রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ ট্রেডের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই বিভাগের এক ছাত্রীকে প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শুক্রবার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাসুদ হোসেন সরকার। মাসুদ বাটুপাড়া গ্রামের মৃত সিদ্দিক সরকারের ছেলে। আর ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আরজেদ হোসেনের চাচাতো ভাই।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ জানুয়ারিতে বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ গ্রুপে ভর্তি হই। শিক্ষক মাসুদের বাড়ি আর আমার বাড়ি কাছাকাছি।
ওই ছাত্রীর আরও অভিযোগ, প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগে শিক্ষক মাসুদ প্রায়ই তাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। শিক্ষক মাসুদ ছাত্রীকে একদিন বলেন, তোমাদের একটা দুধেল গাভি আছে। আমাদের দুধ দিবা। আমি টাকা দিব। ২০১৯ সালের ১০ মে ছাত্রী দুধ দিতে মাসুদের বাসায় যায়। এ সময় মাসুদের বাড়িতে কেউ ছিল না। এই সুযোগে মাসুদ ছাত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করেন। এরপর শিক্ষক মাসুদ তাকে জানান, তাকে ধর্ষণের ভিডিও করা আছে। তার প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে ভাইরাল করে দেওয়া হবে।
ওই ছাত্রী বলেন, ভয় পেয়ে বিষয়টি পরিবারকে জানাইনি প্রথমে। আর দিনের পর দিন শিক্ষক মাসুদ এভাবে আমাকে ধর্ষণ করে গেছেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও বলেন, ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট গাজীপুরে গিয়ে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করি। আমার মামাতো বোনের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সেখানেও হাজির হয় মাসুদ। সেখান থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে আমাকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়। সেখানে একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করে। আগের ভিডিওগুলো ফেলে দেওয়ার অঙ্গীকার করে। সেখানে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিওগুলো আমি ডিলিট করি। তখন আমি ভেবেছিলাম এবার মাসুদের যৌন লালসা থেকে মুক্তি পাব। বাড়িতে ফিরে আবার পড়ালেখা শুরু করি। এরপর একদিন আকস্মিকভাবে আমার ঘরে ঢুকে আবারো ধর্ষণ করে। এরপর আমি বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করি।
এছাড়া একদিন মাসুদ ফোন করে বলেন, আমার প্রস্তাবে সবসময় সম্মত না হলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেব। ২০২১ সালে কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিই। মাসুদ আমাকে একটি বিষয়ে ফেল করিয়ে দেয়। মাসুদ আবার একদিন ফোন করে জানায়, মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট হলেও অন্য জায়গায় সব ভিডিও রাখা আছে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী আরও বলেন, অতীতের ভিডিও ডিলিট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শহরে নিয়ে যায়। বাস টার্মিনাল এলাকার হোটেল স্টারে নিয়ে আবারো ধর্ষণ করে। প্রতিবাদ করলে গত ৮ জুন বাড়ির ভেতরে ঢুকে লোকজন নিয়ে এসে আমাকে বেদম মারধর করা হয়। আমার পরিবারের লোকজনকেও মারধর করা হয়। ওই দিনই তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমি রাজশাহী মেডিকেলের ওসিসিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি। সম্প্রতি ন্যায়বিচার পেতে আমি রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ গিয়ে মাসুদ সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলা করি।
এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, প্রভাবশালী হওয়ায় শিক্ষক মাসুদ সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। এলাকার অনেক ছাত্রী ও বিবাহিত মহিলাদেরও সে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু কেউ লজ্জায় অভিযোগ করেনি। ছাত্রীটি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ হোসেন সরকারের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী আমার কাছে এসেছিলেন কিছুদিন আগে। দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইলিং করে তাকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে- এমন বেশ কিছু অডিও রেকর্ড ও ছবি আমাকে দিয়েছে। কিন্তু এগুলো যেহেতু ক্রিমিনাল কেইস। তাই ভুক্তভোগীকে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে বলেছি। হয়তো সে ন্যয়বিচার পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।