দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মেধা। সেই সঙ্গে যাচ্ছে অর্থও। প্রতি বছর গড়ে অর্ধলক্ষ ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশ। কেউ যান পিএইচডি ডিগ্রি করতে। আবার কেউ মাস্টার্স বা অনার্স ডিগ্রি নিতে। বিদেশে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের দেশে চাকরির নিশ্চয়তা আছে কেবল তারাই ফিরে আসেন। অধিকাংশ আর ফিরে আসছেন না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে চাকরি নিয়ে স্থায়ী আবাস গড়েন। এভাবে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মেধা। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি করা মেধাবীর সেবায় উন্নত হচ্ছে অন্য দেশ। বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আছে দুর্নীতিবাজদের সন্তান। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার নামে তারা অনেকেই বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ওই টাকায় সংশ্লিষ্ট দেশে গাড়ি-বাড়ি কিনে কিংবা ব্যবসায়ী সেজে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি নিচ্ছেন। এরপর শুরু হয় তাদের উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন। অবশ্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ‘ফান্ডিং’ (ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি) কিংবা ‘মেধাবৃত্তি’ নিয়ে পড়তে যান। আবার বাবা-মায়ের সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

ফিরে এসে তারা দেশের জনশক্তিকে বৈশ্বিক মানে তৈরি করতে পারেন। চীন-ভারত প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েটকে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশে পাঠাচ্ছে। এজন্য তাদের বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও আছে। অনেকে ব্যাংক ঋণ পান। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে-যারা পড়তে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ আবার ফিরে এসে নিজ দেশে সেবা করছেন।

এ ছাড়া যারা ওইসব দেশে থেকে যাচ্ছেন এবং উচ্চপদে চাকরি করছেন- তাদের যথাযথ সুযোগ দিয়ে ফিরিয়ে এনে নিজের দেশ গড়ার কাজে নিযুক্ত করছে। সুতরাং সমস্যাটা বিদেশযাত্রায় নয়- ফিরে না আসায় এবং দেশে যথাযথ সম্মান না পাওয়ার ক্ষেত্রে। তাই মেধাবীরা কেন ফিরছে না বা কেন দেশ তাদের ফিরিয়ে আনতে পারছে না-সেই আত্মসমালোচনা জরুরি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেধাবীরা বিদেশে পড়তে গেলে মোটা দাগে তিনটি ক্ষতি হয় দেশের। একটি হচ্ছে, জাতি তার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যারা ফিরে না আসে তারা দেশে কোনো অর্থ পাঠান না। বরং অনেকে নিজের সহায়-সম্বল যা আছে তা বিক্রি করে চলে যান।

আর শেষটি হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে এ দেশ থেকে দুর্নীতিবাজ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অন্যরা বিদেশে টাকা পাচার করেন। এই অর্থের বড় অংশ যায় অনানুষ্ঠানিক (হুন্ডি) পথে। ফলে ‘রিজার্ভ’ সংকটে পড়ে দেশ। অন্যদিকে শ্রমিকরা বিদেশ গেলে অর্জিত অর্থ (ডলার) আনুষ্ঠানিক বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠান।

উল্লিখিত বছরে সবচেয়ে কম গেছেন ম্যাকাওতে, পাঁচজন। সর্বনিম্ন ১০০ শিক্ষার্থী গেছেন এমন দেশ ২৫টি। এগুলোর মধ্যে আছে-ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, কাতার, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, এস্তোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, হাঙ্গোরি, নিউজিল্যান্ড, চীন-হংকং, ডেনমার্ক, ইতালি, ওমান, ইউক্রেন, ফ্রান্স এবং পর্তুগাল।

যারা দেশে ফিরে যাচ্ছেন না তারা সেটাকেই ভালো বিকল্প মনে করেন। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, মেধাবীরা বিদেশে থাকলেও তারা দেশের জন্যই কাজ করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এর উদাহরণ। আসলে বর্তমান যুগে এটাকে ‘মেধা পাচার’ না বলে ‘মেধা সঞ্চালন’ হিসাবে দেখা যায়। তবে তাদের কাজে লাগাতে দেশ উদ্যোগ নিতে পারে।