বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক সুন্দরবনের অহংকার সুন্দরী গাছ। এই বনের মিঠা পানির অংশে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। সুন্দরী গাছ কমে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কাঁকড়া গাছের বিস্তৃতি। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
আরোও পড়ুন: ভারতকে হারাতে যে কঠিন পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের মেয়েরা
ক্রেডিট রেটিং বাধ্যতামূলক, দিতে হবে পিএসআই
ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবনের মিঠা পানির অংশে বৃক্ষের সর্বশেষ বিবর্তনের (ক্লাইমেক্স ভেজিটেশন) জায়গাটি সুন্দরী গাছের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাঁকড়া গাছ নিতে পারে। এতে সেখানে সার্বিক প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্যের জীবনধারা ও বেড়ে ওঠায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
স্পারসোর বন বিভাগ ‘ম্যাপিং চ্যাঞ্জেস ইন দ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ইকোসিস্টেম ইউজিং স্যাটেলাইট সেন্সর ডেটা’ শিরোনামের এই গবেষণা পরিচালনা করে। সেখানকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহমুদুর রহমান এটি পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করেন। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর-পূর্বাংশের ২৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকার স্যাটেলাইট ছবি ও ডেটা ব্যবহার করে এই গবেষণা চালানো হয়।
এতে ১৯৮৮ সালের ল্যান্ডসেট টিএম ইমেজের সঙ্গে ২০২২ সালের স্যাটেলাইট ইমেজ ধারণ করে তুলনামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। পাশাপাশি ১৯৮৯, ২০০০ ও ২০১০ সালের ল্যান্ডসেট ইমেজ বিশ্লেষণ করা হয়। আরও ব্যবহার করা হয় ২০০৪-২০০৫ সালের কুইকবার্ড-২ এবং ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ডভিউ টু স্যাটেলাইট ইমেজ। এরপর ২০২১ সালে চালানো হয় মাঠ পর্যায়ের জরিপ।
কয়েকদিন আগে সমাপ্ত এই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৮৮ সালে সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের দিকে কাঁকড়া গাছের বিস্তৃতি ছিল ১৬৫ হেক্টর। ২০২২ সালে এসে সেটি দাঁড়িয়েছে ২২৭৯ হেক্টর। কাঁকড়া গাছের এই বৃদ্ধির হার ১৩৮১%। অন্যদিকে একই সময়ে মূলত সুন্দরী গাছসমৃদ্ধ এলাকাটিতে সুন্দরী ও গেওয়া গাছের বিস্তৃতি ছিল ১৫৯৬৯ হেক্টর। ২০২২ সালে এসে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১২৫৮৩ হেক্টরে। এই হ্রাসের হার ৭৯%।
গবেষণায় বলা হয়, এ থেকে সহজে বোঝা যায়, সুন্দরী গাছ সমৃদ্ধ এই এলাকায় কাঁকড়া গাছ প্রতিস্থাপন হচ্ছে। অন্যদিকে দেখা যায়, কেওড়া গাছের বিস্তৃতি ১৯৮৮ এবং ২০২২ সালেও ১৫ হেক্টরই আছে।
সুন্দরবনের সুন্দরী গাছকে হটিয়ে দিয়ে কাঁকড়া জায়গা করে নেবে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অন্য অংশে না হলেও সুন্দরবনের মিঠা পানির অংশে অদূর ভবিষ্যতে এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণায় এই পরিবর্তনের দায় হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রে (ইকোসিস্টেম) মিঠা পানির প্রবাহের পরিবর্তন, জোয়ারের জলে প্লাবনের স্তরে বিশেষ পরিবর্তন, অতিরিক্ত পলি জমা, বনভূমি থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে সামনে আনা হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।