রাব্বি আহমেদ, বরগুনা প্রতিনিধিঃ পরিকল্পিত ও বসবাসযোগ্য নগরায়নে যুবদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে ডিওয়াইডিএফ, ঢাকা, ০৬.০৮.২০২১ “ইয়াং পিপল ইন কনভার্সেশন উইথ দ্যা ডিএনসিসি মেয়র- মেকিং ঢাকা অ্যান ইনক্লুসিভ মেগাসিটি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন অভিমত প্রকাশ করেন তরুণরা।

সিটি কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাঠামোতে এবং নগর উন্নয়নে যুব শক্তিকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ০৬ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, সকালে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ধ্রবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডিওয়াইডিএফ) যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভাটিতে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল দি ডেইলি স্টার।

আলোচনাটি সভাটি সঞ্চালনা করেন ধ্রবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব অমিয় প্রাপন চক্রবর্তী অর্ক। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, আধুনিক ঢাকা বিনির্মাণে তরুণদের অংশগ্রহণ জরুরী। তরুণদের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আশার আহব্বান জানান তিনি।

পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে জনগণের মানসিকতার উন্নয়ন ও সচেতনতার প্রতি জোর দেন তিনি। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কর্মসংস্থানের জন্য তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান জানান মেয়র।

এসময় তরুণদের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহŸ জানান মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। তরুণদের সিটি কর্পোরেশনের কাজের সাথে যুক্ত করতে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, তরুণদের কাজের পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তাদের কাজের জন্য বাজেটও বরাদ্দ করতে হবে।

সিটি কর্পোরেশনের কাজের প্রশংসার পাশাপাশি তরুণদের সেই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে মেয়রকে আহŸান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর ম্যানেজার নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, যুবদের অনুপ্রাণিত ও সহযোগিতা করতে তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বাজেট বরাদ্দ করার প্রয়োজন।

বস্তিবাসীদের জন্য আলাদা প্রকল্প ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ডাটা ব্যাংক তৈরি অত্যন্ত আবশ্যিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জাতীয় পরিচয়ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে, সেই সমস্যা সমাধানের উপর জোর দেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর ডেপুটি ম্যানেজার কোরবান আলী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-এর সহ-সম্পাদক মারুফ হোসেন।

এসময় তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যুব কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এবং তরুণদেও সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আলোচনা সভাটি সার্বিক তত্ত¡াবধান ও পরিচালনা করেন ধ্রæবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প সমন্বয়ক মেহেদী হাসান জ্যানেট।

আলোচনায় অংশ নিয়ে তরুণ প্রতিনিধিরা তাদের বিভিন্ন মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন এবং সেগুলো হলো-

১. সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুবদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সিটি কর্পোরেশন বাজেট প্রণয়নে যুবদের অংশগ্রহণ ও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।

২. ধূমপানের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করা এবং ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে রাস্তাগুলো নিয়মিত পানি দিয়ে পরিস্কারের ব্যবস্থা করা।

৩. সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোতে নারী, পুরুষ, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টারের প্রয়োজন রয়েছে।

৪. প্রতিটি ওয়ার্ডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে এবং এসব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেমন প্রতিবন্ধী, পথশিশু এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে বিশেষ উপায়ে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা।

৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বাস সার্ভিস চালু করা এবং গণপরিবহনে নারী, শিশু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা রাখা।

৬. ওয়াসার পানির মান ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবারহকারি প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা, যাতে করে একই রাস্তা বা এলাকায় বিভিন্ন সংস্থাকর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কাজ করার ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ ও অর্থের অপচয় রোধ করা যায়।

৭. নির্দিষ্ট দূরত্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবলিক টয়লেট এবং স্নান ও ধৌত করার স্থানের ব্যবস্থা করা এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা।

৮. নগরবাসীর বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গঠন এবং খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কগুলোর উন্নয়ন করা। দখল হওয়া খেলার মাঠ, খোলা জায়গা পুনরুদ্ধার এবং তার উন্নয়ন করা। পর্যাপ্ত ব্যায়ামাগার, গ্রন্থাগার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।