নিরাপদ পৃথিবীর জন্য জলবায়ু ন্যায্যতা, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দুর্যোগের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বরিশালে জলবায়ু ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এবং ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ময়লার স্তুপ শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ , ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ এবং ইয়ুথনেট ফর ফ্লাইমেট জাস্টিস আয়োজিত এক জলবায়ু ধর্মঘট থেকে এ দাবি জানানো হয়।

‘দুর্যোগের ক্ষতিপূরণ ও নবায়নযোগ্য শক্তি, এতেই জলবায়ু সংকটের মুক্তি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা বৈশ্বিক কার্বন ও ঐতিহাসিকভাবে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে যোগ দেন। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট ক্লাইমেট জাস্টিস’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন বরিশালের প্রধান সড়ক।

ধর্মঘটে উপস্থিত ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট কোরডিনেটর জিহাদ,অপি, সৈকত, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর সদস্যবৃন্দ, প্রমুখ।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’–এর বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে চাপ দেওয়া এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বন্ধসহ জলবায়ু দূষণ থামানোর দাবি জানানো হয়েছে।

ধর্মঘটে তরুণরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধনী দেশগুলো দায়ী। অথচ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ ও গভীর সংকটে পরেছে। তাদেরকেই নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব, দ্রুততম সময়ে প্রতিশ্রুতি অর্থ দিতে হবে। জলবায়ু সুবিচারের দাবিতে উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার যোগ্য পথ নকশা প্রণয়ন, দ্রুত বাস্তবায়ন এবং অধিকার ভিত্তিতে অভিযোজন তহবিল সরবরাহ করতে হবে।

 

ধর্মঘট থেকে বলা হয়, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপান তার মধ্যে অন্যতম। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, সুমিটোমো করপোরেশন, জাইকা, এইচএসবিসি ব্যাংক এর মধ্যে অন্যতম বিনিয়োগকারী। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক প্রভাব বিবেচনায় বিশ্ব এখন এক সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে, যাকে জাতিসংঘ মানবতার জন্য রেড অ্যালার্ট বা লাল সংকেত হিসেবে অভিহিত করেছে। সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম, বিশেষ করে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধ করে, তা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসার করতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।

 

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী কো-অর্ডিনেটর সোহানুর রহমান জানান, জলবায়ু সংকট আমাদের দেশ এবং পৃথিবীর জন্য এক মহা বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু সংকট উত্তরণে প্রয়োজন দূষণকারী দেশগুলোর থেকে প্রাপ্ত ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা। এই পৃথিবী আমাদের। তাই এই পৃথিবী রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। সেই দায়িত্ব থেকেই আজকে এখানে ধর্মঘটে অংশ নিয়েছি। সহানুভূতিশীল যা ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে ন্যায়বিচার এবং দায়িত্ববোধের দাবি করি। জলবায়ু কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা, অভিযোজন বা সহনশীলতা বৃদ্ধি কঠিন মনে হতে পারে। তবে এটি অত্যাবশক। দুষণকারী জীবাশ্ম জ¦ালানী মালিকদেনকের জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের ভবিষ্যতের সুরক্ষায় আন্ত:প্রজন্ম জলবায়ু সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।

 

কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়েছে ২০১৮ সালের আগস্টে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর দ্য ক্লাইমেট’ লিখিত একটি প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতি শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে এই আন্দোলন নিয়ে তিনি বিভিন্ন প্লাটফর্মে কথা বলতে শুরু করেন। এর নামকরণ করেন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’। সারা বিশ্বে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন।