কাঠালিয়া প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রী কলেজের চাকরিচ্যুত সাবেক অধ্যক্ষ আবুল বাশার বাদশা নানান ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি করার অপরাধে ২০২০ সালে চাকরি হারিয়ে, ২০২১ সালে দুর্নীতি না করার অঙ্গীকার করেও দুর্নীতির করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ বাদশার বিরুদ্ধে ।
২০১৭ সালের ১মে তিনি অধ্যক্ষ পদে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। নিয়োগ প্রক্রিয়া অচ্ছতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ টেম্পারিং এবং কলেজের ৫৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ঝালকাঠির আদালতে অধ্যক্ষের অবৈধ নিয়োগের ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। উক্ত মামলার বাদি পক্ষের সাথে সমঝোতা করে রক্ষা পেয়ে তার দুর্নীতির মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
২০১৬ সাল থেকে এনটিআরসিএ নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে বেসরকারী কলেজের শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ান পদের নিয়োগ প্রচলন হয়। কলেজের কৃষি শিক্ষার কোন বিভাগ নেই, নেই কোন ছাত্রও। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের এমপিওতে ভৌতিকভাবে পলাশ চন্দ্র শীল নামের একজনের ২২ হাজার টাকা স্কেল বিল পাশ হয়ে আসে। এর নেপথ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়।
এছাড়াও কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে ৩ বছর পূর্বে কর্মরত দেখিয়ে জানুয়ারী মাসেই ২২ হাজার টাকা স্কেলে আসাদুল নামের একজনের এমপিও হয়।
মহাবিদ্যালয় জনবল কাঠামোর বেশি কর্মচারী না থাকা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ৭ জনকে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ সম্পদ গাছ, – গ্রামের প্রায় তিন পুকুরের মাছ ও কলেজের জায়গায় দোকানঘর তুলে বরাদ্দ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাত করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ থেকে মাঠ ভরাট, শহীদ মিনার নির্মাণসহ কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ আসা লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষার সময় নকলের সুযোগ দেয়ার কথা বলে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন।
জানা যায় যে, আমুয়া কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালিন চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ও অবৈধ দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা। মরিচবুনিয়া নিবাসী মামুন নামের একজন বলেন, তাকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা। দোকানঘর বরাদ্দ না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়ে সে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাদশার পিছনে ঘুরেও তার টাকা ফেরত পাননি। বাদশা তার এলাকার পশ্চিম চেঁচরি নিবাসি জামাল খানের স্ত্রীকে তাদের বাড়ির সামনের মাদ্রাসায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাত আট বছর আগে ত্রিশ হাজার টাকা নেয়। বিভিন্ন সময়ে সে টাকা চেয়ে ফেরত না পেয়ে এখন তার টাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছে।
তার এহেন ঘৃণ্য অপকর্মের জন্য সে তার এলাকার মানুষের কাছে ভুয়া বাদশা, আঐ বাদশা, বেহায়া বাদশা ও জিনের বাদশা নামে পরিচিত।উপজেলার বানাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, বানাই স্কুলের সভাপতি থাকাকালিন সময় আবুল বাশার বাদশা স্কুলের গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, বিভিন্ন ফান্ডের টাকা এবং স্কুল উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করেছে, স্কুলের জমিতে দোকান তুলে টাকা আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে আবার এমপি হারুনের একটি ডিউ লেটার এনে প্রভাব খাঁটিয়ে স্কুলের সভাপতি হতে চায় বাদশা। তিনি আরো বলেন বাদশা ঐতিহ্যবাহী বানাই স্কুলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়া গিয়েছিল। বাদশার হাত থেকে মুক্ত হয়ে এই কয়েক বছরে স্কুল কিছুটা হলেও তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে যায় কিন্তু আবারও বাদশা যদি এই স্কুলের সভাপতি হয় তাহলে স্কুলটাকে সে ধ্বংস করে দিবে যা কোনোভাবে কাম্য নয়। স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারী এবং এলাকার সকল সচেতন নাগরিক সকলে বাদশার হাত থেকে মুক্তি চায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন আলম জানান, বাদশার দূর্নীতির কোন শেষ নেই যেখাইনে খোজ নিবেন সেখানেই তার দুর্নীতি পাবেন। মনেহয় দূর্নীতি করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল বাশার বাদশার কাছে জানার জন্য তার ব্যাবহারি ফোনে করলে তার ফোনটি বন্দ পাওয়া যায়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।