জলাবদ্ধ এলাকা থেকে ফিরে এস এম তাজাম্মুলঃ গেলো কয়েকদিনের এক টানা ভারী বর্ষণে মনিরামপুর পৌরসভা সহ উপজেলার ৫০টি গ্রামের ১লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড কৃত ১১২ মিঃমিঃ এই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ এক দুর্বিষহ দিন পার করছে।
মনিরামপুরের অন্যতম জলাবদ্ধ নিচু এলাকা ভবদাহ ছাড়াও হরিদাসকাঠি, হোগলাডাংগা, পাচবাড়িয়া, পাচকাঠিয়া, পোড়াডাংগা, পদ্মনাথথপুর, হাজিরহাট, সুন্দলীর একাংশে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
পানিবন্ধি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ভুক্তভোগীরা। শুধু মানুষ না গৃহপালিত পশু পাখিও নাকাল হয়ে পড়েছে এই জলাবদ্ধতায়।
কৃষকের আবাদি জমি,মাছের ঘের,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু পানি আর পানি।সরেজমিনে দেখাযায়,হাজিরহাট টু নেহালপুর সড়কটি সম্প্রতি সময়ে নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে।এই সড়কের হাজিরহাট পার্শে কোমর সমান পানি,নতুন সড়কে জলাবদ্ধতার জন্য রাস্তার ক্ষতিসাধন হতে পারে বলে ধারনা করছেন স্থানীয় জনগন ও সড়ক নির্মান কর্তৃপক্ষ।
জলাবদ্ধ এলাকার ফসলি জমি,পুকুর,ঘের ভেসে যাওয়াতে কৃষকেরা আছেন দুস্বচিন্তায়।জমির ধান,শাকসবজী,সবই পানির নিচে।স্থানীয়রা এর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখন চিন্তায় বিভোর।
স্থানীয় কৃষক ও ঘের ব্যাবসায়ী নারায়ন মল্লিক সরেজমিনে জানান,আমি ও আমার ছেলে চাষবাস করি, মাঠে বড় বড় ৩টা ঘেরও করেছিলাম।মাছ ছেড়ে,পরিচর্যা করে,ধানী জমিতে ধানও বপন করেছিলাম।কয়দিন ধরে লাগাতার পানিতে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।ঘের ভেসে এমনকি পুকুর ভেসে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।আমার বাড়িতেও পানি,বাশের সাকো দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। গরু,ছাগল নিয়ে আছি আরেক বিপদে।বাড়ির ছেলে মেয়েরা চালচল করডে পারছেনা,স্কুল কলেজে যেতে পারছেনা।সব মিলিয়ে আমরা হতাশা ও মানবেতর জীবনযাপন করছি।
সংবাদ সংগ্রহে গেলে গনমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে, টানা বৃষ্টির প্রভবে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্ধি মানুষ ও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের সঠিক হিসাব নিরুপন করে তাদের ক্ষতির দিক বিবেচনা করতে দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রানলয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে জলাবদ্ধতার কারনে চিরচেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।শিক্ষকেরা যেতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানে, নিতে পারছেনা ক্লাস। জলাবদ্ধ এলাকার প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।পানিতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা দেখেও এখনো পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা সতর্কবার্তা প্রদান করেনি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাচবাড়িয়া পাচকাঠিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোথাও হাটুসমান আবার কোথা কোমর সমান পানি বেধে আছে।মুক্তেশ্বরী ডিগ্রী কলেজেও একই অবস্থা। হাজিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজার অর্ধেক তলিয়ে গেছে পানির নিচে।
জলাবদ্ধতায় পাঠদান ব্যাপারে কথা হয়,মুক্তেশ্বরী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ্য রমেন্দ্রনাথ মন্ডল ও পাচবাড়িয়া পাচকাঠিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক আসীশ কুমার বিশ্বাসের সাথে।তারা জানান,বর্তমানে জলাবদ্ধতায় খুবই দূর্বিষহ দিন পার করছে প্রতিটি মানুষ।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার কোন ব্যাবস্থা নাই।অফিস রুম,ক্লাস রুমের ভিতর পানিতে টৈই-টম্বুর।
আমরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি, জলাবদ্ধতার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত চিঠি করে যাতে সাময়িক পাঠদান বন্ধ করা যায় সেই মর্মে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান সভাপতি বরাবর আবেদন দিবো।
এ ব্যাপারে মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোনকলে সাড়া দেননি। একাধিক স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে,বিরাট এলাকা পানির নিচে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন,কোন সেচ্চাসেবী সংগঠন এমনকি মিডিয়া কর্মীরাও এ পর্যন্ত উল্লেখিত জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যায়নি। তবে জলাবদ্ধতা কেটে গেলে স্বাভাবিক জীবনে চলাফেরা ও অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে বলে ধারনা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।