আজ রহমতের ষষ্ঠ দিন। জানি না রহমতের সরোবরে কে কতটুকু সিক্ত হতে পেরেছি। তাকওয়ার পোশাকে কতটা আবৃত করতে পেরেছি নিজেকে। হতে পেরেছি কতটা আল্লাহর রঙে রঙিন। মাটির দেহে খোদায়ী রঙের চুনকাম করতেই সিয়ামের এ ব্রত পালন। আল্লাহ বলেন, খোদাতায়ালার রঙের চেয়ে উত্তম রং আর কী আছে।

 

মহানবি (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মত যদি জানত রোজা কী জিনিস, তাহলে রোজা রাখা এত কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও সারা বছর রমজান মাসের কামনা করত। (বায়হাকী)। নবিজি (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে তোমরা চারটি কাজ বেশি করে করবে। এর দুটি আল্লাহর জন্য যেমন-১. কালিমায়ে তাইয়্যেবা বেশি করে পড়া, ২. ইসতেগফার বেশি করে পড়া। আর বাকি দুটি কাজ এমন যা না করে তোমাদের উপায় নেই-১. জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করা, ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। এ আমলগুলোর পালনে সচেষ্ট হলেই হওয়া যাবে খোদার রঙের রঙওয়ালা।

রমজান মাসে ফরজ আদায়ের পাশাপাশি নফল ইবাদতগুলো গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতে বলা হয়েছে। নামাজের ক্ষেত্রে কাজা নামাজগুলো আদায় করা। এ ছাড়া তাহাজ্জুদ, এশরাক, চাশত, আওয়াবিন ইত্যাদি নামাজ পাবন্দির সঙ্গে আদায় করা। রমজান মাসে বিশেষভাবে জবান, চোখ, কানের হেফাজত করতে হবে। মিথ্যা কথা বলা, গিবত করা বা শোনা, অশ্লীল কথা বলা বা শোনা অথবা দেখা এবং অযথা গল্পগুজব না করে জিকিরের মাধ্যমে মনকে সতেজ রাখতে হবে। ইফতার অবশ্যই হালাল খাদ্য দিয়ে করতে হবে, অন্যথায় সারা দিনের রোজায় অনাহারে থাকা ছাড়া কিছুই অর্জিত হবে না।

হাদিসে পাকে এসেছে, ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য যে রোজা পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। তাই আমাদের রমজান মাসটিকে শুধু পানাহার আর কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের আত্মার পানাহার ও সাজসজ্জার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।

হাদিসে এসেছে, রমজান মাসের প্রতি দিবা-রাত্রে একজন জাহান্নামিকে মুক্তি দেওয়া হয় ও প্রত্যেক মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল করা হয়। ইফতারের পূর্ব মূর্হূতে দোয়া কবুল হয়, যদিও তখন আমরা ইফতারি গুছাতেই ব্যস্ত থাকি। অনেকেই অলসতার দরুন বা রাতে একটু দেরি করে খাওয়ার কারণে সেহরি খেতে ওঠেন না। অথচ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, যে সেহরি খায় তার ওপর আল্লাহপাক ও ফেরেশতারা রহমত নাজিল করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে বিশেষ পাঁচটি জিনিস দেওয়া হয়েছে-১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয়। ২. রোজাদারের জন্য সমস্ত প্রাণী এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। ৩. রোজাদারের জন্য জান্নাতকে প্রতিদিন সুসজ্জিত করা হয় এবং আল্লাহ বলেন, খুব শিগগির আমার নেক বান্দারা দুনিয়ার কষ্ট দূর করে জান্নাতে চলে আসবে। ৪. এ মাসে দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানদের আটকে রাখা হয়। ফলে অন্যসব মাসের তুলনায় এ মাসে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ৫. রমজানের শেষ রাতে প্রত্যেক রোজাদারের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। সাহাবারা এটা শুনে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), এটা কি শবেকদরের রাত? নবিজি (সা.) বললেন, ‘না বরং এটা মজদুরকে তার মজুরি দেওয়ার সময়।

লেখক : মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি                                        www.selimayadi.com