অন্ধকার যুগে আরবরা ছিল মদ পানের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত। তারা তাদের এ আসক্তি কথাসাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নানাভাবে ফুটিয়ে তুলত। মদের গুণাগুণে রচিত কবিতাগুলো তাদের মজলিসে ছন্দের ঝংকার তুলত। বিভিন্ন আসরে আসরে বর্ণিত হতো এর রকমারি চমক ও চানোক্য। এমনকি মদের শ’খানেক নামও দিয়েছিল তারা।

মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার ভয়ংকরতম ব্যাধিগুলোর অন্যতম। বলারও অপেক্ষা রাখে না, মাদক পরিবার-পরিজন ও জ্ঞাতি-বংশকে এমন বিপদ-বিপর্যয়ের মাঝে ফেলে দেয়, যা থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমছে

ইসলাম এসে ক্রমান্বয়ে তাদের ওপর মদকে হারাম করে দিল। তাদের প্রথম ধাপে মদে মত্ত অবস্থায় নামাজ পড়া থেকে নিষেধ করা হলো। এরপর তাদের বলে দেওয়া হলো, মদের মধ্যে যেসব উপকারিতা রয়েছে, তার তুলনায় এর গোনাহ ও অপরাধের দিকটিই অধিক মারাত্মক। এরপর আল্লাহতায়ালা সূরা মায়িদার নিুোক্ত ব্যাপক তাৎপর্যবহ ও অকাট্য আয়াতটি নাজিল করলেন-‘হে ইমানদারগণ! নিশ্চয়ই খামরুন (মদ ও মাদক), মাইসিরুন (জুয়া), আনসাব্ (বলিদানের স্থান) এবং আজলাম (ভাগ্য গণনার শর)-শয়তানের অপবিত্র সব কাজ।

আল্লাহতায়ালা এ আয়াত দুটিতে মদ ও জুয়াকে একেবারে চূড়ান্ত ও কঠোর ভাষায় হারাম করে দিয়েছেন এবং একে বলিদানের স্থান এবং ভাগ্য গণনার শরের সঙ্গে উল্লেখ করে এ কাজ দুটিকে অপবিত্র ও পঙ্কিলতাপূর্ণ হিসাবে গণ্য করে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, রিযসুন কথাটি যখন কুরআনে ব্যবহৃত, তখন সেটা শুধু অশ্লীল, জঘন্য, বীভৎস ও পঙ্কিল জাতীয় কিছু বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

তদুপরি এ কাজ দুটিকে আবার শয়তানের কাজ বলে অভিহিত করেছেন; আর শয়তানের কাজই হলো অশ্লীল ও অসৎ কাজ করা। এখানে মদ্য পান ও জুয়াকে পরিহার করে চলার আহ্বান জানান হয়েছে; সঙ্গে এই পরিহারকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে সাফল্যের পানে ধাবিত হওয়ার পথ। আরও বলা হয়েছে, এ দুকাজের বিভিন্ন সামাজিক ক্ষতির কথা।

নবি করিম (সা.) যখন প্রথম মদ নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেন, তখন তিনি এদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেননি যে, কোন্ কোন্ জিনিস থেকে মদ তৈরি করা হয়, বরং তার মূল দৃষ্টি ছিল-মদ মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া ঘটায় সে দিকে; আর সেটা হলো উন্মাদনা, নেশা ও মাদকতা। কাজেই যে জিনিসের মধ্যেই এ মাদকতা, নেশা ও মাতালতার শক্তি বিদ্যমান থাকবে, সেটিই খামরুন/মাদক/মদ হিসাবে বিবেচিত হবে-চাই মানুষ সেটাকে যে নাম বা উপনামে ডাকুক না কেন।

চাই তা যে জিনিস থেকেই প্রস্তুত করা হোক না কেন। নবি করিম (সা.)-এর কাছে ‘মধু’ থেকে প্রস্তুতকৃত, কিংবা ‘ভুট্টা’ ও ‘যব’ ভিজিয়ে পরে তা ঘন করে যে মদ প্রস্তুত করা হয়-সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, বলেছিলেন ‘প্রত্যেক নেশাকর জিনিসই খামরুন (মাদক/মদ)। আর প্রত্যেক খমরুনই হারাম। [সহিহ মুসলিম-৩/১৫৮৮]।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ওমর (রা.) লোকজনের সামনে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন-‘খামরুন (মদ/মাদক) হলো তা, যা মস্তিষ্কে মাদকতা আনয়ন করে’। [সহিহ বুখারি-৪৩৪৩]। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-‘যে জিনিসের অধিক পরিমাণ মাতালতা/নেশা/মাদকতা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম’। [সুনানে আবু দাউদ-৪/৮৭]।

মদ/মাদক চাই কম হোক বা বেশি। নবি করিম (সা.) সেটাকে শুধু হারাম করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং মাদক ব্যবসাকেও তিনি হারাম করে দিয়েছেন-চাই সেই ব্যবসাটি অমুসলিমদের সঙ্গেই করা হোক না কেন। সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্যই এ কাজ জায়েজ নয়, সে মাদক আমদানি-রপ্তানির কাজ করবে, অথবা মাদক বিক্রির দোকান দিয়ে বসবে, কিংবা কোনো মদের দোকানে চাকরি করবে।

শেষ কথা হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রে থেকে মাদক নির্মূলে ইসলাম নির্দেশিত পথের কোনো বিকল্প নেই এবং আল্লাহতে বিশ্বাসী কোনো মুমিন মুসলমানের জন্য মাদক সেবনের কোনো সুযোগ নেই।