মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর প্রতিনিধি: শীত এলেই যেন ভোজনরসিক বাঙালিকে চেনা যায় নতুন রূপে। কারণ এসময় খাবারের তালিকায় যোগ হয় নানা ধরনের পিঠাপুলি। যে কারণে প্রতিবছরই শীতের আমেজ দেখা দিতেই বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
এবার আগেভাগেই শীতের পিঠার আমেজ দেখা দিয়েছে। এই আমেজে শেরপুরের পিঠা বিক্রেতারা ঠিকই তাদের পুরোনো জায়গাগুলোতে পিঠার
পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেছেন। নতুন চাল না হলেও পুরোনো চাল দিয়েই চালিয়ে নি”েছন বিকিকিনি। আর সেই পিঠা খেয়ে শীতের আগমনকে তরান্বিত করার চেষ্টা করছেন শহুরে মানুষরা। সন্ধ্যার পর শেরপুরে অলিগলির মোড়ে শীতের পিঠার দোকানগুলোতে ভিড় করছেন তারা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই শীতের আগমন বার্তা একটু হলেও মিলছে শহরে। সেই বার্তাকে কাজে লাগিয়ে শেরপুরের প্রাণকেন্দ্র, এমনকী অলিগলিতেও পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে বসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। এসব দোকানে মিলছে, ভাপা, চিতই, কুলি, পান পিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় স্বাদ নিতে দাঁড়িয়ে পড়ছেনঅনেকেই।
শেরপুর নতুন বাস্ট্যান্ড, শেরপুর সরকারি কলেজ গেইটের সামনে, থানার মোড়, সজবরখিলা, কানাশাখোলা, পাইওনিয়র কলেজের সামনে,
নিউমার্কেট, কলেজ মোড়, খোয়ারপাড়, কাজিবাড়ী পুকুরপার, খরমপুর, গোয়ালপট্টি, হাজির মোড়, নবীনগর, নাগপাড়া তিন রাস্তা মোড়সহ
শতাধিক ¯’ানে বসেছে পিঠা তৈরির অ¯’ায়ী দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে অধিক রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে দোকানগুলোতে। নানা
বয়সের নারী পুরুষ শিশুরা ভিড় করেন পিঠার দোকানগুলোতে। শেরপুর সরকারি কলেজ গেটের পাশের পিঠা বিক্রেতা মতিউর রহমান, তার
দোকানে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পানপিঠা (তেলে ভাজা), কুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ এই দোকান থেকে তিনি
প্রতিদিন ভালোই রোজগার করেন। দোকানে ক্রেতাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। দাম কম হওয়ায় সবাই খেতে পারেন তার পিঠা শেরপুরে থানা মোড়রের পিঠা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম গত বছরের মতো এবারও পিঠার দোকান দিয়েছেন। কেবল চিতই পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে ধনিয়া পাতার ঝাল চাটনি আর তরল গুড়। চিতই পিঠা রসে ভিজিয়ে খেতে দারুণ লাগে। তবে রস আসতে আরও দুই মাস লাগবে। সে কারণে রসের জায়গায় গুড় গলিয়ে তা দেওয়া হ”েছ ক্রেতাদের। মতিউর রহমান বলেন, পুরোপুরি শীত আসতে এখনো অনেক সময় আছে। কিছুদিনেই ভালো সাড়া পেয়েছি। আগের বছরে পিঠা সরবরাহ করতে হিমসিম খেতে হয়েছে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করছি। শেরপুর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মোড়ে দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষ শীতের পিঠার দোকান নিয়ে বসেছেন।
শীতের মৌসুম এলেই তারা কেবল এই ব্যবসা করেন। প্রতিটি পিঠার দাম রকম ভেদে পাঁচ থেকে ১০ টাকা হয়। আবার অনেক দোকানি চিতই পিঠার মধ্যে ডিম দি”েছন। এই ‘ডিম চিতই’ প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হ”েছ। শিশু-কিশোর, দিনমজুর, রিকশাচালক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এইসব পিঠা খেতে আসেন। নারিকেল, গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে ভাপা পিঠা বানালেও চিতই পিঠার সঙ্গে এসব দোকানিরা দি”েছন সরিষা ভর্তা, মরিচ ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা ও শুটকি ভর্তা। শেরপুর সরকারি কলেজ গেটের পাশের পিঠা বিক্রেতা মতিউর রহমান ও নতুন বাস্ট্যান্ড মোড়ের পিঠা বিক্রেতা নার্গিস বেগম জানান, প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন। যা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ তার সংসার চলে। তবে শীত শেষ হলেই তিনি ফের অন্য পেশায় চলে যাবেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।