সাকিবকে পছন্দ করেন এমন লোকের অভাব নেই। আবার সাকিবের কর্মকাণ্ডে দুয়ো দেবার লোকও যে নেহায়েত কম নয়। মানুষটা যে এমনই যাকে ভালোবাসাও যায় উজাড় করে, আবার যার সমালোচনা করাও যেন স্বাভাবিক।
এই সাকিবের হাতে উঠেছে নেতৃত্বের ভার। টাইগার ভক্তরা স্বপ্ন দেখতে জানেন। তারা সফলতা পেলেই ভুলে যান নিকট অতীতটাও। সবশেষ ১৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টাইগাররা জয় পেয়েছে মাত্র দুই ম্যাচে। ‘সহজ’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েতেও হয়েছে নাকাল। এ যেন ঘোর অন্ধকার।
সাকিব নিজেই বলেছেন, রাতারাতি পরিবর্তন আসবে না খেলায়। আবার পরিবর্তনের সুর উঠেছে ক্রিকেট পাড়ায়। ব্যর্থতার দায়ে অধিনায়কত্ব খুইয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষের শুরু কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর।
মাস্টারি হারিয়েছেন এই ফর্মেটে। কিন্তু হায় এই ফরমেটটারই যে বড্ড বেশি দামি। ক’দিন বাদে এশিয়া কাপ। এরপর দামামা বাজবে বিশ্বকাপের। আর এই ফরমেটেই ব্যামোতে ভুগছে বাংলাদেশ।
কমতিটা কিসে? এই প্রশ্ন যখন মাথায় উঁকি দিচ্ছে তখন ভেবে দেখলাম কমতি আসলে নেই কোন জায়গায়। প্রথমত নেই ওপেনার। ৫০ ওভারের ম্যাচে ভালো করা আনামুল হক বিজয় আছেন দলে। তার খেলার ধরনে নেই টি-টোয়েন্টির রুটিন শট। সেইসঙ্গে আছেন বিপিএল-এ শতক হাঁকানো পারভেজ ইমন।
কিন্তু ইমন বিপিএল খেলেছেন কয়েক মাস আগে। এরপর খেলাই হয়নি কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। হঠাৎ দলে যুক্ত হওয়া শেখ নাইমের স্ট্রাইক রোটেট ক্ষমতা নিয়ে আছে বিস্তর সমালোচনা। দেশ সেরা ওপেনার তামিম গেছেন অবসরে।
ফর্মের তুঙ্গে থাকা লিটন দাস ইনজুরিতে। একজন হার্ড হিটারও নেই দলে। শেষ পাঁচ ওভারের রান তোলার দক্ষতার অভাব বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। দলের বাইরে থাকা সাব্বির রহমানকে তুলে নেয়া হয়েছে দুবাইয়ের ফ্লাইটে। দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর হাই-ভোল্টেজ টুর্নামেন্টে কেমন করেন দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা।
অবশ্য আফিফ হোসেন ধ্রুবর সাম্প্রতিক মুন্সিয়ানা বেশ আশা জাগাচ্ছে। বড় দলগুলোর কথা যদি বলা যায়, শেষ পাঁচ ওভারের বিগ শটের জন্যই দলে নেয়া হচ্ছে এসব খেলোয়াড়দের। পাকিস্তানের আসিফ কিংবা ভারতের দিনেশ কার্তিক তার উজ্জ্বল উদাহরণ। আমাদের তা কই?
স্পিন নিয়ে দম্ভ আমাদের বরাবরই। কিন্তু দলে লেগ স্পিনার একজনও নেই আমাদের। আফগানিস্তানের কথাই যদি বলি তাদের আছে রশিদ খানের মতো বিশ্বমানের স্পিনার, মুজিবের ভেলকি লাগানো অফ স্পিন আছে চায়নাম্যান বোলারও। আর বাংলাদেশে ভরসা সেই রিস্ট স্পিন।
আবার পেস বোলিংয়ের কাণ্ডারি মোস্তাফিজ। কিন্তু ফিজ যেন আন্ডারডগ হয়ে পড়েন পছন্দের পিচ না পেলে। সবমিলিয়ে বলা যায়, টি-টোয়েন্টি কালচারটাই যে গড়ে উঠেনি দেশের ক্রিকেটে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের নারীরা এনেছেন কাপ।
সাকিবরা দু’বার ফাইনালে উঠলেও মেলেনি কাপের দেখা। এবার যে বড্ড এলোমেলো দল নিয়েই গেছে এশিয়া কাপে। নয়া কাপ্তান সাকিবের কণ্ঠেও নেই আত্মবিশ্বাসের সুর।
আত্মবিশ্বাস থাকবেই বা কী করে? ১২০ বলের খেলায় সাবেক কাপ্তান রিয়াদ নিয়ে কতো সমালোচনা। কিন্তু দল ঘোষণার সময় মেলে না নতুন মুখ। পাইপ লাইনটা যে বড্ড নড়বড়ে। ভারত যেখানে তিন থেকে চার সেট খেলোয়াড় ভিন্ন দেশে পাঠায় সেখানে আমরা খেলোয়াড়ই খুঁজে পাই না!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে নতুন মোড়ক দিয়েছে আইপিএল। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশ থেকে খেলেছেন ক’জন? বলা যায় মাত্র দু’জন। সাকিব আর মোস্তাফিজ। আর মাশরাফি, রাজ্জাক ও আশরাফুলের ঝুলিতে আছে এক ম্যাচ করে। প্রশ্ন রইল আপনার কাছে আমাদের খেলোয়াড়দের কেন নেবে তারা? আর ক’দিন বাদে এশিয়া কাপ।
টাইগারদের নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কতটুকু? বিমান ধরবার আগে সাকিব বলে গেলেন, ২০২৩ সালের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের কথা। এশিয়া কাপ যেন সেটারই প্রাকটিসের মঞ্চ। আবার এটাও বলা যায়, নতুন অধিনায়ক, বিশ্বসেরা খেলোয়াড় নিশ্চয়ই ভালো কিছুই পরিকল্পনা করছেন।
সাকিবের দিকেই তাকিয়ে যে কোটি ক্রিকেট ভক্ত। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় যার রূপ। এখন ভাগ্য ও খেলোয়াড়দের শতভাগের অপেক্ষা সেইসঙ্গে সাকিবের রণকৌশলের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
লেখক: পিয়াস সরকার
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।