ভুটানে প্রথমবার গিয়ে খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম। ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট, কোথাও কোনো ময়লা নেই। এমনকি ধুলোও জমে নেই কোথাও। এর কারণ কী? উত্তরটা পেয়েছিলাম আরো পরে। ভুটানের রাজধানীর অন্যতম উচ্চশিক্ষাকেন্দ্র রয়্যাল থিম্পু কলেজে গিয়েছি। মনোমুগ্ধকর। এর পরিবেশ দেখেই এমনিতেই পড়ার আগ্রহ জন্মাবে। নীরব, পরিচ্ছন্ন। কোলাহলহীন। প্রথমে মনে হয়েছিল শিক্ষার্থী হয়তো ভ্যাকেশন চলছে। আসলে তা নয়। শিক্ষার্থী ঠিকই আছে। কিন্তু কেউ উচ্চশব্দে কথা বলছে না। পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী বসে আলাপ করছে কিন্তু সাউন্ড নেই। মনে হলো ভুল করে পৃথিবীর বাইরে অন্য এক জগতে চলে এসেছি। মানুষ আছে কথাও বলছে কিন্তু সাউন্ড নেই। থিম্পু থেকে সম্ভবত সেদিন আমরা রাজধানীর বাইরে যাচ্ছিলাম। একটা বাঁক নেওয়ার সময় দেখলাম প্রাইভেট কার থেকে কমলার খোসা জানালা দিয়ে ফেলল। না খুব বেশি যেতে পারেনি গাড়িটা। পুলিশের গাড়ি মিনিট খানেকের মধ্যে উদয় হয়ে গাড়িকে পাকড়াও করে ১৭৫০ গুলট্রাম জরিমানা করল। আমাদের গাড়ির চালক জানালেন একটা চকলেটের খোসা রাস্তায় ফেলা যাবে না। পুলিশ এসে ধরে ফেলবে। দূষণহীন, ভুটানের রাস্তাঘাট কেন পরিষ্কার আমি বুঝতে পালাম। আসলে ময়লা ফেলার নিয়ম-কানুন শুনেছি বিশ্বের বহুদেশেই আছে। ইউরোপে নাকি নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা রেখে দিতে হয়, রাতে গাড়ি এসে নিয়ে যায়। জার্মানিতে একেক ধরনের ময়লা একেক ধরনের ডাস্টবিনে ফেলতে হয়। প্লাস্টিকের বর্জ্য যেটা ফেলতে হবে সেখানে কাগজের ময়লা ফেলা যাবে না। প্লাস্টিকের যেসব খালি বোতল বা বাটি বর্জ্য হিসেবে ফেলতে চান সেগুলো ধুতে নিতে হবে। রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে এমন বর্জ্য যেমন ফোনের ব্যাটারি যেখানে সেখানে কোনোভাবেই ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ফেলতে হবে।
ঢাকায় কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে অনেকগুলো সুদৃশ্য ডাস্টবিন রাস্তার ধারে ধারে স্থাপন করা হয়েছিল। সেসব তেমন একটা এখন চোখে পড়ে না। তবে গত সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটা ডাস্টবিন চোখে পড়ল। প্লাস্টিকের বোতল, চায়ের কাপ ফেলার জন্য বোতল আকৃতির চমৎকার এই ডাস্টবিন দৃষ্টি আকর্ষক বটে। এমন ডাস্টবিন দেখলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরে ময়লা ফেলতে ইচ্ছে করবে না, অন্তত আমার তাই মনে হলো। অনেককে আনন্দ নিয়েই এই ডাস্টবিন ব্যবহার করতে দেখলাম। জানি না কার মাথায় এমন বুদ্ধি এসেছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা ঠেকাতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আর আমার মনে হয় এই ধরনের ডাস্টবিন যদি ঢাকার প্রায় জায়গায় স্থাপন করা হয় তাহলে প্লাস্টিকের বর্জ্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। ডাস্টবিনের সম্মুখভাগে লেখা, ‘বোতলের ভিতর প্লাস্টিক বর্জ্য ও বোতল রাখুন জলাবদ্ধতা দূর করুন’। এই ডাস্টবিন স্থাপন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।