ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা হল মানুষের প্রফেশনাল জীবনের রোড ম্যাপ বা মানচিত্র। কর্মক্ষেত্রে থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ব্যক্তি জীবন এবং কাজের পরিবর্তনগুলো পরিচালনা করার একটি ব্যবহারিক উপায়। একজন ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় তৈরি করা থেকে শুরু করে সফল হিসেবে গড়ে তোলে একটি সফল ক্যারিয়ার এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন একটি সুন্দর ক্যারিয়ার প্ল্যানিং।

কীভাবে করবেন ক্যারিয়ার প্ল্যানিং?
ক্যারিয়ার নিয়ে তো অনেক কিছুই জানা হল। এবার সামনে এগোনোর পালা। এত এত অপশন থেকে কীভাবে নিজের জন্য সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করা যায়? আর কীভাবে পরিকল্পনা করলে ক্যারিয়ার নামক সোনার হরিণকে পোষ মানিয়ে নিজের হাতে নিয়ে আসাটা সহজ হয়ে যায়?

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করার উপায়গুলো নিয়েই আলোচনা।

১। জানতে হবে নিজেকে
ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর প্রথম ধাপটাই হলো নিজেকে জানা। আপনার প্রয়োজন, চাহিদা, দক্ষতা, সামর্থ্য, আকাঙ্ক্ষা, প্রতিভা, আগ্রহ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখাটা জরুরি-

নিজেকে মূল্যায়ন:
আপনি কত বেতন বা স্যালারি আশা করছেন তার সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক দক্ষতা এবং পরিশ্রম করা সত্ত্বেও আশানুরূপ স্যালারিটা অনেকে পান না। এতে চাকরি জীবনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারাটা জরুরি। সেই সাথে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকাটাও জরুরি। আপনি একাকী কাজ করতে চান নাকি দলগত কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সমাজ এবং দেশের প্রতি আপনার কাজের প্রভাব কতটা বা আপনি কীভাবে প্রভাব রাখতে চান, এ সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।

আগ্রহ মূল্যায়ন:
কাজের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ-অপছন্দের জায়গাটা জানতে হবে। কেননা সেই অনুযায়ী যদি আপনি ক্যারিয়ার নির্বাচন না করেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে প্রেষণা আসে না। আপনি অনুসন্ধানী, বাস্তবসম্মত, সামাজিক, শৈল্পিক, উদ্যোগী নাকি প্রচলিত ধারার ক্যারিয়ার চান সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনার আগ্রহের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নেয়া উচিত।

যোগ্যতা মূল্যায়ন:
নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে কতটুকু সময়, অর্থ, শ্রম বা প্রচেষ্টা ব্যয় করতে চান সে সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে আপনার গুণাবলি, সামর্থ্য এবং দুর্বলতার জায়গা, ক্ষমতা এ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা দক্ষতা দরকার হলে তা অর্জন করে নিতে হবে।

২। ক্যারিয়ার রিসার্চ এবং বিশ্লেষণ
নিজের যোগ্যতা, গুণাবলি এবং দক্ষতার জায়গা চিহ্নিত করার পর কোন ধরনের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি এগোতে চান সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার চাহিদা অনুযায়ী আপনার পছন্দের সম্ভাব্য ক্যারিয়ার অপশনগুলো নিয়ে একটি তালিকা বা লিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, দায়িত্ব, নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, অগ্রগতির বিষয়গুলো মাথায় রেখেই লিস্টটি করতে হবে।

এরপর লিস্টে থাকা ক্যারিয়ার অপশনগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। প্রতিটি পেশার সাধারণ বিবরণ, বেতন, সাধারণ সুবিধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা এবং সমস্ত চাহিদা পূরণের পরে নিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু এ সবই বিবেচনায় রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আপনার সেই ক্যারিয়ার সম্পর্কিত যত প্রশ্ন আছে তা জিগ্যেস করুন। এতে ভালো নেটওয়ার্কিং ও সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্মগুলোর সাহায্যও চাইলে নেয়া যেতে পারে। কোম্পানিগুলোর রিভিউ দেখেও অনেক বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।

ভলান্টিয়ারিং, ইন্টার্নশিপ, পার্ট টাইম জব সরাসরি আপনার ক্যারিয়ার বিশ্লেষণে সহায়তা করবে। তাই এই সুযোগগুলো হাতছাড়া করা যাবে না। আপনার পছন্দের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত কোর্স করেও ক্যারিয়ার শিক্ষাটা নিয়ে নিতে পারেন।