যাত্রী পরিবহনের নামে প্রাইভেট কারের মাধ্যমে ফেন্সিডিল পাচারকালে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল রানা’কে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩; মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ।
সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত রাতে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রাইভেট কারের ভিতরে বস্তার মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৫৮১ বোতল ফেন্সিডিলসহ মাদক পাচার চক্রের মূলহোতা মোঃ সোহেল রানা (৩০), পিতা-মোঃ আলী হোসেন ভ‚ইয়া, সাং-সাহারপাড়, পো-পৌরকরা, থানা-সোনাইমুড়ি, জেলা-নোয়াখালীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের বাজার মূল্য প্রায় ১১,৬২,০০০/- (এগার লক্ষ বাষট্টি হাজার) টাকা।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম হতে নারায়ণগঞ্জে ফেন্সিডিল এর চালানটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধৃত সোহেল রানার সাথে নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যাক্তির চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী গতকাল ০২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ তারিখ ২০০০ ঘটিকার সময় রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা হতে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে ফেন্সিডিলের চালান আনার জন্য তার প্রাইভেট কারটি নিয়ে রওয়ানা করে। পরবর্তীতে কুমিল্লায় পৌঁছানোর পর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকার ডিলার এর কাছ থেকে ফেন্সিডিল নিয়ে সেগুলো বস্তার ভিতরে ভর্তি করে প্রাইভেট কারের ব্যাক ডালার মধ্যে বিশেষ কায়দায় লোড করে। এরপর সে নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যাক্তির নিকট উক্ত মাদক সরবরাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা ভাড়ায় একটি প্রাইভেট কার চালায়। উক্ত প্রাইভেট কারের মাধ্যমেই সে যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে থাকে। মাদক ব্যবসার কাজটিকে ঝামেলামুক্ত ভাবে পরিচালনা করার জন্য সে মূলত রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা হতে যাত্রী পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে থাকে এবং সেখান হতে মাদকের চালান নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তা পৌছে দিয়ে তার মাদক ব্যবসার কার্যক্রম চালাতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার হনুফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৪ সালে এসএসসি পাশ করে। এসএসসি পাশ করার পর সে রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার জন্য তেজগাঁও এলাকায় মেসে বসবাস শুরু করে। সেখান হতে সে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০ সালে ¯œাতক ডিগ্রী অর্জন করে। ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়ে জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে তার পরিচয় হয় এবং অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের বিষয়টি তাকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। ¯œাতক ডিগ্রী অর্জন করার পর কিছুদিন বেকার থাকায় ২০১১ সালে পরিবারের চাপে সে প্রবাসী হিসেবে দুবাই পাড়ি জমায়। দুবাই গিয়ে সে একটি শপিং মলে সেলস্ম্যান হিসেবে চাকুরী পায়। প্রবাস জীবনে সে সন্তুষ্ট হতে না পারায় এবং ইতোপূর্বে মাদক ব্যবসার প্রতি আকর্ষণ থাকায় সে ০৪ বছর পর ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে সে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা তাকে মাদক পরিবহনের কাজে যোগ দেয়ার কথা বলে। এরই প্রেক্ষিতে সে ২০১৬ সালে নোয়াখালীর একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রাইভেট কার চালানো শিখে দীর্ঘ দেড় বছর মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মাদক পরিবহনের কাজ করে।
এরপর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি হতে অধিক অর্থলাভের আশায় সে নিজেকে একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ২০১৭ সাল হতে যাত্রী পরিবহনের আড়ালে সে নিয়মিত মাদকের চালান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। সে বিগত ০৫ বছরে ৬০ টিরও অধিক চালান দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দিয়ে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে বলে জানায়। প্রতিটি চালানে সে ৫০০ হতে সর্বোচ্চ ২০০০ বোতল পর্যন্ত ফেন্সিডিল বহন করে আসছে। গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে গাঁজা ও ইয়াবার একাধিক চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয় বলে জানায়।
ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ০৩ অক্টোবর কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজার একটি চালান নিয়ে রাজধানী অভিমুখে আসার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন এলাকায় র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দলের হাতে সে ধৃত হয়। সেই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয় এবং উক্ত মামলায় সে ০৩ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে পুনঃরায় মাদক ব্যবসা শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার সাহারপাড় গ্রামের মোঃ আলী হোসেন ভ‚ইয়া’র ছেলে। ০৫ ভাই এর মধ্যে সে ২য়। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত এবং তার ০২ টি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে বিএএফ শাহীন কলেজ হতে ¯œাতক ডিগ্রী অর্জনের পর ২০১১ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ০৪ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে সে ড্রাইভিংকে তার দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বেছে নেয় এবং পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরে। মূলত সে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা হতে যাত্রী পরিবহন করত। বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের বেশিরভাগই স্বভাবত রাজধানী হতে দূরবর্তী জেলায় গমন করে থাকে বিধায় তার মাদকের চালান আনা-নেয়ার কাজটি সুবিধা করতে সে বিমানবন্দর হতে যাত্রী পরিবহনকে বেছে নেয়। এসকল অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।