মোঃ আজগার আলী,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকা সস্ত্বেও হঠাৎ করে সাতক্ষীরায় চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ঘটছে চুরির ঘটনা। শহরে-গ্রামে সর্বত্র চুরির ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িতে চুরি, অফিসে চুরি, দোকানে চুরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা লেগেই আছে।

 

নগদ টাকা, সোনার গহনা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, শাড়ি-কাপড়, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল, পোষা পাখি, চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য, মাছ, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রকার জিনিষপত্র চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুরির সাথে জড়িতরা ব্যবহার করছে অভিনব কৌশল ও প্রযুক্তি। ফলে জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। হঠাৎ করেই চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।

 

সূত্রমতে, ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে দিনে ও রাতে চুরি করছে চোর চক্র। প্রায় প্রতিদিন জেলার কোন না কোন এলাকায় প্রতারণার পাশাপাশি চুরির ঘটনা ঘটছে। সূত্রমতে, গত ২৮ আগস্ট ২০২২ তারিখে শহরের সুলতানপুর উপ-সচিব আ ন ম তরিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। ২৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখ রাত ১০টার পরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বড়খামার গ্রামে আব্দুল গফ্ফার কারিকরের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে।

 

এ দিন রাতের যেকোন সময় চোর চক্র বিল্ডিংয়ের নিচের ক্লপসিকল গেটের তালা ভেঙে দ্বিতীয় তলায় উঠে আব্দুল গফ্ফারের ঘরে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের তালা ভেঙে ১৫ লক্ষ ৫০হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। ঐ চুরি যাওয়া টাকা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে ২১শে জুন সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকার মোহাম্মদিয়া টেলিকমে টিনের চাল কেটে রশি বেয়ে মোবাইল ফোনের দোকানে ঢুকে চোর চক্র ৩৭টি মোবাইল ও নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুরি করে। মোহাম্মদিয়া টেলিকমে চুরির ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের ৭২ ঘন্টার অভিযানে জয়পুরহাট জেলার পাচবিবি থানার সীমান্তবর্তী ধরঞ্চি গ্রাম থেকে ৩৫টি মোবাইলসহ চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নূর ইসলামকে আটক করতে সক্ষম হয় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।

 

এ দিকে মোহাম্মদিয়া টেলিকমে চুরির ঘটনায় জয়পুরহাট থেকে আসামী সহ ৩৫ টি মোবাইল উদ্ধারের ঘটনার পর প্রেস ব্রিফিং করে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং এ সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম এর পক্ষে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার সজিব খান সাংবাদিকদের জানান সাতক্ষীরার সকল পর্যায়ের জনসাধারণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বক্ষণ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

 

জেলায় চুরি, ডাকাতি সহ আইন শৃঙ্খলা নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ করছে। গত ৭ই জুলাই শুক্রবার ভোররাতে শহরের সঙ্গীতা মোড়ে ইসলামী ব্যাংকের নিচ তলায় আর কে টেলিকমে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকান থেকে সংঘবদ্ধ চোরেরা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার ১৫৪ পিচ বিভিন্ন ব্রান্ডের স্মার্টফোন ও ২০টি বাটুন মোবাইল ফোন এবং দোকানে থাকা নগদ ২ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দোকান মালিক গোবিন্দ চন্দ্র সাধু।

 

এ সব চুরির ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা চোর চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকার পরেও যেনো চুরি থামছেনা। আর কে টেলিকম থেকে চুরির ঘটনায় চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। এদিকে, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নে একই রাতে দুই বাড়ি ও তিন দোকানে দুঃসাহসিক চুরি ও দস্যুবৃত্তির ঘটনা ঘটেছে। চোরে ও দস্যুরা নগদ টাকাসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।

 

শনিবার (১৫ই জুলাই) দিবাগত গভীর রাতে নাকতাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার নাকতাড়া গ্রামের মৃত নাঈম উদ্দিন সানার ছেলে ফজলুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিল্ডিং এর কাঠের জানালার লক ভেঙে দস্যুরা ঘরের ভিতরে ঢুকলে আমরা জেগে গেলে আমাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয় এবং বাক্স ও শোকেসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ৪০হাজার টাকা, একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, প্রায় ৫ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নেয়।

 

পরে চাবি নিয়ে পাশের দোকানের সিন্দুক ভেঙে ৬ লক্ষাধিক নগদ টাকা নিয়ে গেছে। রাত আড়াইটার দিকে নাকতাড়া বাজারের পশ্চিম দিকে মৃত চিত্ত দাসের ছেলে পবিত্র দাসের বাড়ির দোতলা হতে লক্ষাধিক টাকার মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় বলে পবিত্র মন্ডল জানান। এরপর পবিত্র মন্ডলের বাড়ির সামনে সুভাষ গাইনের ছেলে উজ্জ্বল গাইনের দোকানের তালা ভেঙ্গে ২৫ কার্টুন ডার্বি সিগারেট, বেনসন সিগারেট ও নগদ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে উজ্জ্বল গাইন জানান।

 

স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে চোর ও দস্যুরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক দীপঙ্কর বাছাড় দিপু জানান, এলাকায় একই সাথে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার বারী স্টোর থেকে বিকাশ ও নগদ লেনদেনের প্রায় ৩লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে চোর চক্র। ১৬ই জুলাই রবিবার সন্ধা ৭টার দিকে ঐ চুরির ঘটনা ঘটে।

 

সূত্রে জানা গেছে, মিল বাজারে অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা ইসহাক আলীর মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে তালতলা-মাগুরা গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে রুহুল বারী ফটোস্ট্যাট ব্যবসার পাশাপাশি বিকাশ ও নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন করে থাকেন। বারী স্টোরের মালিক রুহুল বারী প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার সন্ধায় দোকানে থাইগ্লাসে তালা লাগিয়ে ও শাটার নামিয়ে মিলবাজার জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যান।

 

দোকানে ফিরে এসে দেখেন তালা ভেঙে ক্যাশ বাক্স থেকে বিকাশ ও নগদ লেনদেনের নগদ ২লাখ টাকা নিয়ে গেছে চোর চক্র। এ ছাড়া একটি স্মার্ট ফোনও তারা নিয়ে যায়। ঐ ফোনে বিকাশ ও নগদ একাউন্টে আরো ১লাখ টাকা আছে বলে দোকান মালিক জানান। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত রুহুল বারী সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অতি সম্প্রতি তালা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে।

 

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি এবং বেকারত্বের কারণে চুরির মাত্রা যেনো বেড়ে গেছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি বাজারে বা মার্কেটে নাইটগার্ড দিয়ে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করেও চুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এসব চুরির ঘটনার পাশাপাশি জেলার অন্যান্ন উপজেলাগুলোতেও বিচ্ছিন্ন ভাবে চুরির ঘটনা ঘটছে। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে দিনে-দুপুরেও প্রতারণার মাধ্যমে চোর চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

সম্প্রতি সাতক্ষীরায় চোরের উপদ্রব দ্বিগুন বেড়ে গেছে। একটি সময় দেখা গেছে সাতক্ষীরা সদর থানা সংলগ্ন শহরের মুনজিতপুর ও সরকারি কলেজ এলাকায় বিশেষ করে কাটিয়া সরকারপাড়ায় বড় বড় বিল্ডিংয়ের গ্রিলকেটে দুঃসাহসিক চুরি হতো। চুরি ঠেকাতে সরকারপাড়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাতে এলাকা পাহারা দেওয়ার জন্য ‘সজাগ’ নামে গ্রামরক্ষা কমিটি গঠন করে প্রতি রাতে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঐ কমিটির সদস্যরা রাত জেগে এলাকা পাহারা দিয়ে থাকেন। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।