শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই মানুষের সহজাত। এই সেরা হওয়ার লড়াইয়ে আমিত্ব চলে এলেই বিবাদের বিষবাষ্প বুদবুদ ছড়াতে থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে সম্পর্কের বাঁক মোড় নেয় শত্রুতায়। তিক্ততা বাড়তে বাড়তে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায় একটা পর্যায়ে এসে। সাকিব-তামিমের সম্পর্ক মুখ দেখাদেখি বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে না গেলেও স্বস্তির জায়গায় নেই।
একই দলে খেলা ও একই ড্রেসিংরুমে থাকার কারণে চাইলেও একে অন্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেন না। তবে দেশসেরা এ দুই তারকার মধ্যে যে কথা বন্ধ, তা ক্রিকেটপাড়ার সবার জানা। বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াতে এ নিয়ে রিপোর্টও হয়েছে। বিসিবি কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে-বুঝেও এড়িয়ে গেছেন। এই দলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও ছিলেন। দেরিতে হলেও বোর্ড সভাপতি নিজে থেকে স্বীকার করেছেন, ভালো নেই জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ। ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব-তামিম একে অন্যের সঙ্গে যে কথা বলেন না এবং তা নিয়ে যে দলের মধ্যে প্রচণ্ড অস্বস্তি রয়েছে, সেটা জানিয়েছেন তিনি। বিসিবি সভাপতি হিসেবে পাপন ড্রেসিংরুমের এই দলাদলির ব্যাপারটি সামনে আনায় গুমোট পরিবেশ হালকা হলেও হতে পারে।
ক্রিকেটে ব্যক্তিগত রেষারেষি নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু দলেই বড় তারকাদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে। ভারতের বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার মধ্যেও সম্পর্কের টানাপোড়েনের মুখরোচক খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও এসেছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলেও ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাতের খবর বেরিয়েছে বহুবার। কিন্তু সেটা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের মতো দলাদলিতে রূপ নিতে দেখা যায়নি খুব একটা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যক্তিত্বের সংঘাত যেভাবে দলাদলিতে রূপ নিয়েছে, তা অন্তত দেখা যায় না অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড দলে। জাতীয় দলে মেরূকরণ এতটাই বেড়েছে, সাকিব-তামিমের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছেন অন্যরাও। নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে কারও কারও অবস্থা নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করার মতো। বিভাজন এড়াতে অনুশীলন, ম্যাচ খেলা আর খাওয়া-দাওয়ার বাইরে হোটেল রুমে নিজেদের একপ্রকার বন্দি করে রাখেন ওই নোম্যান্স ল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। গত কয়েক বছরে এই বিভাজন দুটি ব্লক তৈরি করে দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণে আলাদা অধিনায়ক রাখায়। জাতীয় দলসংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, তামিম ইকবাল ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ায় তাঁর ব্লকে থাকার চেষ্টা করেন কিছু খেলোয়াড়। সাকিব টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক হওয়ায় সেদিকও ক্রিকেটারদের একাংশ ঝুঁকে রয়েছেন বলে অভিযোগ। বিসিবি সভাপতি পাপনের কাছে এই বিভাজন আর মেরূকরণের যে রিপোর্ট রয়েছে, তা পরিস্কার হয়ে গেছে সাক্ষাৎকারে বলা কথায়।
গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যক্তিত্বের সংঘাত চরমে রূপ নিয়েছিল। সে সময়ের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হককে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিলেন একজন সিনিয়র ক্রিকেটার। যে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুমিনুল। শেষ পর্যন্ত নিজে ব্যর্থ হয়ে নেতৃত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এই লড়াই জাতীয় দলের ম্যানেজার নিয়োগ পর্যায়েও গড়িয়েছে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের লবিংয়ে নাফিস ইকবালকে ম্যানেজার রাখতে বাধ্য হচ্ছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। যেটা সাকিবের আবার পছন্দ নয় বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে ক্রিকেটপাড়ায়।ব্যক্তিত্বের এই সংঘাত ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই। একজনের বিদেশি লিগে খেলার জন্য এনওসি পাওয়া, বিভিন্ন সিরিজ থেকে ছুটি নেওয়া, চিকিৎসা নিতে বিজনেস ক্লাসে করে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে অন্যজন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।