শাওন গগন ঘোর ঘনঘটা’ বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান বৃষ্টির ছন্দে গেয়ে ওঠেনি এমন বাঙালি খুব কমই আছে। হালকা এক পশলা বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের সঙ্গে আজও মিশে যায় সুরের ছন্দ। বর্ষা আর আগের মতো নেই।

বিনা নোটিশে মেঘের মাদল বাজিয়ে বর্ষা হাজির হতো এই সময়ে এই বঙ্গেতে। বঙ্গদেশে প্রকৃতির খেয়াল খুশির খেলারও সময় সীমানার আইল ছিল।

মেঘের মাদল বাজিয়ে বর্ষা হাজির হতো এই বঙ্গে;
গ্রীষ্মের তীব্রতাকে মুছে দিতে রুক্ষ্ম শুষ্ক রৌদ্রতাপে চৌচির ধরিত্রীকে শ্যামল সুন্দরের অপরুপ রুপমাধুর্য্যে ভরিয়ে দিতে হাজির হতো আষাঢ়। মেঘের মাদল বাজিয়ে। মানুষের মনে সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনে দিতো। সারা দেশ জল থৈ থৈ করতো।

মাঠ ঘাট নদী নালা ভরে উঠতো। ছোটছেলেমেয়েরা কাগজের নৌকা ভাসাতো ঘরের পৈঠায় বসে। পৈঠা কাগজের নৌকার মতো বর্ষা আজ যেন অপরিচিত এক নামের মতো। মেঘের পরী কী করে আসবে সে? কোথায় পাবে গম্ভীর মেঘরাশি।

প্রকৃতি খাদকরা খেয়ে ফেলেছে বন-জঙ্গল, ভূমিখাদকরা খেয়ে নিয়েছে মাঠ-ঘাট-খাল-বিল-নদী। কোথায় জল? চাতক পাখি জল চেয়ে আর ডাকে না। বিজাতীয় গাছের সম্ভারে খাবারের আভাস মেলেনা।

খাদ্যাভাবে প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায়না দোয়েল কোয়েল টিয়ে বুলবুলি ফিঙ্গে চড়ুইপাখি মাছরাঙা কাঠঠোকরা ঘুঘু আরও কত পাখি। মাটিতে নেই ব্যাঙ। সব পাচার হয়ে চলে গেছে সাদা ধবধপে টেবিলে।

বৃষ্টিকে ডাকবে কে? বৃষ্টিকে যারা আহ্বান করতো তারা আর নেই। বৃষ্টি আসবে কিভাবে? কার আহ্বানে? সেই কোন কালে তানসেনের মল্লার রাগে নাকি নেমে আসতো বৃষ্টি।

আজ গান বাজনা কি সেই আগের মতো ঘরে ঘরে আছে যে সুরের ঝর্ণাধারা টেনে নামাবে বৃষ্টিকে? মন শুষ্ক প্রাণ শক্ত কঠিন জীবনবোধ রুদ্ধচেতনা বৃষ্টি আমাদের চরিত্রের মতোই ক্রমেই কি নিষ্ঠুর হচ্ছে?