বুধবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় আকবর অয়েল মিলের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। সোনিয়া খাতুন সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়নের বড় আইলচারা গ্রামের ছয়ফল মন্ডলের মেয়ে। তার ১৩ মাস বয়সী ছেলেসন্তান রয়েছে। সোনিয়ার স্বামী বিপুল হোসেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার বিশু মন্ডলের ছেলে।
বিপুল শহরের বাইপাস এলাকায় মোটরসাইকেল মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই বছর আগে সোনিয়ার সঙ্গে বিপুলের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। মাঝেমধ্যে সোনিয়াকে মারধর করত বিপুল। মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে ঈদে বাবার বাড়িতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সোনিয়াকে মারপিট করে স্বামী। মৃত অবস্থায় বুধবার সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোনিয়ার বাবা ছয়ফল মন্ডল বলেন, বিয়ের পর থেকেই কারণে অকারণে সোনিয়ার ওপর নির্যাতন চালাত বিপুল। আমরা তাদের বাড়িতে যেতে পারতাম না। আমরা গরিব মানুষ বলে বিপুল ঘৃণা করত। সোনিয়া মাঝেমাঝে আমাদের বাড়িতে এলেও বিপুল আসত না।
তিনি আরও বলেন, সোনিয়া এবার আমাদের বাড়িতে ঈদ করার জন্য আসতে চেয়েছিল। এজন্য সোনিয়ার ওপর নির্যাতন করা হচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরে। বুধবার সকালে আমরা খবর পাই সোনিয়া মারা গেছে। সকালে চাচাতো ভাই আশিক ইসলামকে পাঠানো মোবাইল মেসেজে সোনিয়া লিখেছেন, ‘ভাইয়া বাবাকে বল আমাকে নিয়ে যেতে। মা আর ছোট মাকে আসতে বল। আমি খুব কষ্টে আছি, আমাকে মেরেছে।
তুই কাউকে বলিস না, ফোন দিস না, তাহলে আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেবে।’ আশিক ইসলাম বলেন, সোনিয়ার বিয়ের পর থেকে খুব নির্যাতন করত বিপুল। কারণে অকারণে মারপিট করত। বুধবার সকালে সোনিয়া আমাকে একটি মেসেজ দিয়েছিল। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে থাকার কারণে মেসেজটি দেখতে পাইনি। পরে তার মৃত্যু কথা শুনি। তাকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। বিপুলসহ তার মা, বাবা ও বোন হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আমরা তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। বিপুল হোসেন বলেন, সোনিয়া বাবার বাড়িতে ঈদ করার জন্য যেতে চেয়েছিল।
কিন্তু আমার মা-বাবা রাজি হননি। এ নিয়ে দুদিন ধরে সংসারে অশান্তি চলছিল। মঙ্গলবার রাতে আমি তাকে মারধর করেছি। অভিমান করে বুধবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, সকালে গৃহবধূকে হাসপাতালে আনেন স্বজনরা। তারা জানান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে জানা যাবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।