বিয়েটা হয়েছে মাস চারেক আগে। তবে এতটা হৈ চৈ পড়েনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে বর পোস্ট দিতেই রব উঠে যায়। রীতিমতো প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (সাব ইন্সপেক্টর) বর ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কনে।
বর সাধারণত অবস্থানগত দিক থেকে একটু বড় বংশ, পদের কিংবা বেশি পয়সাওয়লা হয়ে থাকে- এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে বিয়ে করেছেন উজ্জল ঘোষ ও ঊর্মি দেব। উজ্জল ঘোষ জিতু কুমিল্লা জেলায় হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ঊর্মি দেব রেলওয়ের পুলিশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত আছেন।
পেশাগত প্রশিক্ষণে গিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রথম পরিচয়। তবে মূলত ফেসবুকের মাধ্যমেই তাদের কাছে আসা। হাই-হ্যালে থেকে শুভ পরিণয়। পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসা গত বছরের ৩০ নভেম্বর। এর আগেই দু’জনের চাকরি।
গত ১৭ মার্চ ঊর্মি দেবের পাশে দাঁড়িয়ে রেলওয়ে থানার আখাউড়া সার্কেলের কার্যালয়ে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে উজ্জল ঘোষ লিখেন, ‘পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে, তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা ওপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমার ও আমার সহধর্মিণী অবস্থানের এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন’।
তিনি লিখেন, ‘যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না। আমার তখন খুব হাসি পায়। মায়ের জাত নিয়ে কী আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে’।
মূলত ওই পোস্ট দেয়ার পর থেকেই দু’জনের বিয়ের বিষয়টি আলোচনায় আসে। অনেকে পোস্টটি শেয়ার করে প্রশংসা করেন। পোস্টটি এক প্রকার ভাইরাল হওয়ার পর গণমাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই নতুন ওই দম্পত্তির সঙ্গে কথা বলে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন।
একই বাহিনীতে নিজের থেকে ছোট পদের কর্মকর্তাকে বিয়ে করে আফসোস নেই, বরং উজ্জলের মতো ভালো মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে গর্ববোধ করেন এএসপি ঊর্মি। অন্যদিকে ঊর্মির মহৎ গুণের কথা বলে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন উজ্জলও।
উজ্জল ঘোষের বাড়ি ফরিদপুর জেলা সদরে। উজ্জলের বাবা একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে উজ্জল দ্বিতীয়। ২০১৮ সালে বিয়ে হওয়ার পর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। ঊর্মি দেব চট্টগ্রাম মহানগরের চাঁন্দগা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তিনি ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সদস্য। তার বাবা পেশায় আইনজীবী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ঊর্মিই বড়। তাঁর ছোট ভাই নয়ন দেব ৩৭ তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সদস্য।
ঊর্মি দেব এ প্রসঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে বলেন, ‘২০১৯ সালে পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণে গিয়ে দু’জনের মধ্যে পরিচয়। এরপর নিজেদের মধ্যে ভালোলাগার বিষয়টি আমরা দুইজনই নিজ নিজ পরিবারকে জানাই। পরে পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়।’
এএসপি ঊর্মি আরো বলেন, ‘ব্যক্তি জীবনের একটা অংশ হচ্ছে চাকরি। সেজন্য আগে ব্যক্তিজীবনকেই প্রাধান্য দিতে হবে। বড় চাকরির চেয়ে বড় কথা হলো ভালো মানুষ পাওয়া। দিন শেষে তো আমাদেরকে সংসারেই ফিরতে হয়। একজন ভালো মানুষকে বিয়ে করতে পেরে আমি গর্বিত।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।