ধারণা করা হয়, মিসরেই প্রথম কলমের আবিষ্কার ঘটে। সভ্যতার একেবারে শুরুর দিকে মানুষ পাথরের দেওয়ালে বিভিন্ন ফলমূলের রস দিয়ে আঁকিবুঁকি করত। এভাবে কেটে গেছে কয়েক শ বছর। এরপর মানুষ পোড়ামাটি দিয়ে দাগ দিতে শেখে। এই পোড়ামাটি থেকেই ধীরে ধীরে কলমের অভাব বোধ করতে থাকে তারা। মিসরের মানুষ কাঠির ডগায় ধাতব শলাকা রেখে দাগ দিতে শুরু করে। এরপর কলম নিয়ে বিস্তর কাজ শুরু করে গ্রিকরা। তারা হাতির দাঁতের সাহায্যে এক প্রকার কলম বানায়, যার নাম ছিল স্টাইলাস। এই স্টাইলাস থেকেই এসেছে স্টাইল। আমরা একেকজন একেকভাবে লিখতে পছন্দ করি, সেটাই স্টাইল।
স্টাইলাস কলম ব্যবহার করত গ্রিক ও রোমানরা। তখন এই দুই জাতির লোকজন ছিল বেশ যুদ্ধবাজ। কারোর ওপর রাগ হলে তারা সামনে যা পেত তা দিয়েই সেই মানুষটাকে আঘাত দিত। অনেক সময় পকেটের কলম দিয়েও তারা একে অপরকে আঘাত করতে শুরু করে। তাই স্টাইলাস কলম সর্বসাধারণের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারও এই কলম ব্যবহার করতেন। প্রচলিত আছে, একবার তিনি ঘাতকদের প্রতিহত করতে তরবারি হিসেবে স্টাইলাস কলম ব্যবহার করেন। স্টাইলাসের পর আসে খাগের কলম। খাগ এক প্রকার উদ্ভিদ। এক পাশ কেটে কালি ভরে এই কলম দিয়ে লেখালিখি করা যেত। কিন্তু একবার কালি ভরে খুব বেশি পৃষ্ঠা লেখা যেত না খাগের কলম দিয়ে। এই কলমের সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশের কঞ্চির কলমের ব্যবহার দেখা যায়। বাঁশের কঞ্চি অনেকটা খাগের মতোই। কঞ্চির মাঝের ফাঁকা অংশে কালি ভরে এই কলম দিয়ে লেখালিখি করা যেত। এরপর মানুষ ব্যবহার করতে শুরু করে পাখির পালকের কলম। খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর পর থেকে মানুষ পাখির পালকের কলম ব্যবহার শুরু করে। একে বলা হতো কুইল। ধনী বা রাজা-বাদশাহরা ময়ূরের পালক দিয়ে কলম বানিয়ে তা দিয়ে লেখার কাজ করত। তবে কুইলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এই কলম বানাতে খুব দক্ষ ও অভিজ্ঞ হাতের দরকার পড়ত।
পাখির পালকের কলমের যুগ শেষ হওয়ার পর নানা ধরনের কলম মানুষ ব্যবহার করতে থাকে। তবে সব কলমেই কিছু না কিছু সমস্যা লেগেই থাকত। আধুনিক বলপয়েন্ট কলম আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয় আমেরিকার জন লাউডকে। তিনি কলমের নিবের মাথায় এক ধরনের বল লাগিয়ে দেন, যা অনবরত ঘুরবে আর কলমে থাকা কালি বাইরে নিয়ে আসবে; কিন্তু এই কলমের কালি বেশি পাতলা হলে নিব দিয়ে আপনা-আপনি বাইরে বের হয়ে যেত, আর ঘন হলে কালি কাগজে এবড়োখেবড়োভাবে লেগে যেত।
১৯৩৮ সালে লেসলো-বিরো ভ্রাতৃদ্বয় বলপেনের আগের সব ত্রুটি সরিয়ে আরো আধুনিক করে তৈরি করলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাদের সব কিছু ফেলে আর্জেন্টিনায় পাড়ি দিতে হয়। সেখানে তারা একটি কলমের কারখানা দেন ১৯৪৩ সালে। এক আমেরিকান ভদ্রলোক বিরোর কলম আর্জেন্টিনা থেকে আমেরিকা নিয়ে আসেন এবং বাকি সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করেন। এই কাজে সফলও হন তিনি। তবে বলপয়েন্ট কলমের পেটেন্ট হিসেবে নাম আছে বিরো ভ্রাতৃদ্বয়ের। ১৯৪৩ সালের ১০ জুন তাঁরা ইউরোপে তাঁদের আবিষ্কারের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে বলে এই দিনটিকে বিশ্ব বলপয়েন্ট কলম দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আমরা বলপয়েন্ট কলম হিসেবে যে কলম চিনি, ইংল্যান্ডের মানুষজন সেই কলমকে এখনো বিরোর কলম হিসেবেই চেনে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।