রাকিবুল হাসান ,মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরা মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। নদীতে জাল ফেলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা।বর্তমানে মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ।
সারাদিন- রাতে নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতে অনেক জেলে ফিরে আসছেন।এতে দিন দিন হতাশা হয়ে পরছেন দ্বীপ উপজেলার হাজার ও জেলে। ডাঙ্গায় আছে এনজিও ঋণের চাপ।এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মনপুরার জেলেদের ।মনপুরা মেঘনার রূপালী ইলিশের বেশ পরিচিতি রয়েছে।
এখানকার প্রধান পেশা জেলে উপজেলার বেশি সংখ্যাক লোক মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সরকারি হিসাব মতে ১০ হাজার ৫শত জেলে এই পেশার সাথে জড়িত থাকলেও বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ইলিশ মাছ ধরার সাথে জড়িত রয়েছেন। প্রতি বছরই একটা নির্দিষ্ট সময়ে এখানকার সকল স্তরের মানুষ মেঘনায় ইলিশের দিকে চেয়ে থাকে।ওতপ্রোতভাবে এই উপজেলা মানুষ ইলিশ সম্পদ এর উপর ভিত্তি করে সকল কাজ কর্ম পরিচালনা করে।
জেলেরা জানান, গত বছর মৌসুমের এ সময়ে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। কিন্তু এখন নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।সারাদিনে নদীতে জাল ফেলে কোন কোন ট্রালারে দুই থেকে তিন হালি(৪ টা মাছ) পেয়ে থাকে। মাছ না পাওয়ায় হাজার-হাজার জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
মাছ ঘাটগুলোতে ইলিশের আমদানি না হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলে ও আড়ৎদাররা।উপজেলা রামনেওয়াজ, হাজিরহাট, কোর্সডেম,জনতা বাজার,ভূইয়ার হাট,মাঝেরঘাট এলাকার মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। জেলে ও আড়ৎদাররা অলস সময় পার করছেন।
গতকাল জনতা বাজার মাছ ঘাটে ইলিশ শিকার শেষে ঘাটে আসেন মাকসুদ মাঝি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, নয় জনের একটি টিম নিয়ে নদীতে যান মাছ শিকারে। পাঁচ দিন টানা নদীতে জাল ফেলেছেন তারা।যেই মাছ পেয়েছে তাতে তাদের জ্বালানি তেল এর খরচও হবে না। পরিসংখ্যান হিসেবে তিনি বলেন এই পাঁচ দিনে ট্রলারের জ্বালানি, জেলেদের খাওয়া খরচসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০হাজার টাকা।
কিন্তু তারা যে মাছ পেয়েছেন তা ঘাটে এনে বিক্রি করেছেন ১০ হাজার টাকায়। এতে ট্রলার মালিক মাকসুদ মাঝি ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি। আর জেলেরা পাঁচ দিন নদীতে থেকেও কোনো আয় করতে পারেননি।সাপ্তাহিক তাদের যে এনজিও কিস্তি তাও পরিশোধ করতে পারবে না।এতে কিস্তি নেওয়া লোকজন বাসায় এসে খুব বকাঝকা করেন।
জেলেরা বলেন, লোকসান হলেও মাছ পাবার আশায় পুনরায় নদীতে জাল ফেলবো। তাই জালসহ সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি। নদীতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। প্রতিদিন মাছ পাবার আশায় নদীতে জাল ফেলি। এ মুহূর্তে তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো ভরা মৌসুমে লোকসান পুষিয়ে আসবে।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের তালতলা ঘাটের বসির মাঝির ট্রলারে ভাগি(ট্রলার মালিক এর মাঝি) ইলিয়াস বলেন, দলবেঁধে নদীতে মাছ শিকার করি। যে মাছ পাচ্ছি, তা বিক্রি করে ট্রলার মালিকের খরচও উঠাতে কষ্ট হচ্ছে। নদীতে মাছ ধরেও তেমন আয় রোজকার নেই। সামনে কোরবানির
ঈদ।কোরবানি তো দিতে পারবো না ছেলে মেয়েদের জন্য নতুন পোশাক ও ক্রয় করতে পারবো না।
পরিবার পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পঁচা কোড়ালিয়া মাছ ঘাটের আড়ৎদার মোহরলাল চক্রবর্তী বলেন,মাছের প্রজনন মৌসুমে মেঘনা
নদীতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জলে মেঘনা নদীতে জাটকা শিকার করার কারণে ভরা মৌসুমে ইলিশের অকাল দেখা দিয়েছে। প্রজনন মৌসুমে জাটকা নিধন করায় ইলিশ মৌসুমে জেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
মাঝেরঘাট মৎস্য আড়ৎদার সাত্তার ব্যাপারী বলেব, নদীতে ইলিশ মাছ থাকলে ঘাট মুখরিত থাকতো। কিন্তু মাছ না থাকায় ঘাটে জেলে এবং ক্রেতাদের ভিড় একেবারে নেই।ইলিশ মাছ বৃদ্ধি ফেলে বিভিন্ন দেশ থেকে জেলেরা এখানে এসে মাছ শিকার করেন। এতে সব সময় মাছ ঘাট গুলো লোকারন্য থাকে।আর এখন যে মাছ পাওয়া যায়, তা চওড়া দামে বিক্রি করতে হয়।
এদিকে নদীতে মাছের অকাল থাকা বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।ইলিশ মাছের দাম নিন্ম আয়ের মানুষের হাতের নাগালে থাকায় ক্রয় করতে পারছেন না তারা। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান,ইলিশ মাছের চলাচলের জন্য গভীর পানির প্রয়োজন। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্রের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের ফলে মেঘনা নদীর গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মেঘনা নদীতে অনেক ডুব চরের এর ফলে নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে।তবে প্রবলভাবে বৃষ্টি শুরু হলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে মাছ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।