পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক এক দুর্র্ধর্ষ আসামিকে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকা হতে ২০১৬ সালে লক্ষীপুর জেলায় পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক দুর্র্ধর্ষ আসামী ১। শারমিন আক্তার (২৫), পিতা-মৃত সেলিম, সাং-বসন্তপুর, থানা-সেনবাগ, জেলা-নোয়াখালীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মৃত জাকেরা বেগম ল²ীপুর জেলার সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর গ্রামের প্রবাসী রুহুল আমিনের স্ত্রী। ২০১৪ সালে জাকেরার ছোট ছেলে আবুল বাশারের সাথে ধৃত আসামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উক্ত বিয়েতে ভিকটিম জাকেরার সম্মতি ছিল না। শুরু থেকেই ধৃত আসামীর সাথে ভিকটিম জাকেরার সম্পর্ক ছিল তিক্ত। এসময়ে জীবিকার তাগিদে এবং পারিবারিক অশান্তির কারনে ধৃত আসামীর স্বামী বাশার গাজীপুরে ইলেকট্রিকের কাজ নেয়। বাশারের অনুপস্থিতে ধৃত আসামী শারমিন তাদের প্রতিবেশী জামালের সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। জামাল ভিকটিম জাকেরাকে আম্মা হিসেবে সম্বোধন করত। বাশারের অনুপস্থিতিতে সে তাদের খোজ খবর নেওয়ার জন্য নিয়মিত বাসায় যাতায়াত করত। শুরুতে ভিকটিম জাকেরা তাদের পরকীয়ার সম্পর্কে বিষয়টি বুঝতে পারে নাই। তিনি সরল বিশ্বাসে জামালকে তাদের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতে দিতেন। একদিন তিনি জামাল এবং ধৃত শারমিনকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। তিনি জামালকে তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেন এবং পুত্রবধূ শারমিনকে গালমন্দ করেন। তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি তার ছেলে বাশারকে অবহিত করেন। উক্ত ঘটনা জানার পর বাশার ধৃত শারমিনকে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করে এবং তাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন শারমিন তার প্রেমিক জামালের সাথে তার শাশুড়িকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ধৃত আসামী তাদের বাড়ির ছাদের গেইট খোলা রাখে। ঐদিন গভীর রাতে জামাল তার বন্ধু নাজিম ও জসিমকে নিয়ে ছাদের গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে শারমিনের ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয়। শারমিন দরজা খুলে দিলে তারা শারমিনের রুমের ভিতর দিয়ে শাশুড়ি জাকেরার রুমে প্রবেশ করে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। উক্ত ঘটনাকে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা জাকেরা এবং শারমিনের আলমারি ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে বাড়ির ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর ধৃত শারমিন চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নাকাটি শুরু করে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দীতে তাদের নিকট উক্ত ঘটনাটি একটি সাজানো ডাকাতি এবং হত্যার ঘটনা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত শারমিন তাদের হত্যা পরিকল্পনা এবং ডাকাতির ঘটনা সাজানোর বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার সহযোগী জামাল, নাজিম ও জসিমকে গ্রেফতার করে। ভিকটিমের দেবর বাদী হয়ে ল²ীপুর জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত ঘটনা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। উক্ত মামলায় সকলে জেল খেটে জামিনে বের হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর ধৃত শারমিন ও জামালের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। আসামীরা সকলে যার যার মত পলাতক জীবন শুরু করে। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ০৪ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় ২৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে পুত্রবধূ শারমিন আক্তারসহ ০৪ জনের ফাঁসির আদেশ এবং ১০,০০০ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
শারমিন আক্তারের জীবন বৃত্তান্তঃ ধৃত আসামী ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৪ সালে বাশারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। তার স্বামী গাজীপুরে চাকুরি করত এবং সে তার শাশুড়ির সাথে ল²ীপুর সদর এলাকায় বসবাস করত। এসময় জামালের সাথে সে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
শারমিন আক্তারের পলাতক জীবনঃ ২০১৬ সালে হত্যার ঘটনার পরদিন পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ০৯ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে পলাতক জীবন শুরু হয়। ধৃত আসামী জামিনে বের হওয়ার পর ২০১৭ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে নোয়াখালী থেকে চট্রগ্রাম জেলার অলংকার এলাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টেসে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। ০৩ বছর চট্রগ্রামে চাকুরি করার পর সে গাজীপুর জেলার একটি ছেলের সাথে প্রেমের সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে এবং তার প্রেমিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য গাজীপুর জেলার গাছা এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করতে থাকে। এ সময় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সে র্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। উক্ত মামলার অন্যান্য আসামী জামাল, নাজিম ও জসিম এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।