যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার মহাকবি’র জন্মস্থান সাগরদাঁড়ীতে দু’বাংলার কবি সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে মাইকেল মধুসূদন স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যা রাতে সাগরদাঁড়ি মধুসূদন একাডেমীর আয়োজনে মধুসূদন মিউজিয়াম ভবনে মধুসূদন স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠানে মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার প্রদান, মধুসূদন একাডেমী সম্মাননা প্রদান, আলোচনা, গান ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব কাজী রফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল ব্যানার্জী এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন কলকাতা, ভারত এর সাংস্কৃতিক খবর পত্রিকার সম্পাদক কবি কাজল চক্রবর্তী বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন কলকাতা, ভারত এর কবিতা ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক কবি অলোক বিশ্বাস এবং ‘সৌম্য’ পত্রিকার সম্পাদক কবি সৌহার্দ সিরাজ।
আরোও পড়ুন:
দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
খুলনায় ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে তরুণীর মৃত্যু
পুলিশের আচরনে মানুষ যেন সন্তুষ্ট থাকে! অতিরিক্ত ডিআইজি
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধুসূদন একাডেমীর পরিচালক কবি খন্দকার খসরু পারভেজ। আলোচনা সভা শেষে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন চর্চায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার, সংগীত পরিচালক, নাট্যাভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ছোটো কাগজের সম্পাদক কবি কাসেদুজ্জামান সেলিম কে মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার-২০২০ প্রদান করা হয়।
খ্যাতনামা আরেক এক কবি মাইকেল মধুসূদন চর্চায় অবদানের জন্য মহাকাব্য রচনা এবং মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি কবিতা বাংলা ভাষায় অনুবাদকারী “বেঙ্গলি লিটারেচার” পত্রিকার সম্পাদক কবি সায়ীদ আবুবকর কে মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার-২০২১ প্রদান করা হয়। এছাড়াও মধুসূদন চর্চায় অবদানের জন্য ভারতের হাওড়া কবিতা ক্যাম্পাসের সম্পাদক কবি অলোক বিশ্বাস কেও মধুসূদন একাডেমী সম্মাননা-২০২১ প্রদান এবং তাঁর সুস্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল জীবন কামনা করেছেন।
মধুসূদন একাডেমী কর্তৃক পুরস্কৃত খ্যাতনামা ও গুনীজন কবিদের জীবনী তুলে না ধরলে কেমন যেন একটা অপূর্ণ থেকে যায়। তাই স্বল্প পরিসরে ওই কবিদের মধ্যে কবি কাসেদুজ্জামান সেলিম যশোর শহরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অতি প্রিয় এবং পরিচিত মুখ।তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল মাতুলালয় যশোরের মহাকাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা ও প্রথম পৌরসভা যশোর শহরে। তাঁর পিতা মোহাম্মদ জিন্নাহ ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান যাত্রাভিনেতা। একটি শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কাসেদুজ্জামান সেলিমের বেড়ে ওঠা।
তিনি একাধারে কবি, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার , সংগীত পরিচালক, নাট্যাভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, ছোটো কাগজের সম্পাদক প্রকাশক, একই সাথে একজন দক্ষ সংগঠক এবং সফল উপস্থাপক। একজন মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণের সমাবেশ আমরা অনেকের মধ্যে দেখতে পাই না। এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখযোগ্য যে, তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ‘বিস্মিল্লাহ অটো’র চেয়ারম্যান। ব্যবসায় জগতে তাঁর রয়েছে ঈর্ষনীয় সাফল্য।
তিনি আইনে স্নাতকোত্তর। কাসেদুজ্জামান সেলিমের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুরের বাণী, পাঁচ কুড়ি গান, পত্র লেখার কারুকাজ, আমার যত কথা ছিল, নির্বাচিত কবিতা, বিড়াল ছানার জন্মদিনে, ছড়ার মেলা, গানের দোলা লাগুক প্রাণে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচনা সমগ্র। বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে রয়েছে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ। লেখা-লেখির জন্য দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা লিরিক, সুবর্ণ লিরিক, নিরিখ ও নৈকট্য। মধুসূদন জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উপলক্ষে তিনি সম্পাদনা করেছেন লিরিক ও সুবর্ণ লিরিক মিলিয়ে মোট ৮ টি সংখ্যা।
যা বাংলাদেশে মধুসূদন চর্চায় তাঁর অবদানকে নির্দেশ করে। মধুসূদন স্মারক সংগঠন ‘ মধুসূদন একাডেমী ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মধুসূদন চর্চায় অবদানের জন্য মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার প্রদান করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্পাদক কাসেদুজ্জামান সেলিম কে মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার-২০২০ এ ভূষিত করা হয়। তাঁকে সম্মানিত করতে মধুসূদন একাডেমীর সকল নেতৃবৃন্দ খুবই আনন্দিত এবং কাসেদুজ্জামান সেলিমের সৃষ্টিশীল সুস্থ জীবন কামনা করেছেন।
আরেকজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক হলেন নব্বই দশকের শক্তিমান কবি সায়ীদ আবুবকর। তাঁর জন্ম ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার কেশবপুরের রামভদ্রপুর গ্রামে। ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সায়ীদ আবুবকর সরকারি কলেজ অধ্যাপনারত। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ রয়েছে ১৫ টি। তাছাড়াও কবিতা বিষয়ে ৩ টি প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে, তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে প্রণয়ের প্রথম পাপ, জুলেখার শেষ জাল, সাদা অন্ধকারে কালো জোৎস্নায়, বঙ্গেতে বসতি, কপোতাক্ষ পাড়ের রোদ্দুর, বাংলাদেশ, মহাকালের কান্না, কবিতা কমল, কবিতার আধুনিকতা, সাহিত্যের সাত-সতের, শ্রেষ্ঠ কবিতা উল্লেখযোগ্য। সম্পাদনা করেছেন একটি অনন্য সংকলন আধুনিক বাংলা কবিতা। সায়ীদ আবুবকর একজন সফল অনুবাদক। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি কবিতার অনুবাদ করেছেন মধুসূদনীয় ভাষায়। যা পাঠ করলে পাঠক বুঝতে পারেন না তিনি অনুবাদ পাঠ করছেন না, মধুসূদনের মূল কবিতা পাঠ করছেন। কাজী নজরুল ইসলামের “সাম্যবাদী” এবং আল মাহমুদের “সোনালী কাবিন” ইংরেজিতে অনুবাদ করে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি একজন দ্বিভাষী লেখক। বিশ্বের বিখ্যাত বহু সংকলন ও জার্নালে তাঁর ইংরেজি কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক কবি সংগঠন পোয়েম হান্টার এর জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ কবির মধ্যে তিনি অন্যতম। সায়ীদ আবুবকর ইংরেজি সাহিত্য পত্রিকা “বেঙ্গলী লিটারেচার” এর সম্পাদক। এই পত্রিকায় আমাদের বাংলা কবিতাকে ইংরেজি অনুবাদের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করে চলেছেন । মহাকাব্যের দিন শেষ, এমন কথা যখন সমালোচকরা উচ্চারণ করেন, তখন দু’টি মহাকাব্য রচনা করে সায়ীদ আবুবকর প্রমাণ করেছেন যে, মহাকাব্যের দিন এখনও শেষ হয়নি। তাঁর মহাকাব্য ‘মুজিবনামা’ এবং ‘নবীনামা’ এর মধ্যে সুধিজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি অর্জন করেছেন লালন পদক,
সৈয়দ আলী আহসান পদক, ইন্টারন্যাশনাল লিটারেরি জার্নাল রক পেবলস এর ত্রিশতম বর্ষপূর্তিতে পাওয়া রক পেবলস ইন্টারন্যাশনাল লিটারেরি আ্যাওয়ার্ড সহ অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, মধুসূদন স্মারক সংগঠন ‘মধুসূদন একাডেমী’ মধুসূদন চর্চায় অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় মধুসূদনের ইংরেজি কবিতা অনুবাদের মধ্যে দিয়ে মধুসূদন চর্চায় অবদান এবং মহাকাব্য রচনার জন্য সায়ীদ আবুবকর কে মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার-২০২১ প্রদান করা হয়েছে। তাঁকে সম্মানিত করতে মধুসূদন একাডেমীর সকল নেতৃবৃন্দ আনন্দিত এবং তাঁর সুস্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল জীবন কামনা করেছেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবি সমাবেশ ও কবিতা পাঠের আসর সাতক্ষীরা জেলার কবি পল্টু বাশার এর সভাপতিত্বে কবিতা পাঠ করেন যশোর খাজুরা সরকারি শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন কলেজ এর প্রভাষক এম এ কাসেম, কবি নজরুল ইসলাম খান, কবি মকবুল মাহফুজ, কবি নয়ন বিশ্বাস, কবি রিয়াজ লিটন, কবি জিয়াউর রহমান, কবি প্রবীর বিশ্বাস, কবি এনামুল হোসেন, কবি নাজমুল হোসেন, কবি মাসুদা বেগম বিউটি, কবি মামুন আজাদ, কবি জাহিদ আব্বাজ, কবি অমিয় দেবনাথ, কবি পার্থ সারথী সরকার, কবি এম জি মহসিন, কবি মনিরুজ্জামান মুন্না, সাংবাদিক ও কবি ইব্রাহীম রেজা, কবি হোসাইন নূরুল হক, কবি শফিক শিমু, কবি কাসেম আলী, লিটন হোসেন ও কবি শাহীন সাগর।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শামীম আখতার মুকুল, সহ-সভাপতি কবি বাবুর আলী গোলদার, কেশবপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর পত্রিকার কেশবপুর প্রতিনিধি আজিজুর রহমান, সদস্য ও প্রথম আলো প্রত্রিকার কেশবপুর প্রতিনিধি দিলীপ মোদক, পরেশ দেবনাথ, সোহেল পারভেজ সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে লেখক, কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ পাড়ে সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ, প্রাণের কবি, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
জমিদার পিতা রাজনারায়ন দত্ত এবং মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে এই পৃথিবীতে মহাকবির আর্বিভূত হন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।