ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যখন অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হলে তার মানে দাঁড়ায় এই আবেদন আশ্রয়ের জন্য আর বিবেচ্য হবে না৷ যদিও আবেদন গ্রহণ করা না হলে আপীল করতে পারে আবেদনকারী৷
বাতিল, ডাবলিন নীতি কিংবা ভিত্তিহীণ- আশ্রয় আবেদন গ্রহণ না করার বেলায় কর্তৃপক্ষ এসকল পরিভাষাই সাধারণত ব্যবহার করে৷ তবে যে পরিভাষাই ব্যহার করা হোক না কেন, আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলা হলে আবেদনকারীর উচিত এ বিষয়ে একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলা৷
আবেদন অগ্রহণযোগ্য- এ কথার মানে কী?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী, আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলার আগে কর্তৃপক্ষ আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তি শরণার্থী বা সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন পাওয়ার যোগ্য কি না এসকল বিষয় পরীক্ষা নীরিক্ষার প্রয়োজন মনে করে না৷ কেননা কর্তৃপক্ষ ধরে নেয়, আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তি ইউরোপের অন্য আরেকটি দেশ হয়ে এসেছে যেখানে তিনি আবেদন করতে পারতেন৷
তাছাড়া আরো যে সকল কারণে একজন আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে তা হলো:
যদি ইউরোপের অন্য কোনো দেশ আশ্রয়প্রার্থীকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে
ইউরোপের বাইরের কোনো দেশে যদি এর মধ্যেই আবেদনকারীকে আশ্রয় দিয়ে থাকে এবং তাকে ফেরত নিতে চায়
ইউরোপের বাইরের কোনো দেশ আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ দেশ বলে প্রতীয়মান হলে
আশ্রয়ের আবেদন নতুন নয় অর্থাৎ তার আগেও আশ্রয়ের আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু এ সময়ে আবেদনকারীর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ যেমন আবেদন গ্রহণযোগ্য করতে নতুন করে কোনো প্রমাণাদি উত্থাপন করা যাচ্ছে না৷
আবেদনকারীর পরিবারের সদস্য আশ্রয়ের জন্য আলাদাভাবে আবেদন করেছেন এমন হলে
এই পাঁচটি প্রেক্ষাপটের বাইরে আর কোনো ধারায় আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলার সুযোগ নেই৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর বাইরেও বেশ কিছু কারণ দেখিয়ে ইউরোপের কিছু দেশ আশ্রয়ের আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে থাকে৷ এর মধ্যে রয়েছে,
আশ্রয় আবেদন জমা দেওয়ার পর শুনানিতে আবেদনকারী উপস্থিত ছিলেন না কিংবা আবেদনকারী যে আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান করছিলেন তা ত্যাগ করেছেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি
আশ্রয়ের জন্য কোনো ব্যক্তি এমন সময়ে আবেদন করেছেন যখন তাকে ইউরোপের দেশ থেকে বহিষ্কার করার কথা রয়েছে৷ কিংবা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে কোনো ব্যক্তি নতুন করে আবার আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন
এদিকে ডাবলিন আইন অনুযায়ী, জার্মানি বা ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদন অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে ইউরোপে প্রবেশের পর প্রথম যেই দেশে এসেছিলেন সেখানে স্থানান্তর করে থাকে৷ যেমন কেউ যদি প্রথমে ইটালি এসে তারপর জার্মানিতে আশ্রয় আবেদন করেন তাহলে তাকে ইটালিতে অর্থাৎ প্রথম যে দেশটিতে এসেছিলেন সেখানে ফেরত পাঠানো হয়৷
আর ইটালি যদি আবেনকারীকে সুরক্ষা প্রদান করে তাহলে জার্মান কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নেবে অর্থাৎ আবেদনকারী ইতিমধ্যে সুরক্ষা সুবিধা পেয়েছেন বিবেচনায় তার আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলা হবে৷ জার্মানিতে এ দুই প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ের আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়৷
এদিকে যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়৷ দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য কখন কোন পরিস্থিতিতে হয়ে থাকে তার বিস্তারিত রয়েছে এই লিংকে- righttoremain.org.uk
তৃতীয় কোনো নিরাপদ দেশ বলতে কী বুঝায়?
এর উত্তর জানতে আমাদের বুঝতে হবে আশ্রয়ের আবেদন কোন দেশ থেকে গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য হচ্ছে৷ ইউরোপের আইন অনুযায়ী তৃতীয় কোনো দেশকে তখনই নিরাপদ বুঝানো হয় যদি আবেদনকারী ব্যক্তির সেই দেশে প্রসিকিউশনের মুখোমুখি হতে হবে না৷
এক্ষেত্রে অবশ্য ইউরোপের দেশগুলো শর্ত সাপেক্ষে নিজেদের মতো তৃতীয় নিরাপদ দেশের তালিকা প্রণয়ন করতে পারে৷ যদি কোনো কারো আবেদন গ্রহণ করা না হরে সে এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে৷
যেমন গত বছর গ্রিস প্রতিবেশী তুরস্ককে তৃতীয় নিরাপদ দেশ বলে ঘোষণা করে সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং সোমালিয়া থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য ৷
তবে বাস্তবতা হলো, গ্রিস এ দেশগুলো থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিবেশি তুরস্কে ফেরত পাঠিয়েছে তা কিন্তু নয়৷ কারণ, গত মার্চ ২০২০ থেকে তুরস্ক গ্রিস থেকে কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত নিচ্ছে না৷
নিজ দেশের নিরাপদ কীভাবে বিবেচিত হয়?
আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে নিজ দেশের পরিস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তি যে দেশটিতে আবেদন করেছেন সে দেশটি নির্ধারণ করে থাকে তার নিজ দেশ নিরাপদ কি না৷
এসকল ক্ষেত্রে কোনো দেশে সশস্ত্র সংঘাত নেই এবং আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তির নিজ দেশে প্রসিকিউশনের বা নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই এসকল বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়৷ তবে এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সাধারণ নির্দেশনা থাকলেও, জোটের দেশগুলো নিজের মতো করে নিরোপদ দেশের তালিকা তৈরি করার এখতিয়ার রয়েছে৷
আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া ছাড়াই আশ্রয় আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইউরোপের দেশগুলো৷ যেমন কোনে ব্যক্তি যদি তৃতীয় কোন দেশ হয়ে গ্রিসে পৌঁছে সেক্ষেত্রে গ্রিস কর্তৃপক্ষ শুধৃমাত্র তৃতীয় ঐ দেশটির পরিস্থিত বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে৷ এক্ষেত্রে আশ্রয় পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর যে নিজস্ব যুক্তি তা বিবেচনায় নাও নিতে পারে৷
আপিল করার সুযোগ আছে
আবেদন অগ্রহণযোগ্য হলে আবেদনকারী এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন৷ আইনি সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে যে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো, এসব ক্ষেত্রে আপিল করার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে৷
আবেদন গ্রহণ করা না হলে এর বিরুদ্ধে আপিল করতে ইটালিতে ৩০ দিন সময় পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ১৫ দিনও হতে পারে৷ এসময় আপীলকারী ব্যক্তি বাসস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন কি না তা আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে৷
এদিকে জার্মানিত এমন আপিলের মেয়াদ সাত দিন৷ আর গ্রিসে এই মেয়াদ ২০ দিন ৷ তবে দেশটির আজিয়ান দ্বীপে এই মেয়াদ ১০ দিন বলে জানা গেছে৷
আটক হতে পারেন?
তবে আবেদন গ্রহণ করা হয়নি এমন সিদ্ধান্তের পরই যে আবেদনকারীকে আটক করা হবে তেমন কোনো বিধান নেই৷ তবে আবেদন অগ্রহণযোগ্য ঘোষনার পর এ বিষয়ক আপিল যদি বাতিল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তিকে অনিয়মিত বিবেচনায় নিয়ে আটক করতে পারে কর্তৃপক্ষ৷
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।