ঈদের টানা ছুটিতেও এবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়েনি। ঈদ উল আজহার দ্বিতীয় দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি বলে দাবি করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সোমবার (১১ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার।
আবুল কাসেম বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটনের ইতিহাসে এমন খরা আগে কখনো হয়নি। ঈদে পর্যটক আগমনে এমন নিম্নগামীতা সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে। সদ্য পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় এবার ঈদের ছুটিতে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ পদ্মা সেতু দেখতে ভিড় করছেন। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব কমে আসায় সেখানেও পর্যটকরা ছুটছেন। তবে এটা সাময়িক।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনার প্রকোপ ও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কক্সবাজারে পর্যটক আশানুরূপ হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসগুলোর ৮০ শতাংশ রুম ফাঁকা। তবে ৫ ও ৩ তারকা মানের হোটেল গুলোতে শতভাগ রুম বুকিং রয়েছে।’
আবুল কাসেম বলেন, ‘আমরা এই দুরবস্থার সমাধান বের করবো খুব শিগগিরই। আমাদের মধ্যে কী ঘাটতি রয়েছে এবং কক্সবাজারে পর্যটক কীভাবে বাড়ানো যায় সেই পন্থা বের করবো।’
এদিকে, সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট এবং কলাতলী পয়েন্টে হাতে গোনা কিছু দর্শনার্থী দেখতে পাওয়া গেছে। যারা পরিবার পরিজন নিয়ে সৈকতে বেড়াতে এসেছেন।এসব পর্যটকদের ৮৫ শতাংশই স্থানীয় বাসিন্দা।
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থেকে আসা পর্যটক রাইসুল মিঞা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে আসার পরিকল্পনা ছিল অনেক আগে থেকে। এছাড়া খবরে জানলাম কক্সবাজারে পর্যটক কম। সেই সুবাধে ঝামেলা ছাড়া সুন্দর সময় কাটাতে পারবো ভেবে কক্সবাজার এলাম। বুধবার সন্ধ্যায় ফিরবো। এর আগে ঘুরে ফিরে দেখবো অনেক কিছু। আমাদের মতো আরো কিছু পর্যটক আছেন এখানে। বেশ ভালো লাগছে।’
নরসিংদীর মনোহরদী থেকে সপরিবারে আসা পর্যটক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আজ সকালে কক্সবাজারে পৌঁছেছি। হোটেলের রুম বুকিং দিয়েছি এক সপ্তাহ আগে। সৈকতে এসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সমুদ্রে নামলাম। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার সৈকতের পরিবেশ একটু ব্যতিক্রম লাগছে। আগের বার যখন এসেছিলাম তখন পর্যটন মৌসুম ছিল। সৈকতের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করছিলাম। এবার পর্যটক কম আগের মতো ভালো লাগছে না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাস থেকে কলাতলী নামা মাত্র কিছু দালাল আমাদের ভালো হোটেলে নিয়ে যাবে বলে ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিল। পরে তাদের বুঝালাম আমাদের রুম আগে থেকে বুকিং দেওয়া ছিল। ওই মুহূর্তটা খুবই বিব্রত লাগছিল।’
সুগন্ধা পয়েন্টের বার্মিজ স্টোরের মালিক রোবায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ঈদে আমাদের যে টার্গেট ছিল তা পূরণ হয়নি। ঈদের দিন বিকেল থেকে দোকান খুলেছি। সেদিন একদম বেচা-বিক্রি হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। এখন কি দোকান বন্ধ করে ফেলবো নাকি খোলা রাখবো সেই চিন্তায় আছি।’
সৈকতে ভ্রাম্যমাণ পান, ঝালমুড়ি, পানি ও চিপসের কয়েকজ বিক্রেতা জানান, তাদের অবস্থাও খারাপ যাচ্ছে। পর্যটক কম থাকায় বিক্রি কম। সারাদিন সৈকত ঘুরে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে না পারার কথা জানান তারা।
কক্সবাজারে পর্যটক আসুক বা কম আসুক; তারপরও ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি পর্যটন স্পটে কঠোর নজরদারি রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, অন্য ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি দরকার এবারও সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটক আগমণ বাড়বে সে চিন্তা মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।