কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের (নতুন ক্যাম্পাস) জমিতেও চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের দখলদারিত্ব। অধিগ্রহণ করা এলাকায় অন্যের মালিকানধীন জমি নিজের নামে দখল দেখিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন তিনি। প্রায় সাত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা ওই আবেদনে ইলিয়াসের সাথে স্বাক্ষর রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এইচ এম আল আমিনেরও।
নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই মৌজায় অধিগ্রহণকৃত এলাকার ১০৯ নম্বর খতিয়ানে ৫৭৯১, ৫৭৯২ ও ৫৭৯৩ দাগে ৩.৮১ একর জায়গার বিপরীতে ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন এই দুই নেতা। জমির প্রকৃত মালিকানা দাবি করা স্থানীয় কবির হোসেনের দাবি, ‘এই দাগে ইলিয়াস কিংবা এইচ এম আল আমিনের কোনো জমি নেই। তারা জোরপূর্বক নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’
এদিকে, দখল দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করা দুজনও বলছেন তাদের কোনো জমি নেই। ইলিয়াসের ভাষ্য, মালিকেরা সাধারণ মানুষ হওয়ায় তারা যেন ঠিকঠাক অর্থ পায় সেজন্য তিনি আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। অন্যদিকে এইচ এম আলামিন বলছেন এই জমিকে কেন্দ্র করে ইলিয়াসকে তিনি টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জমির বিষয়ে মালিকের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমার সব লেনদেন ইলিয়াসের সাথে। আমি ইলিয়াসকে টাকা দিয়েছি। এখন ইলিয়াস টাকা পেলে আমিও পাব, না পাইলে সেটা তার সাথে আমি বুঝবো।’
জমির প্রকৃত মালিকানা দাবি করা কবির হোসেন বলেন, ‘এখানে ইলিয়াসের দখলে কখনো জমি ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে আমরা প্রায় ৭০ বছর ধরে এই জমি ভোগ-দখল করছি। আমাদের নামে আর এস, সিএস সব আছে।’
কবির হোসেন বলেন, ‘যখন সার্ভেয়ার এসেছিল তখন তারাসহ (ইলিয়াস) অনেক নেতাকর্মীরা ছিল। তাই তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের নাম আগে তুলে পরে আমাদের নাম তুলেছে। কাগজপত্র থাকার পরেও আমাদের নাম আগে লিখে নাই।’
এই বিষয়ে ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘এখানে জমির মালিকানা হাতিয়ে নেওয়ার আমরা কেউ না। বর্তমান শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম মাজেদ এবং সাবেক সেক্রেটারি রেজা-ই-এলাহী, উপজেলার বিভিন্ন নেতা, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের নাম আছে। সবার সম্মতিতে আবেদনটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ হোক বা কাল হোক জমির টাকা প্রকৃত মালিকরাই পাবে। এখানে আমার একান্ত কোনো ব্যক্তি স্বার্থ নেই।’
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা হয়ে কীভাবে এই এলাকায় দখলদারের তালিকায় ঢুকলেন তা জিজ্ঞেস করলে এইচ আম আল আমিন বলেন, ‘ইলিয়াস আমাকে বিষয়টা জানিয়েছিল। তাই আমি ইলিয়াসের সাথে যুক্ত হয়ে শুধু আবেদন করেছি। আবেদন করলেই তো আমি মালিক না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচ এম আল আমীনের সাথে লেখক ভট্টাচার্যের গভীর সখ্যতা রয়েছে। একাধিক ছাত্রনেতার দাবি, এই ভূমি বাণিজ্য থেকে যে সাত কোটি টাকা আসার কথা রয়েছে তা থেকে নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা পাওয়ার কথা। তাই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরও কুবির নতুন কমিটি হতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এরপর ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দখল দেখিয়ে আবেদন করলে যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু আবেদন করার পর কোনো জমি মালিকের আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তি করার পর টাকা হস্তান্তর করা হয়। উপযুক্ত কাগজপত্র থাকলে তবেই যাচাই-বাছাই করে টাকা প্রদান করা হয়, এক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হবে না।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ মার্চ বিভিন্ন ‘অনৈতিক দাবি-দাওয়া’ না মানায় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে উপাচার্যের গাড়ি অবরুদ্ধ করা, ২১ জুলাই উপাচার্যের দপ্তরে টেন্ডার ও নিয়োগ নিয়ে বাকবিতন্ডা করা ও ২১ আগস্ট কোষাধ্যক্ষকে টেন্ডার নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। এছড়াও বিভিন্ন সময়ে ইলিয়াসের স্ত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভি রহমানকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক বানাতেও উপাচার্যকে চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।