মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে প্রথম যে মসজিদ নির্মাণ করেন তার নাম মসজিদে কুবা। এটিকে বলা হয় ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ।
মুসলমানদের ইমানি চেতনায় উজ্জীবিত করার জন্য তখনকার সব রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজ মসজিদভিত্তিক সংঘটিত হতো। তাই মসজিদ মুসলমানদের নবজাগরণের প্রতীক। মুসলিম শাসকদের ইসলামি স্থাপত্বের মাঝে মসজিদের প্রতি আলাদা আগ্রহ লক্ষ করা যায়।
মুসলমানরা প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইরান, পারস্য, ইরাক মিসর ইত্যাদি নগরে ইসলাম প্রচার করার জন্য প্রবেশ করেন এবং উন্নত সভ্যতার সঙ্গে পরিচিত হন। তার ঐতিহাসিক নমুনা বিভিন্ন দেশে ইসলামি স্থাপত্বের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
উমাইয়া শাসন আমলে দামেস্কে প্রথম নকশার আদলে দামেস্ক মসজিদ স্থাপন করা হয়। এটিকে অনুসরণ করে পরে সুন্দর সুন্দর অনেক মসজিদ নির্মিত হয়েছে। তখনকার মুসলিম স্থাপত্বে গম্বুজ, মিনার খিলান, বুরুজ মিহরাব, মোজাইক ও মার্বেল নকশার ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
মুসলিম স্থাপত্ব শৈলীতে এসব রীতি ধীরে ধীরে মুসলমানদের সক্রিয় রীতিতে দাঁড়িয়ে যায়। যা দেখে সহজেই চেনা যায় এটি মুসলিম স্থাপত্ব। যা অন্যান্য ধর্মের স্থাপত্ব থেকে আলাদা। এমন একটি ইসলামি স্থাপত্বের ঐতিহাসিক নিদশর্ন কুসুম্বা মসজিদ। পাঁচ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি রয়েছে বিধায় স্থানীয় লোকের কাছে এটি পাঁচ টাকার মসজিদ নামে পরিচিত।
নওগাঁ জেলার কুসুম্বা গ্রামে প্রাচীন এ মসজিদের অবস্থান।
১৫৫৮ (খ্রি.) আফগান শাসক গিয়াস উদ্দীন বাহাদুর শাহের আমলে জনৈক সোলাইমান এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট প্রস্থ ৪২ ফুট এবং ওপরে দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের চার কোণে খাঁজ কাটা ৪টি স্তম্ভ ও প্রবেশদ্বারে সুদর্শন তিনটি খিলান রয়েছে। মসজিদের ইটের দেওয়ালের উভয় পাশ পাথর দ্বারা আবৃত।
মসজিদের গায়ে খুদাই করে বিভিন্ন লতা পাতার কারুকার্য এর সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে। দেখে যেন মনে হয় শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি।
মিনারের এক পাশে একটি উঁচু আসন রয়েছে। ধারণা করা হয় তৎকালীন বিচারকরা এখানে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। মসজিদের কার্নিশ বিভিন্ন কারুকার্যে সজ্জিত। মসিজদের সম্মুখ ভাগে প্রায় ৭৭ বিঘা জমির ওপর রয়েছে বিশাল জলাশয় এবং দৃষ্টিনন্দন ঘাট। যা দর্শানর্থীদের মুগ্ধ করে। দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক এসে এখানে গোসল করেন।
মসজিদের এক পাশে রান্নার জন্য সিড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সিডের দুই সারিতে ৩০টি চুলা রয়েছে। অনেকেই মান্নত করে এখানে রান্নাবান্না করে লোকজনকে খাওয়ান। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এটি সংস্কার করে।
প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসেন এ মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে এবং তাদের এটি বিমোহিত করে থাকে। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এ মসজিদ মুসলমানদের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। এ মসজিদের অলংকরণ, মনোমুগ্ধ করা ডিজাইন মুসলমানদের উন্নত রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ।
লেখক : শাহ শরীফ,পরিচালক, কিশোর কথা আইডিয়াল মাদ্রাসা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।