মাংস খায় সবাই। এরপর বন্ধুর সাথে বিকেলে ঘুরতে গেলাম। সরকারের সুন্দর শৃংখলা দেখে মুগ্ধ হলাম, কারণ সব বর্জ্য পরিষ্কার করা হচ্ছিল। সব শেষ বাসায় আসলাম। দিনটি হয়তো আমার উদযাপন করার কথা ছিলো না। কিন্তু ধর্ম যার যার উৎসব সবার, তাই এই ঈদে অসাম্প্রতিকতার এক অনন্য উদাহরণ পেলাম। সব মিলিয়ে এইবারের ঈদুল আজহা আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।
উদ্দীপ দে
শিক্ষার্থী, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।