ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের একটি মন্তব্য কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে ঢাকা-বেইজিং রীতিমতো বিব্রত।
 
 
যদিও চীনা রাষ্ট্রদূত ভাষাগত জটিলতার কথা জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি এখনো বুঝতে চাইছে।
 
বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার চীন। বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীন সহায়তা দিয়ে আসছে। দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনীতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কও ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কোয়াড জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে হঠাৎ করেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে বাংলাদেশ যে মোটেও খুশি নয়, সেটা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
 
চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য দেওয়ার পরেই বাংলাদেশ বিষয়টি ভালো করে বুঝতে চেয়েছে। সে কারণে চীনের পাঁচ লাখ টিকা উপহার উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তখন চীনা রাষ্ট্রদূতের কোয়াড নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চান। চীনা রাষ্ট্রদূত তখন ভাষাগত দুর্বলতার কথা জানান। একই সঙ্গে ওই বক্তব্য ‘আউট অব কনটেক্সট’ হয়েছে বলেও জানান। রাষ্ট্রদূত ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন।
 
কোয়াডে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব নেই: কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনবিরোধী জোট কোয়াডে যোগদানের প্রস্তাব বাংলাদেশকে কখনই দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলাপে দেশটি বিভিন্ন সময়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আইপিএস) যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।
 
গতবছর মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান ঢাকা সফরে এসে আইপিএসয়ে যোগদানের বিষয়ে খুব খোলামেলা জানিয়েছিলেন, আইপিএসয়ে বাংলাদেশকে পেতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তবে কোয়াডে যোগদান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো প্রস্তাব দেয়নি। একই সঙ্গে এই জোটে যেতে বাংলাদেশেরও কখনো কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না। তারপরেও চীনা রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বক্তব্য ভাবিয়ে তুলছে বাংলাদেশকে।
 
 
নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র: কোয়াডে যোগদান নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের পর এ বিষয়ে সতর্ক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সেটা খুব খোলামেলাভাবেই জানিয়েছেন।
 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি বলেছেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নিজেদের মতো করে পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রয়েছে। আমরা এই অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
 
একই সঙ্গে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে বলেও জানান তিনি।
 
যেভাবে কোয়াডের যাত্রা: মুক্ত ও অবাধ ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় কোয়াড্রালেটারাল সিকিউিরিটি ডায়ালগ (কোয়াড)। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ২০০৭ সাল থেকে কোয়াড গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে এই জোট আত্মপ্রকাশ করে। এতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। চীনের বিরুদ্ধে এটা কৌশলগত জোট বলে মনে করে বেইজিং।
 
কোয়াড জোট গঠনের পর আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড খুব বেশি ছিল না। তবে গতবছর অক্টোবরে টোকিওতে জোটভুক্ত চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেন। এরপর কোয়াড আবার নতুন করে আলোচনার টেবিলে উঠে আসে।
 
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া জবাব: চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কোয়াড নিয়ে বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ড. মোমেনের বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভও ফুটে উঠেছে। লি জিমিংয়ের বক্তব্যের একদিন পরে কড়া প্রতিক্রিয়ায় ড. মোমেন বলেন, কোয়াড নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে বলেছেন। এই জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ কোন জোটে যাবে না যাবে সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের একান্তই নিজস্ব। স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধরণ করে।
 
গত ১০ মে ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ- ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট কোয়াডে বাংলাদেশ যোগ দিলে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নষ্ট হবে। এই বক্তব্যের পর ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়।