শরীর দুর্বল হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্বলতার প্রধান কারণগুলো হলো-আমিষের অভাব, রক্ত স্বল্পতা, ডায়াবেটিস, ক্রনিক লিভার রোগ, ক্রনিক পাতলা পায়খানা, ক্রমিক কিডনি রোগ, ক্রমিক হার্ট ফেইলিউর, পানিশূন্যতা, থাইরয়েড রোগ, প্রকাথ ক্যান্সার ইত্যাদি। এই দুর্বলতার কারণ গুলোকে অবহেলা করলে দেহে একসময় মারাত্নক আকারের রোগ ধারণ করে।তাই এই দুর্বলতা কাটাতে একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন।

আজকের এই আর্টিক্যাল যা যা আলোচনা করবো। তা হলঃ

 

দুর্বলতা কি?

দুর্বলতা অনুভব করার কারণ?

শরীর দুর্বল হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?

শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর ঘরোয়া উপায়।

শরীর দুর্বল হলে কি করা উচিত?

শরীর দুর্বল হলে কি ভিটামিন খেতে হবে?

শরীর দুর্বলতার ঔষধ।

শরীর দুর্বল হলে কি স্যালাইন খাওয়া উচিত?

শরীর দুর্বল হলে কি  খাওয়া প্রয়োজন?

 

দুর্বলতা কি?

দেহের এক বা একাধিক মাংসপেশীর কার্মযক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে দুর্বলতা বলে।কিছু মানুষ আছে যারা শুধুমাত্র দুর্বল লাগার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারেন, কিন্তু শারীরিকভাবে কোনো শক্তিক্ষয় উপলব্ধি করতে পারে না। আবার কিছু মানুষ আছে যারা কার্যক্ষমতা হ্রাসের বিষয়টি শুধুমাত্র শারীরিক পরীক্ষার সময় উপলব্ধি করতে পারেন, একে “অবজেক্টিভ উইকনেস” বলা হয়। শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ার ফলে মানুষ সবকিছুতেই অনিহা বোধ করে।

দুর্বলতা অনুভব করার কারণঃ

মানুষ সবসময় সুস্থ থাকে না। কখনো কখনো শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দেহের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে এই দুর্বলতা অনুভব হয়। বিভিন্ন কারণেই আমরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। এই দুর্বলতাকে অবহেলা করা যাবে না। কেননা এটি বড় কোনো রোগের উপসর্গও হতে পারে। শরীর দুর্বল হওয়ার কারণগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. রক্তস্বল্পতার কারণে দুর্বলতা অনুভবঃ

দুর্বলতা অনুভব করার অন্যতম কারণ হলো রক্ত স্বল্পতা। রক্তস্বল্পতা বলতে রক্তে হিমোব্লবিন কমে যাওয়াকে বুঝায়। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। কিন্তু সঠিকভাবে এটা ধরতে পারেন না। রক্তস্বল্পতা রোগের কারণগুলো হলো– ক্রিমি, অর্শ্ব থেকে রক্তপাত, মহিলাদের অতিরিক্ত রক্তস্রাব, ক্রনিক রোগ, অস্থিমজ্জা রোগ, ভিটামিনের অভাব এবং জন্ম থেকে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকা ইত্যাদি। যদি সবসময়েই বেশ দুর্বলতা অনুভব হয় তাহলে এটি রক্তস্বল্পতা রোগের লক্ষণ। তাই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন ও প্রয়োজনে চিকিৎসা করান এবং খাবারের প্রতি মনোযোগী হন।

২. ডায়বেটিসের কারণে দুর্বলতা অনুভবঃ

দুর্বলতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ফলে দুর্বলতা অনুভব হয়। এটি ডায়বেটিসের লক্ষণ। কেননা রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে স্বাভাবিক দেহের কর্মকাণ্ডে সমস্যা তৈরি হয়, যার ফলে রোগীরা অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠেন এবং দুর্বলতা অনুভব করে থাকেন। তাই পরিমাণ মত শর্করা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক থাকবে এবং প্রসাবের সঙ্গে সুগার বের হবে না। ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট ও কিডনি জটিলতা দেখা দেয়। তাই নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও ব্যায়াম করুন।

৩. আমিষের অভাবঃ

আমিষের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরে আমিষের অভাব হলে হাত ও মুখ ফুলে যায়, পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়, পেটে পানি হয়, ধীরে ধীরে দুর্বলতা বেড়ে যায় ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে, ছানা, পনির, মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম, বিভিন্ন রকম সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি আমিষ জাতীয় খাবার খান।

৪. বিষণ্ণতায় ভোগার ফলেঃ

অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়। এই বিষণ্ণতার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। মানসিক চাপের কারণে আমাদের মস্তিষ্কের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। আর যখন আমরা বিষণ্ণ হয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে থাকি। তখন মস্তিষ্কের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। ফলে মস্তিষ্ক অবসাদগ্রস্থ হয় যায় এবং আমাদের শরীরও দুর্বলতা অনুভব করে। তাই শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেয়া বন্ধ করুন ও বিষণ্ণ থাকবেন না।

৫. প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়াঃ

দুর্বলতা অনুভব করলে খাবারের প্রতি মনোযোগী হন। আপনার দেহের জন্য যে সুষম খাবার গুলো প্রয়োজন তা যদি আপনার খাবারের তালিকায় না থাকে তাহলে শরীর আপনাআপনিই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আপনার শরীরকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখান জন্য সুষম খাবার খান এবং প্রতি ৩/৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সামান্য পরিমাণ হলেও কিছু খাবার খান।

৬. শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণেঃ

শারীরিক পরিশ্রম আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি কাজের চাপ ও মানসিক চাপে যেমন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি, তেমনই আলসেমিতেও আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। ব্যায়াম শরীরের ক্যালরি খরচ করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি যতো বেশি নিজেকে অলস বা কর্মবিমুখ করবেন ততো আপনি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিছুটা পরিশ্রম করা এবং সামান্য মানসিক চাপ নেয়া আপনার দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করবে। এতে করে আপনি সুস্থ ও সবল থাকবেন।

৭. পানিশূন্যতার কারণেঃ

আমাদের দেহের মূল অংশ হলো পানি। আর আমাদের দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়লে আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। কারণ পানিশূন্যতা দেহের রক্তের পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেয়। পানিশূন্যতার ফলে মাথা ব্যাথা, অবসাদ ও দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই সকলের নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ। এরফলে দেহ হাইড্রাইট থাকবে এবং শারীরিক দুর্বলতাও কেটে যাবে একেবারে।

৮. ক্রনিক ডায়রিয়ার কারণেঃ

আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবার খাই, এই খাবারের মূল জিনিসগুলো– আমিষ, শর্করা, পানি, ভিটামিন, বিভিন্ন ধরনের লবণ, লোহা, দস্তা ইত্যাদি উপাদানগুলো ক্ষুদ্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শুষে নেয়। এই শুষে নেয়ার কোন পর্যায়ে যদি ক্ষুদ্রান্ত অক্ষম বা দুর্বল হয়ে যায় তখন বার বার পাতলা পায়খানা হয় এবং খাদ্যের মূল উপাদানগুলো মলের সঙ্গে বের হয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই দুর্বলতা কাটানোর এই সময় বার বার স্যালাইন খেতে হবে।

৯. ক্রনিক কিডনি রোগঃ

কিডনি আমাদের দেহের ছাঁকনির কাজ করে। কিডনি আমাদের দেহ থেকে প্রসাবের মাধ্যমে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়।যদি কিডনির ক্রনিক রোগ হয়, তবে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থ প্রসাবের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বের হতে পারে না। তখন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।

১০. ক্রনিক হার্ট ফেইলিউরঃ

হৃৎযন্ত্র আমাদের দেহের রক্ত সঞ্চালন করে।হৃদ্‌যন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন করার কার্যক্ষমতা কমে গেলে ‘হার্ট ফেলিউর’হয়। উচ্চরক্ত চাপ এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের ভাল্ব রোগ চিকিৎসা না করলে এক পর্যায়ে হার্টের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পাম্প করার শক্তি অনেকাংশে হারিয়ে ফেলে। প্রথম দিকে এই অবস্থায় অল্প পরিশ্রমে রোগীরা হাঁপিয়ে পড়বে। পরবর্তী পর্যায়ে লিভার ফুলে যাওয়া, পেটে পানি, পায়ে পানি এবং দুর্বলতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আর এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শরীর দুর্বল হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?

অনেক সময় আমরা স্বাভাবিকভাবেই অন্য মানুষদের মতো জীবনযাপন করি। কিন্তু আমাদের অজান্তেই ভেতরে ভেতরে দুর্বলতা প্রভাব বিস্তার করে। কি লক্ষণগুলো দেখে বুঝবেন আপনি শারীরিক ভাবে দুর্বল। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করাঃ

বেশিরভাগ সময়ই ক্লান্তি ও অবসন্নতা অনুভব হয়। পরিশ্রমের পর ক্লান্তি লাগাটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অতি সামান্য পরিশ্রমে কিংবা বিনা কারণে যদি ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি শারীরিক ভাবে দুর্বল। এই ক্লান্তি বোধ হওয়ার বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন-ঘুম, স্ট্রেস, রক্তাল্পতা বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সিন্ড্রোমের অভাব। তাই ক্লান্ত বোধ হওয়ার কারণ গুলো খুজে বের করুন এবং দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করুন।

২. বিশ্রামের সময় হৃৎস্পন্দনঃ

শান্ত হয়ে বিশ্রামের সময়ে হৃৎস্পন্দন কমে যাবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যদি বিশ্রামের সময়েও হৃৎস্পন্দন ৬০ থেকে ১০০ না থাকে তাহলে এটা একেবারে অস্বাভাবিক। এ অবস্থায় শরীরের শুধু দুর্বলতা নয়, অন্য কোনো সমস্যাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া এবং এর কারণ নির্ণয় করে তা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

৩. হৃৎস্পন্দন কমার হারঃ

শারীরিক অনুশীলনের সময় আমাদের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। আর  এটি বেড়ে গিয়ে মিনিটে ১৪০ থেকে ১৯০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে শারীরিক অনুশীলন বন্ধ করলেই তা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মিনিটে ২০ বিট করে কমতে থাকে। কিন্তু আপনি যদি দুর্বল হন তাহলে হৃৎস্পন্দন কমতে এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।

৪. কাজের প্রতি মন বসে নাঃ

যদি আপনার শরীর দুর্বল থাকে তবে কোনো কাজের প্রতি মন বসবে না। সবকিছুতেই অনিহা প্রকাশ করবে। আর তাই শরীর দুর্বল হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করুন এবং দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করুন।

৫. সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাবঃ

শরীর দুর্বল থাকলে সারাক্ষণেই ঘুম ঘুম ভাব হয়। কোনো কাজের প্রতি মন বসে না। আলসেমি লাগে, শুধু ‍ঘুমোনোর ইচ্ছা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত কিংবা এর কারণ নির্ণয় করে তা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া।

এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ হলো-

অসাড়ভাব

বিভ্রান্তিবোধ

মাথা ঘোরা

তন্দ্রালুভাব

খিদে কমে যাওয়া

শ্বাস নিতে সমস্যা

মাংসপেশীতে ব্যাথা অনুভব করা

 হাঁটতে সমস্যা

প্রচন্ড মাথাযন্ত্রণা।

শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর উপায়ঃ

১. ভোরের সূর্যে্যর আলো গ্রহণ করুনঃ

ভোর বেলা ৮-৯ টায় সূর্যের আলোর মধ্যে যাওয়ার অভ্যাস করুন। এ সময় সূর্যে্যর আলো দেহে ভিটামিন ডি পৌঁছায় যা আমাদের দেহের হাড়ের গঠন সুগঠিত করে। এবং আমাদের শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। মাথা ঘোরানো এবং শরীরে শক্তি না পাওয়ার সমস্যাও সমাধান করে। তাই সকালে সূর্য্যের আলো গ্রহণের চেষ্টা করুন, এতে অনেক উপকার পাবেন।

২. চা/কফি পান করা কমিয়ে আনুনঃ

আমাদের অনেকেরি চা/কফি পান করার অভ্যাস রয়েছে। অথচ এই চা/কফির ক্যাফেইন আমাদেরকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে তোলে। চা/কফি পান করলে তাৎক্ষণিকভাবে দেহে চাঙা ভাব আসে। কিন্তু এটি আমাদের দেহ পানিশূন্য করে ফেলে, আর এই কারণে আমাদের দেহে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায় ও আমরা দুর্বলতা অনুভব করি। তাই চা/কফি পানের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। এর ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।

৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুনঃ

আমাদের দেহের মূল অংশই হচ্ছে পানি। আর আমাদের দেহে পানির ঘাটতি হলে আমরা শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাই। তাই আমাদের উচিৎ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। এরফলে দেহ হাইড্রাইট থাকবে শারীরিক দুর্বলতার সমস্যাও কেটে যাবে একেবারে।

৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোনঃ

ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি ঘুমও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের পরিমাণ যদি কম হয় তাহলে আমরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। কারণ ঘুমের মাধ্যমে দেহের ও মস্তিষ্কের কোষ নতুন করে শক্তি অর্জন করে। আর যখন ঘুম কম হয় তখন মাথা ঘোরানো এবং দুর্বলতা অনুভব করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে পারেন।

৫. এনার্জি সমৃদ্ধ কিছু খাবার হাতের কাছে রাখুনঃ

শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু খাবার খান যা দেহে শক্তি ফিরিয়ে দেবে। যেমন- বাদাম, কলা, কমলা এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার। এরফলে শারীরিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে তুলা সম্ভব।

৬. স্যুপ পান করুনঃ

টমেটোর স্যুপ পান করুন। এতে করে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা জাগবে। তাছাড়া টমেটোর স্যুপ পান করার ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে দুর্বলতাও কেটে যায়।

৭. দুধঃ

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে ভাল খাদ্য হল দুধ। নানা ধরণের স্বাস্থ্যকর ভিটামিনে ভরপুর দুধ আমাদের দেহের দুর্বলতা খুব সহজেই দূর করে দেয়। এবং দুধের ক্যালসিয়াম উপদান আমাদের দেহের হাড়গুলোকে মজবুত করে।  যখনই আপনার শরীর খারাপ লাগবে তখনি ১ গ্লাস দুধের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান। অথবা দুধের মধ্যে ২/৩ ডুমুর ফল দিয়ে তা সেদ্ধ করে সেই দুধ খেতে পারেন। আর এই ডুমুর মিশ্রিত দুধ দেহের দুর্বলতা দূর করে দিবে।

৮. খেজুরঃ

খেজুর হলো শক্তিবর্ধক। খেজুরের সাথে মাখন মিশিয়ে খেলে প্রচুর শক্তি পাবেন। এতে দুর্বলতাও খেটে যাবে। নতুন রক্তকোষ তৈরির জন্য প্রত্যহ ৮-১০ টি খেজুর খাবেন।

শরীর দুর্বল হলে কি করা উচিত?

মানব দেহ রক্ত মাংসে গড়া। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি শরীর দুর্বল অনুভব করেন তবে প্রথমে এই দুর্বল লাগার সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন। যদি খুঁজে বের করতে অক্ষম হন তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্য হন। আর যদি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়ে যান তবে যে কারনে আপনার শরীর দুর্বল হচ্ছে, সে মোতাবেক আপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন, এরফলে এই দুর্বলতা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন ।

শরীর দুর্বল হলে কি ভিটামিন খেতে হবে?

আমরা দুর্বলতা অনুভব করলেই ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করি ভিটামিন পেসক্রিইব করে দিতে। দুর্বলতা কাটানোর জন্য ভিটামিন চিকিৎসা নয়। অকারণে দুর্বল লাগার পিছনে কখনো সুনিশ্চিত কোনো কারণও থাকতে পারে। তাই সাবধান। ভিটামিন বড়ি কখনোই একটি সুষম খাদ্য তালিকার বিকল্প হতে পারে না। কারণ একটি কি দুটি বড়িতে দৈনিক ভিটামিন চাহিদার পুরোপুরি পূরণ হয় না। আবার না জেনে-বুঝে অতিরিক্ত ভিটামিন বড়ি খেলে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যেমন: অতিরিক্ত ভিটামিন সি বা ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে, আবার অতিরিক্ত ভিটামিন বি ৬ সেবনে¯জরায়ুর ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ্য থাকতে চাইলে সুষম খাবার খান এবং প্রতিনিয়ত সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। যদি সুষম খাবার, পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে ভিটামিন বা এ জাতীয় পুষ্টি উপাদান ওষুধ হিসেবে খাওয়ার কোনো প্রয়োজনই পড়বে না ।

শরীর দুর্বলতার ঔষধঃ

শরীর দুর্বল লাগাটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দুর্বল অনুভব হলেই ওষুধ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি খেতেই হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি তিনি মনে করেন আপনার ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন আছে। তাহলে তিনি দুর্বলতার জন্য ঔষধ লিখে দিবেন । সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ঔষধ না খাওয়ার। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলোন।

শরীর দুর্বল হলে কি স্যালাইন খাওয়া উচিত?

আমরা অনেকেই মনে করি শরীর দুর্বল লাগলে বা ক্লান্তি আসলে স্যালাইন নিলে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু দুর্বলতা কাটানোর চিকিৎসা স্যালাইন নয়। ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ হলে প্রথমে তার কারণ নির্ণয় করা জরুরি। দুর্বলতা কমানোর জন্য যদি না বুঝে স্যালাইন খাওয়া বা শিরাপথে স্যালাইন নেওয়া হয়, তবে এর কারণে মারাত্নক জটিলতাও হতে পারে। যেমন- কিডনির সমস্যায় রক্তশূন্যতা হয়, হার্টের সমস্যা হয়, শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এখন কিডনি বা হার্টের রোগীকে স্যালাইন দেওয়ার ফলে শরীরে পানি জমে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাই দুর্বল লাগলে স্যালাইন খাওয়াটা জরুরি নয়, জরুরি হলো এর কারণ অনুসন্ধান করা। এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

শরীর দুর্বল হলে কি  খাওয়া প্রয়োজন?

মানুষের খ্যাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে শারীরিক সুস্থতা এবং সবলতার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সঠিক খাবারের কোনো বিকল্প নেই । তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিদিনের খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয়। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ, ডিম, তাজা শাক-সবজি, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখলে ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে শারীরিক দুর্বলতা দুর হয়ে যায়। তাই  দুর্বলতা কাটাতে কিছু খাবার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –

 ১। ডিমঃ শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে ডিম সবচেয়ে ভাল খাবার। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এ, আয়রন,  ফলিক এসিড, রিবফ্লেভিন এবং পেন্টথেনিক এসিড। তাই দেহের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খান।

 ২। দুধঃ শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সবচেয়ে ভাল খাবার হল দুধ। দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রাণিজ ফ্যাট যা শারীরিক শক্তির উন্নতি ঘটায় এবং দুধের ক্যালসিয়াম উপাদান যা আমাদের দেহের হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। তাই যখনই শরীর দুর্বল হয়ে যাবে তখনই ১ গ্লাস দুধের সাঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান।

৩। মধুঃ মধু শরীর ও মনের দুর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে লৌহ, সিলিকন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন। তাই শারীরিক শক্তি বাড়াতে প্রত্যেক সপ্তাহে ৩-৪ দিন এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করুন। এর ফলে শারীরিক দুর্বলতা কেটে যাবে।

৪। কলাঃ কলা হলো ডোপামিন ও সেরোটোনিন সমৃদ্ধ ফল। কলাতে আছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং পটাশিয়াম। ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে । আর কলাতে আছে ব্রোমেলিয়ান । যা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। এরফলে দুর্বল হবে না ।

 ৫। ভিটামিন সিঃ শরীরের দুর্বলতা দূর করতে ভিটামিন-সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-সির অভাব পূরণ করতে বেশি করে টকজাতীয় ফল খেতে হবে। যেমন- কমলা, লেবু, আঙুর ইত্যাদি ফল দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী।

 ৬। প্রোটিনঃ শরীরের দুর্বলতা কাটাতে প্রোটিন যুক্ত খাবার খুবই কার‌্যকরী। প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। ডিম খাওয়ার ফলে দেহের কোষগুলো সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এবং এতে লুটেইন ও জিক্সানথিন থাকে যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডাল ও মটরজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

৭। সেলেনিয়ামঃ সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট। এগুলো থাকার কারণে ক্লান্তিভাব, নিদ্রাহীনতা ও দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি এ ধরণের খাবারগুলো দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগ থেকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো-মটর, ডিম, বাদাম, মাশরুম, মসুর ডাল ইত্যাদি।

৮। ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চটলেট হচ্ছে এমন এক ধরনের চকলেট যা দুধ ও মাখন ছাড়া cocoa solids এবং cocoa butter থেকে তৈরি করা হয়। এতে রয়েছে ফেনিলেথিলামিন (PEA) ও সেরোটোনিন। এগুলো দেহে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

৯। রসুনঃ আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রসুন।  এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১),নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২),  প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। একে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা হয়। তাই শরীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত রসুন খেতে পারেন।

 ১০। আদাঃ আদাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ভোরে পানির সাথে আদার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে অনেক উপকার পাবেন।

এই খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় থাকলে আপনার শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে পারবেন। তবে এগুলো খাওয়ার সাথে সাথে লক্ষ রাখতে হবে যেন ওজন বৃদ্ধি না পায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ করুন।

শেষকথাঃ

আমাদের দেহ রক্ত মাংসে গড়া। যে কোনো সময় যে কোনো কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত বোধ হয় তবে একে অবহেলা না করে, দুর্বল লাগার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। যদি এই দুর্বলতা কাটাতে সক্ষম হন তাহলে সে মোতাবেক আপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন। আর যদি দুর্বলতা বুঝতে না পারেন, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্যালাইন বা কোনো ভিটামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করনবেন না।