সাইফুর নিশাদ,নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদী পৌর শহরের ভেলানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ না থাকায় গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে দেয়া হচ্ছে পাঠদান, পরীক্ষা নেয়া হয় মাঠে ও পাশের উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সস্ট্রাক্টর ভবনে।
সরেজমিন গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নরসিংদী সদর উপজেলার পৌর শহরের ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ শত। জরাজীর্ণ একটি টিনসেড ভবনের স্থানে ২০২১ সালে করা বিদ্যালয়টির একতলা ভবনে একটি অফিস কক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা মাত্র দুটি। দুই শিফটে পরিচালিত হলেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ না থাকায় গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০২১ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য আবেদন করা অপর একটি একতলা ভবনের ৩টি শ্রেণিকক্ষ সংস্কার করে ঝুঁকিতে চালানো হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। ঘনবসতিপূর্ণ ভেলানগর মহল্লায় একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তুলনামূলকভাবে বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার মান ভাল হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ না থাকায় বিপাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
প্রতি বছর বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থিত উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কক্ষ ব্যবহার করে গ্রহণ করতে হয় বার্ষিক পরীক্ষা। সেন্টারটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু থাকলে চেয়ার টেবিল ভাড়া এনে বিদ্যালয়ের মাঠে নেয়া হয় সকল পরীক্ষা। সংকট সমাধানে বিদ্যালয়টির একমাত্র উর্দ্ধমুখী ভবনে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করাসহ পরিত্যক্ত ভবনের স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের দাবী শিক্ষক- শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার প্রিয়া ও তানভীর আহমেদ বলে, ক্লাসরুম কম থাকায় ও পর্যাপ্ত বেঞ্চ টেবিলের অভাবে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। পরীক্ষার সময় স্কুলের মাঠে বসে পরীক্ষা দিতে হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো: আলতাফ হোসেন বলেন, ৬ শত শিক্ষার্থী নিয়ে যদি এক শিফটে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে হয় তাহলে কমপক্ষে ১২টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। একতলা একটি ভবনে একটি অফিস কক্ষ ও মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বাধ্য হয়ে অপর একটি ঝুঁকিপূর্ণ একতলা ভবনের ৩টি শ্রেণিকক্ষ সংস্কার করে পাঠদান করা হচ্ছে। এতেও শিক্ষার্থীদের বসতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন অফিসের মেঝেতে, বিদ্যালয় মাঠে, পাশের ইউআরসি ভবন ব্যবহার করে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: কাইয়ুম মিয়া বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে জরাজীর্ণ ভবনের তিনটি কক্ষ সংস্কার করে দেয়া হয়। যদিও জরাজীর্ণ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার জন্য ২০২১ সালে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া এখানে ৮ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, কমপক্ষে আরও ২ জন শিক্ষক দেয়া ও শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হলে বিদ্যালয়ের পাঠদান ঠিকমত পরিচালনা করা যাবে।
যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বায়েজিদ খান বলেন, বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি, সেখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা খুবই কম। শ্রেণিকক্ষের সংকট সমাধানে পরিত্যক্ত ভবনের স্থলে নতুন করে ১১টি শ্রেণিকক্ষ করার জন্য গত জুলাই মাসে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।