নাহিদ হাসান | সোস্যাল ডেমোক্র্যাট: সম্প্রতি ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ঘটনা নিয়ে, সাধারণ মানুষের ভিতর যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারই পরিপেক্ষিতে সোস্যাল মিডিয়া সড়বড়, উঠে আসছেে, ভিডিও, ধ্বংসের লীলাখেলা, নির্যাতিত মানুষের ছবি, এবং প্রভাবশালীদের নিপিড়নের ধারাবাহিকতা।
কিন্তু হঠাৎ ফেসবুক এবং টুইটার তাদের ট্রাম্স এন্ড কন্ডিশন দেখিয়ে হয়রানি করছে সোস্যাল ওর্য়ার্কারদের “একাউন্ট, রিসক্রেক্টেড করে ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাসপেন্ডসহ করা হচ্ছে শেষমেশ ডিজেবল।
২২/০৮/২০১৩ তারিখেচ নুরুননাহার সাত্তারের এক প্রতিবেদন যা “ডি ডাব্লিউ” প্রকাশিত হুবহু তুলে ধরা হলঃ
ইসলাম বিদ্বেষ সম্পর্কে বহু খবরই প্রকাশ পায় না……
ইংল্যান্ডে ইসলাম বিদ্বেষী তৎপরতার শিকার যাঁরা হয়েছেন তাঁরা ‘টেল মামা’ নামক একটি সংস্থাকে জানাতে পারেন৷ তুলে ধরতে পারেন তাঁদের অবস্থার কথা৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশে ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷
‘‘আমাকে বেশ কয়েকবার আক্রমণ করা হয়, মারা হয় ঘুসি৷ এমনকি মুখে থুথু ছিটিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলেও দেয়া হয়৷” এভাবেই বলছিলেন একজন মহিলা, যিনি নিজের পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক৷ ‘‘শুধু তাই নয়, আমাকে নৃশংসভাবে মাথায় আঘাত করা হয় এবং আমার স্বামী ও আমার ছোট ছেলের চোখের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়৷ তখন আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম৷”
ব্রিটিশ সাহায্যসংস্থা ‘টেল মামা’-র ইন্টারনেট পাতার ভিডিও ফিল্মে এভাবেই বর্ণনা করেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা মাথায় হিজাব পরা একজন নারী৷ ‘টেল মামা’, মানে ‘মাকে বলুন’ মনে রাখার মতো একটা নাম৷ এই সংস্থাকে মায়ের মতো বিশ্বাস করে ইসলাম বিদ্বেষী সব ঘটনার কথা খুলে বলা যায়৷ সহজ করে বলতে গেলে, মুসলিম হওয়ার কারণে যাঁরা রাস্তাঘাটে বা ইন্টারনেটে আক্রমণের শিকার হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করার জন্যই এই সংস্থাটি তৈরি করা হয়েছে৷ তবে যাঁরা ইন্টারনেটে ইসলাম বিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হন, তাঁরা অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেরাই এসএমএস-এর মাধ্যমে সেসব ঘটনার কথা জানিয়ে থাকেন৷
‘টেল মামা’ সংস্থাটি সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কাজ করছে ২০১২ সাল থেকে৷ এটি গড়ে তোলা হয়েছে আন্তর্ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের সহায়তায়৷ এই সংস্থার পরিচালক ফিয়াজ মুঘল জানান, গত ১৮ মাসে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে সংঘটিত ইসলাম বিরোধী ১২০০টি ঘটনার কথা তারা রেজিস্ট্রি করেছে৷ ফিয়াজ মুঘল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সমীক্ষায় একটি ব্যাপার খুবই স্পষ্ট যে এ ধরণের ঘটনা দিনদিনই বাড়ছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এ বছরের ২২শে মে একজন ব্রিটিশ সৈন্যকে দু’জন ইসলামপন্থি নৃশংসভাবে হত্যা করার পর, সেখানার মসজিদে এ ধরনের আক্রমণের ঘটনা ৮গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল৷
ফেসবুক এবং টুইটারে ইসলাম বিরোধী মন্তব্য
ফিয়াজ মুঘল বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী ঘটনা রাস্তায় তেমন ঘটে না৷ তাই শুধু তা দিয়ে বিচার করলে হবে না৷ ইন্টারনেটের হিসেব দেখতে হবে৷ তিনি বলেন, মুসলমান মহিলারা যাঁরা হিজাব পরেন বা মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলেন, তাঁদের ফেসবুক, টুইটার বা অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আক্রমণ বা অপমান করা হয়৷ মুঘল বলেন, এমনকি তাঁদের হত্যা করার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও আছে৷ ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নানা রকম ভয়াবহ কাজ হচ্ছে৷ ইসলাম বিদ্বেষীরা অনলাইনে খুবই সংঘবদ্ধভাবে গুছিয়ে কাজ করেন যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি তা বুঝতে না পারে৷ এঁদের বেশিরভাগই হলেন চরম দক্ষিণপন্থি, মুসলমান বিদ্বেষী এবং ইসলামকে যাঁরা ঘৃণা করেন বা একেবারেই পছন্দ করেন না৷ এই যএমন, ব্রিটেনের মতো দেশেও চরম দক্ষিণপন্থি নেটওয়ার্ক ‘ইংলিশ ডিফেন্স লিগ’ ইন্টারনেটে ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত৷
তবে শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, ফ্রান্সেও মুসলিমদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, জানালেন ‘প্যান-ইউরোপিয়ান প্রোগ্রাম ফর ইসলামোফোবি ইন ইউরোপ’ বা ইসলাম বিদ্বেষ বিষয়ক আন্তঃইউরোপীয় সংগঠনের কর্মকর্তা এলসা রে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত জুন মাসে একজন অন্তঃসত্ত্বা মুসলমান নারীর ওপর দু’জন পুরুষ যৌন নিগ্রহ করে৷ এরপর অবশ্য সেখানে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত মুসলিম তরুণরা বিক্ষোভ করেছিল৷
এলসা রে এবং তাঁর সংগঠন ফ্রান্স এবং ইউরোপের রাজনীতিকদেরই এর জন্য দায়ী করে৷ এলসার সাফ কথা: তাঁরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং ইসলাম বিরোধী তৎপরতার ঘটনাকে মেনে নিচ্ছেন বলেই মনে হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই, ফ্রান্সে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তা জনগণের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ইউরোপে এহেন তৎপরতার সঠিক সংখ্যা নেই
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ইসলাম বিদ্বেষের ঘটনা ঘটছে৷ তবে এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি৷ বলেন মৌলিক অধিকার বিষয়ক একটি ইউরোপীয় এজেন্সির কাটিয়া অ্যান্ড্রুস৷ তিনি ডয়চে ভেলকে বলেন, তাঁর সংস্থা বহুদিন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে ইসলাম বিদ্বেষী ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের জন্য৷
জার্মানিতেও ইসলাম বিরোধী তৎপরতার কোনো হিসেব রাখা হয় না এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সংস্থাকেও আলাদাভাবে জানানো হয় না৷ সম্প্রতি জার্মনিতে অপরাধ তৎপরতা বিষয়ক এক কর্মকর্তা ভিলভ্রিড আলবিসহাউসেন মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য একটি বিশেষ নিবন্ধন খোলার আহ্বান জানান৷
ইন্টারনেটে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন
যাঁরা ইন্টারনেটে বিভিন্ন আক্রমণাত্বক ঘটনার শিকার হন, তাঁদের সবাই সেসব ঘটনা অন্যদের জানান না৷ আনুমানিক ৬০ শতাংশ মানুষ কোনো সাহায্য সংস্থা বা পুলিশকে জানায় না তাঁদের এ ধরণের অভিজ্ঞতার কথা, এ অনুমান ‘টেল মামা’ সংস্থার৷ অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের মধ্যে ইউরোপীয় সংস্থার পরিচালিত একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ মুসলমানই তাঁদের ওপর আক্রমণের ঘটনা সম্পর্কে নিরব থাকেন৷ আর সেজন্যই এর সঠিক হিসেব রাখা সম্ভন হয় না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়েনের মৌলিক অধিকার বিষয়ক সংস্থার কাটিয়া অ্যান্ড্রুস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘টেল মামা’-র এক ভিডিও ফিল্মে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুসলিম নারী আবেদন করেছেন, ‘‘পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিও না৷ আমি বাচ্চা বয়সে এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম, তাই আমি চাই না যে, আমার সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক৷”
ইসলাম বিদ্বেষের ঘটনা রাস্তায় বা ইন্টারনেটে, যেখানেই ঘটুক না কেন ‘টেল মামা’ সংস্থাটি পুলিশকে তা জানিয়ে দেয়৷ ব্রিটেনের পুলিশ বিভাগ এ ব্যাপারে জানে, বলেন সংস্থার পরিচালক ফিয়াজ মুঘল৷ তবে ইন্টারনেটে করা অপরাধের বিচার বা তদন্ত কোনোটাই সেভাবে করা হয় না৷ বেশিরভাগই শুধু প্রতীকী বা দেখানোর জন্য৷ সেটাও আবার শুধুমাত্র যদি কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি আগ্রহ দেখায় – যা পুরোপুরি ভুল, বলেন ফিয়াজ৷ কারণ যাঁরা টুইটারে অপমানিত হন, তাঁরা সাধারণ ইউজার, তাঁরা কিন্তু কোনো ফুটবল তারকা নন!
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।