রংপুর (গংগাচড়া) প্রতিনিধিঃ রংপুরের গঙ্গাচড়া চর বাগডোহরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শিশু মোনালিসা (১২) হত্যাকাণ্ডর শিকার হয়। মোনালিসা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোতাহারা বেগম ও মোনালিসার মামী আজিনুরের স্ত্রী ময়না বেগম। তারা গঙ্গাচড়া উপজেলার চর বাগডোহরা গ্রামের বাসিন্দা।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর কেরানীপাড়াস্থ সিআইডি রংপুর জোনের বিশেষ পুলিশ সুপার আতাউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে রোববার দুই আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেন।

তিনি জানান, ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গঙ্গাচড়া চর বাগডোহরায় সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলামকে হত্যা করে। এরপর সাইফুল তার আপন চাচাতো ভাই প্যারালাইজড রোগী রিয়াজুল ইসলামকে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।

রিয়াজুল হত্যাকাণ্ডটি তার নাতনী মোনালিসা দেখে ফেলায় তাকেও হত্যার চেষ্টা চালায় সাইফুল। প্রাণের ভয়ে শিশু মোনালিসাকে নিয়ে তার পিতা-মাতা গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে দুই মাস আত্মগোপনে থেকে বাড়ি ফিরে আসে মোনালিসার পরিবার।

সিআইডি পুলিশ সুপার আরোও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ৯ জুন দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে একা পেয়ে মোনালিসাকে হত্যা করে সাইফুল ও তার সহযোগিরা। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৪ আগস্ট গঙ্গাচড়া থানায় মামলা হলে তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।

সিআইডির সদস্যরা গত ৫ সেপ্টেম্বর অভিযান পরিচালনা করে বাগডোহরা থেকে আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোতাহারা বেগম ও মোনালিসার মামী আজিনুরের স্ত্রী ময়না বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় সিআইডি ময়না ও মোতাহারাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে একদিনের রিমান্ড আবেদন করে। রোববার আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

আতাউর রহমান বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল তার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য আজিজুলকে হত্যা করে। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য সে তার আপন চাচাতো ভাই রিয়াজুলকে হত্যা করে। সর্বশেষ রিয়াজুলের নাতনীকে হত্যা করে ঘরের গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মোনালিসার মুখে রক্ত দেখতে পাই।

লাশটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোসহ ময়নাতদন্ত করা হয়। তদন্তে মোনালিসাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সিআইডি এ তিনটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। অন্যান্য আসামিরা গ্রেফতার হলেও মূল আসামি সাইফুল এখনও পলাতক রয়েছে। সে বিভিন্ন মানুষের সিমকার্ড ব্যবহার করছে এবং ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করছে। তবে তাকে দ্রæত গ্রেফতার করা হবে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।