কলঙ্কময় ও নৃশংস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোড় ভিন্ন দিকে নিতে সাজানো হয়েছিল ‘জজ মিয়া নাটক’। কারা ফেঁদেছিলেন এই নাটক? যাকে জজ মিয়া সাজানো হয়েছিল, সেই মো. জালাল নিজেই এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আর সিআইডি আমাকে জজ মিয়া বানিয়েছিল। আমার চোখের সামনেই তো আমি জজ মিয়া হয়ে গেলাম।’
জজ মিয়া ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, গ্রেনেড হামলার পরদিন ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তড়িঘড়ি করে মামলা দুটি হস্তান্তর করেন সিআইডি পুলিশের কাছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জালালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়। তাকে জজ মিয়া নাম দিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয় ‘জজ মিয়া নাটক’।
দিনমজুর জজ মিয়াকে তার পুরো পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার লোভ দেখায় সিআইডি। এ প্রস্তাবে রাজি হননি জজ মিয়া। এরপর জজ মিয়ার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
সিআইডির কথামতো না চললে জজ মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ভয় দেখানো হয়। এতেও রাজি না হলে তাকে চোখ বেঁধে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যান জজ মিয়া।
শেষ পর্যন্ত জজ মিয়া সিআইডির প্রস্তাবে রাজি হন। তার পরিবারকে আজীবন ভরণপোষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সিআইডি কর্মকর্তা তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ এবং এসপি রুহুল আমিন। সিআইডির এই ৩ কর্মকর্তাই জজ মিয়া নাটক ফেঁদেছিলেন বলে জানা গেছে।
জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ার পর সিআইডি অফিসে দীর্ঘদিন আদর-আপ্যায়নে রাখা হয় জজ মিয়াকে। মুখস্থ করানো হয় জবানবন্দি। তার পরিবারকে পাঠানো হয় মাসোহারা। জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর আদালত জজ মিয়াকে কারাগারে পাঠায়।
২০০৭ সালে রাজনৈতিক পালাবদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয়। নির্দোষ প্রমাণিত হন জজ মিয়া। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই কারামুক্ত হন তিনি। এরপর এ মামলার সাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেন। তাতে ’জজ মিয়া নাটক’ সাজানোয় ওই ৩ সিআইডি কর্মকর্তার নাম উঠে আসে।
জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহ এবং মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে আলোচিত তিন সিআইডি কর্মকর্তাকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় মামলা হয় ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ। গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর ওই তিন সিআইডি কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এ ছাড়া তাদের ২১ আগস্ট হামলার মূল মামলায় আসামি করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় ১৯ আসামীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
সূত্র: ঢাকা টাইমস
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।