যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বর্ষার মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। আমন ধান চাষে অনিশ্চিতা ও পাট পচানো নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কৃষক। হাতে গোনা ২/১জন কৃষক সেচ পানি দিয়ে আমন ধান রোপন করলেও পানির অভাবে তা মারা যাচ্ছে।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫হাজার ১শ ১০হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে ও ৫হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এক হেক্টর জমিতেও পানির অভাবে ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষক।

বর্ষা মৌসুম আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এসব এলাকায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষক চাষ কাজে মাঠে নামতে পারছে না। একই সাথে পাট চাষে ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে। প্রচন্ড রোদে পাট গাছের কচিপাতা পুড়ে গেছে। পাট পচানোর জন্য ডোবা, জলাশয় ও পুকুরে পানিখুঁজে পাচ্ছে না কৃষক।


দেশে এখন চলছে আমন ধান চাষের ভরা মৌসুম। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরুপ বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। যে কারণে মাঠেঘাটে বর্ষার পানি না জমায় আমন আবাদ করতে পারছে না কৃষকরা। এই সময়ে কৃষকদের ধান চাষ নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র পানির অভাবে তারা ধান রোপন করতে পারছে। তাছাড়া পানির অভাবে বীজতলা করতে পারেনি অধিকাংশ কৃষক। ২/১জন যারা বোরিং এর সেচ পানি দিয়ে বীজতলা করেছে প্রচন্ড রোদে তা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

কৃষক মোঃ রিয়াজুর হাসান জানান, দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে কৃষক আমন চাষে নামেন। একারণে এ আবাদে তাদের সেচ খরচ কম হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে আষাঢ় ও শ্রাবণে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। কৃষকের মাঝে এখন রীতিমত পানি জন্য হাহাকার চলছে।

বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে কৃষকরা আজও তাদের কাঙ্খিত আমনের চারা রোপণ করতে পারেননি। যদিও গত দুদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতে তাদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাই তারা আমন আবাদে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে।
কৃষক আজিজুল সানা বলেন, এ বছর আমন ধান আবাদের জন্য তিনি ৫বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন।

কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে তিনি চারা রোপন করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, গত ২দিনে সামান্য বৃষ্টিতে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলাম। যতি এই বৃষ্টি মুষলধারের বৃষ্টিতে রূপ নেয়। তবেই চারা রোপণ করতে পারবেন। অনাবৃষ্টিতে এ বছর আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। যদি বৃষ্টি না হয়,তাহলে কোনক্রমেই কৃষক ধান চাষ করতে পারবে না।
এছাড়া বর্তমানে পাট চাষের অবস্থা নাজুক। প্রচন্ড রোদে পাট গাছের আগার কচিপাতা পুড়ে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে অনেকে অপরিপক্ক পাট গাছ কেটে ফেললেও পচানোর জায়গা পাচ্ছে না। প্রচন্ড রোদে পুকুর, ডোবা ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় তারা পাট পচানোর পানি পাচ্ছে না।

উপজলো কৃষি র্কমর্কতা ঋতুরাজ সরকার বলেন, শুধু কেশবপুর নয়। প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে সারা দেশে আমন আবাদে এ অবস্থা বিরাজ করছে।


এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আমন মৌসুমের ধান রোপণের সময় খুব বেশি পিছিয়ে যায়নি। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। এ বৃষ্টিতেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি আরও বলেন, আমন আবাদ নিয়ে কৃষকের পাশাপাশি কৃষি অফিসও চিন্তায় রয়েছে। চলতি মাসে বৃষ্টি হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কৃষক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেছে। প্রকৃতিতে বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাতে দ্রুত কৃষক তার কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা ও পানি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।