এবারের ঈদুল আযহা উপলক্ষে “পাহাড় কন্যা” বান্দরবানের পর্যটন স্পট গুলো সেজেছে নবরূপে,বর্ষার ঝির ঝির বৃষ্টিতে পাহাড়ের প্রকৃতি সেজেছে ভিন্ন রূপে। যদিও ঈদের প্রথম দিন জেলায় পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন হতে দূরদুরান্ত হতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়েছে পাহাড় কন্যা বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে।
চোখ জুড়ানো সবুজে ঘেরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ এবং এগারোটি নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের সমাহার রয়েছে পার্বত্য বান্দরবানে।
পর্যটকদের ভ্রমনের তালিকায় প্রথম পছন্দের তালিকায় স্থান পাচ্ছে মেঘলা,নীল আচল,নীল গিরি,শৈল প্রপাত,চিম্বুক,নীল দিগন্ত পর্যটন স্পট সহ জেলার বাইরে নাফা কুম,দেবতা কুম,ডিম পাহাড় সহ আরো অনেক পর্যটন স্পট গুলো।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকেরা ছুটে আসছে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের মিতালি উপভোগ করার জন্য।পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ পাহাড়-পর্বত ছাড়াও অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, স্বচ্ছ জলধারা, লেক সহ রাতের বেলায় বর্নিল আলোক সজ্জিত বান্দরবান জেলা শহরের সাঙ্গু ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা।জেলায় আগত পর্যটকেরা সারাদিনের ক্লান্তি লাঘবের জন্য রাতের বেলায় আড্ডা জমায় সাঙ্গু নদীর ব্রীজের উপর।সাঙ্গু নদী তীরবর্তী সেনাবাহিনীর পরিচালিত ক্যাফে গুলোতেও পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সদর ও উপজেলার হোটেল,মোটেল ও রিসোর্টে ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন আগত পর্যটকদের আগাম রুম বুকিং প্রায় ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে ঈদের আগেই জেলা সদরের হীল ভিউ,হীল টন,ব্লু স্কাই,হীল কুইন সহ আরো অনেক আবাসিক হোটেল গুলো ঈদে পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে আগাম বুকিং ও সেবার মান বৃদ্ধি করেছে।
জেলায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এডানোর জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ হতে এবং জেলা টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ হতে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা মূলক ব্যাবস্থা।
এ ব্যাপারে জেলা টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমনে সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে জেলা টুরিস্ট পুলিশ এ জন্য বিভিন্ন পর্যটন স্পট সমূহে আমাদের টিম কাজ করছে এবং আমাদের সহযোগিতায় জেলা পুলিশের টিম ও আছে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান হোটেল,মোটেল,রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন , বিগত করোনার কারনে জেলায় পর্যটকদের ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো এ বছর এমনটা নেই তাই আমরা আশা করছি বান্দরবানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে।
পর্যটকদের বরনের জন্য প্রস্তুত আছে জেলার তিন তারকা ও দুই তারকা হোটেল গুলো,তাছাড়া পর্যটকদের বাজেটের উপর নির্ভর করে আছে স্বল্প ভাড়ার আবাসিক হোটেলের ব্যাবস্থাও।
তিনি আরো জানান, ঈদের প্রথম দিন জেলায় তেমন পর্যটকদের আগমন না ঘটলেও ঈদের পরের দিন হতে হোটেল,মোটেল ও রিসোর্টে পর্যটকদের আগাম রুমের বুকিং দেয়া শুরু হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বা পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আবাসনের ব্যাবস্থায় জেলার কোন আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না,স্বাভাবিক ভাবে নিয়মিত ভাড়াই গ্রহন করবেন হোটেল,মোটেল,রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের মোহে দেশের বিভিন্ন জেলার দূরদুরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটবে পাহাড় কন্যা বান্দরবানে, পর্যটকদের আগমনে আবারো ব্যাবসায়িক ভাবে প্রান ফিরে পাবে জেলার পর্যটন শিল্প।
করোনাকালীন সময়ে ব্যাবসায়িক ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আসবে বলে ধারনা করছেন এই শিল্পের সাথে জড়িত হোটেল,মোটেল ও রিসোর্টের মালিক কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল এ আগত দর্শনার্থীরা রাত্রি যাপন করার সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে স্বপ্ন চত্ত্বর নামে দৃষ্টি নন্দন আবাসিক কটেজ।
এছাড়াও আছে আরো কয়েকটি কটেজ,কটেজ গুলোতে ভাড়া প্রদান করে যে কোন পর্যটক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ের আরো কাছ থেকে।জেলা সদরে প্রবেশের পূর্বেই আরেকটি নতুন দর্শনীয় স্থান সকল পর্যটকদের নজর পড়বে,সেটি হলো গোল্ডেন বুদ্ধ মুর্তি,পার্বত্য মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত অর্থায়নে এই বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছে।এর নান্দনিক কারুকার্য শৈলী যে কোন দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে।
পর্যটকদের আগমনে আবারো প্রাণচঞ্চলতা ফিরে এসেছে জেলার পর্যটন শীল্পে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।