মুহাম্মদ শফিকুর
দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। বাড়তি খাবারের চাহিদা কমায়। প্্রতি ১০০ গ্্রাম পালংশাকে ৯০.০৮ গ্্রাম পানি, ১.৮ গ্্রাম খনিজ লবণ,০.৬ গ্্রাম আঁশ,৩.৩ গ্্রাম আমিষ,২.১ গ্্রাম শর্করা, ৭৯ মিলিগ্্রাম ক্যালসিয়াম,৮.৭ মিলিগ্্রাম লোহা,৭৯৪০ মাইক্রোগ্্রাম ভিটামিন এ ও ১৫ মিলিগ্্রাম ভিটামিন সি আছে। এক কাপ পালংশাক খাদ্য আঁশের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। প্্রতি ১০০ গ্্রাম পালং শাকে মাত্র ২৩ ক্যালরি। পালংশাকে রয়েছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড,যা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ প্্রতিরোধে কাজ করে। লুটেনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল আছে; যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
পালংশাকের বিটা ক্যারোটিন চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়। ব্রণ,বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের সুরক্ষায় পালংশাকের ভূমিকা অনন্য। নাস্তায় নুডুলসের পরিবর্তে এক বাটি পালংশাক খাওয়া যেতে পারে। পালংশাকের সুপ ওজন কমাতে সহায়ক। কোনো চর্বি নেই। পালংশাকে প্্রচুর পানি থাকে। রক্তের গুণগুণ বাড়াতে পারে পালংশাক। কারণ পালংশাকে আছে আয়রণ। হালকা জালে পালংশাক রান্না করতে হবে। তাহলে পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকবে।
আমাদের দেশে শীতকালে পালংশাকের চাষ হয়। জমি,জমির আইলে বা অন্য ফসলের মধ্যে পালং শাকের চাষ করেন কৃষকরা। তবে ছাদে বা বেলকনিতেও পালংশাক হয়। বীজ বপনের এক মাসের মধ্যে শাক খাবার উপযোগী হয়। রূপচর্চায় পালংশাকের জুড়ি নেই। ব্রণের সমস্যা দূর করে পালংশাক।
এজন্য পালংশাকের মাস্ক ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। পালংশাক,গাজর,শসা ব্লেন্ড করুন। এই জুস পুষ্টিগুণে অনন্য। কয়েক দিন খেলে এর ফলাফল হাতেনাতে টের পাবেন। ত্বকের সমস্যা দূর হবে। বয়সের ছাপ লুকাতে পালংশাক কাজ করে। এতে আছে ফ্্ির র্যাাডিকেলস, যা ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। মুখের ত্বকের যত্নে কত কিছুই না আমরা করি। এটা সেটা ব্যবহার করি। অথচ পালংশাক,মধু,লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগালে অনেক উপকার হয়। এ মিশ্্রণ ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ত্বক সতেজ হবে। মরা কোষ পড়ে যাবে। ত্বক হবে মসৃণ,কোমল, উজ্জ্বল।
চুল পড়ে, চুল সাদা হয়ে যায়, চুলে মোটেই কোমলতা নেই- নিয়মিত পালংশাক খেতে পারেন। চুলের সমস্যা কেটে যাবে। কারণ পালংশাকে আছে ভিটামিন বি,সি,ই,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড। এর সবই চুলের জন্য খুব দরকারি। রক্তে লোহিত কণিকা কমে গেছে যাদের তারা পালংশাক খেলে উপকার পাবেন। পালংশাকের ভিটামিন,নিউট্্িরয়েন্টস লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়।
হাইপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে পালংশাক ভালো কাজ করে বলে জানা যায়। পালংশাকের ভিটামিন, মিনারেলস নারীদের মাসিকজনিত সমস্যা দূর করে থাকে। বিভিন্নভাবে রান্না করে পালংশাক খাওয়া যায়। চিকেন পালংশাক,পালং পনির, সবজি ও বড়ি দিয়ে পালংশাকের ঘন্টো, শুধু পালংশাকের ঘন্টো, পালং প্্রদীব, পালংশাকের মিষ্টি, পালং নৌবিহার, পালং কোপ্তা, পালং মুসুর ডালকারী,পালং থেপলা অন্যতম মুখরোচক খাবার।
পালংশাকের আলফা লিপোয়িক অ্যাসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বাড়ায়। তাই ডায়বেটিস রোগীরা পালংশাক খেলে উপকার পাবেন। তবে অতিরিক্ত পালংশাক খাওয়া ভালো নয়। পালংশাক বেশি খেলে পেট ফাপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পালংশাক খাবার সময় অন্য কোনো খাবারে উচ্চমাত্রায় ফাইবার নেয়া যাবে না। এতে ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা তৈরি হতে পারে। পালংশাকে উচ্চমাত্রায় অক্্রালিক অ্যাসিড থাকে। অতিরিক্ত পালংশাক খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। পালংশাক বেশি গ্্রহণ করলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গিটে বাত থাকলে ব্যথা বাড়বে। সহজলভ্য এবং দামে কম। পালংশাক খেয়ে আমরা পুষ্টির চাহিদা সহজেই মেটাতে পারি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।