টানা নবম দিনের মতো গাজা উপত্যকায় বর্বরোচিত হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। দখলদারদের গোলা ও মিসাইল গুড়িয়ে দিয়েছে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর।
আশ্রয়হীন হয়ে গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে ঠাঁই নিয়েছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ৫৮টি স্কুলে ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা।
সেখানে জরুরি সেবা, খাদ্য, পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের জন্য ত্রাণসহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আর এমন পরিস্থিতিতেও ফিলিস্তিনের জন্য পাঠানো ত্রাণসহায়তা আটকে দিয়েছে ইসরাইল।
মর্টার হামলায় নিজেদের এক সেনার সামান্য আহত হওয়ার অযুহাতে গাজায় প্রবেশের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পাঠানো ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর আর ঢুকতে পারছে না।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ত্রাণ নেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে কারেম আবু সালেম সীমান্ত খুলে দিয়েছিল ইসরায়েলি কো–অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ ইন দ্য টেরিটোরিজ (কোগাট)। এরপর সেখান দিয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই মর্টার হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা সামান্য আহত হওয়ার কথা জানিয়ে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এক বিবৃতিতে কোগাট বলেছেন, ‘কারেম সালেম ক্রসিংয়ের দিকে মর্টার বোমা হামলার পর বাকি ট্রাকগুলোর প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এমন খবরে অসহায় ফিলিস্তিনিদের উৎকণ্ঠা ওষ্ঠাগত। কারণ কারেম আবু সালেম সীমান্ত দিয়ে ফিলিস্তিনে বেশিরভাগ পণ্য আসে।
এ বিষয়ে নরওয়েজিয়ান রিফুজি কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মিডিয়া উপদেষ্টা কার্ল স্কেমব্রি আলজাজিরাকে বলের, কারেম আবু সালেম ও বেইত হ্যানুন ক্রসিং বন্ধ রাখা হলে গাজার ‘দম বন্ধ হওয়ার’ অবস্থা হবে। এদে জরুরি মানবিক সহায়তা ব্যাহত হবে। সীমান্তগুলো খোলা রাখা খুবই দরকার।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪৫০টি ভবন ধ্বংস বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
চলমান সংকটের মধ্যে মা হয়েছেন গাজার সুহের আল-আরবিদ নামের এক নারী। ইসরাইলি হামলায় তিনি আজ বাস্তুচ্যুত।
নবজাতকের দিয়ে চেয়ে অঝোরে কেঁদে আলজাজিরাকে আর্তি জানালেন, ‘আমাদের খাবার, পোশাক, লেপকাঁথা ও দুধ প্রয়োজন। কিছুই নেই আমাদের। আমি আমার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছি। কিন্তু এরপরও সে ক্ষুধার্ত থাকে। ফলে সে ক্ষুধায় কান্না করে।’
উম্মে জামাল নামে আরো এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী বলেন, ‘বোমাবর্ষণের দুঃস্মৃতি ভোলাতে শিশুদের জন্য খেলনা ও অন্যান্য জিনিসপত্র প্রয়োজন। কিন্তু ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না।’
ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৬১টি শিশু ও ৩৬ জন নারী রয়েছেন। আহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।