ডা. আজাদ খান,ব্যুরো চিফ ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জামালপুর জেলা শাখার উদ্যোগে শনিবার (১০ আগস্ট ২০২৪) সকালে সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে) ফুলবাড়ীয়া, পিটিআই গেইট জামালপুর বাপার অস্থায়ী কার্যালয়ের মিটিং রুমে একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ সভাপতি (বাপা) জামালপুর।

সভার সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ এনামুল হক, সাধারন সম্পাদক বাপা জামালপুর।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বাপার কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. আসিফ নজরুল, সৈয়দা রেজুয়ানা হাসান, শারমিন মুর্শিদ এবং ফরিদা আক্তার এর অন্তর্ভুক্তি উপলক্ষে তিনি গভীর আনন্দ প্রকাশ করেন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় আমরা গর্বিত।
এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড. মোহাম্মদ ইউনুসের যোগদান আমাদের জন্য বিশেষ গৌরবের বিষয়, আমরা তাঁদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং তাঁদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশাবাদী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জামালপুর জেলায় সবসময়ই জেলার পরিবেশ রক্ষায় এবং উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করছি এবং তাঁদের সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।
এর সাথে আমরা জামালপুর জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আমাদের অঞ্চলের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমাদের এলাকায় যে সকল সমস্যা বিদ্যমান তার সমাধানে নিম্নলিখিত দাবীগুলি উপস্থাপন করছি-
ড্রেজিং এর অব্যবস্থাপনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবাহ নিয়মিতভাবে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান ড্রেজিং কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনার কারণে নদীর প্রবাহ কমে গেছে ও বন্যা সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনই দ্রুত ও কার্যকর ড্রেজিং কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।

নদীর প্রবাহ নির্ধারণ ও সংযোগ, ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবাহ সঠিকভাবে নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। যমুনা নদীর সাথে উৎসমূখ সংযোগ স্থাপন করে নদীর পানি প্রবাহ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে।

অবৈধ দখল, নাওভাঙ্গা চর ও অন্যান্য নদীসংলগ্ন ভূমি অবৈধভাবে দখল করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এই ভূমি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় সহায়ক।

সীমানা পিলার স্থাপন, নদীর সীমানা নির্ধারণ ও ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য নদী সংলগ্ন এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি নদীর সীমানা ও স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বালু উত্তোলন, ব্রহ্মপুত্র নদী ও অন্যান্য নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে কড়া আইন প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং সিস্টেম কার্যকর করা জরুরি।
ডাম্পিং স্টেশন- জামালপুর পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন নদী সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত, যা নদীর পানি ও পরিবেশকে দূষিত করছে। নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব স্থানে ডাম্পিং স্টেশনটি স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ দূষণ নিয়ন্ত্রণ- নদ দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দূষণকারী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনগণকে সচেতন করা জরুরি।
বৃক্ষরোপণ- নদীপাড়ে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত যাতে মাটির ক্ষয় রোধ করা যায় এবং নদীর তীর সংরক্ষিত থাকে।
পাড় সংরক্ষণ- নদীপাড়ের ভূমি সুরক্ষিত রাখতে ও স্থিতিশীল রাখতে উপযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। জলাশয়, খাল, বিল,পুকুর ভরাট রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

আমরা আশা করি, উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করবেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপার উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক এমএইচ মজনু মোল্লা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গির সেলিম এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আমির উদ্দিন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তরঙ্গ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শামিমা খান, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন ই-প্রেস ক্লাব এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাপা জামালপুর, সাংবাদিক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম আজাদ খান, এমদাদুল হক (সহ সাংগঠনিক সম্পাদক) বাপা জামালপুর, প্রাক্তন কাউন্সিলর জামালপুর পৌরসভা শামিমা বেগম রুবী এবং জিগাতলা অপরূপা বহুমুখী মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ছাইদা বেগম শ্যামা।

সভায় বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাপার করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বর্তমান সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানান এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাপার ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় বাপা জামালপুর শাখার উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উপস্থিত সবাই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার করেন।

সভায় বক্তৃতাকালে শামিমা খান বলেন, “আমাদের সকলের উচিত শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সমাজের উন্নয়নে একসাথে কাজ করা।” ডা. মো. শফিকুল ইসলাম আজাদ খান বলেন, “বাপা সবসময়ই পরিবেশ রক্ষায় এবং সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাবে।”

সভা শেষে সভাপতিত্বকারী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।