মাহমুদুল হাসান, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সাপাহারে তানেস আলী নামে শতবর্ষ বয়সী এক বৃদ্ধ পিতার ৮০ শতক জমি কৌশলে নিজ নামে রেজিস্ট্রি এবং আরও ১ শতক জমি বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য রাখা টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জবই গ্রামে।
গত ১১ এপ্রিল তানেস আলীকে করোনা টিকা দিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে সাপাহার রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে ৮০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় তাঁর দুই ছেলে মোস্তাকিম ও মোকলেছুর।
তানেস আলীর মেয়ে মরিয়ম জানান, আমরা ২ ভাই ৪ বোন। মা মারা যায় প্রায় ১৩ বছর আগে। মায়ের মৃত্যুর পর বার্ধক্যের ভারে নয়ে পড়েন বাবা। এমতবস্তায় বাবার দেখাশুনা করার জন্য আমি স্বামী সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসি। বাবার নামীয় ৮০ শতক জমি চাষাবাদ করে ভরণপোষণ খরচ যোগাতাম। পরবর্তীতে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বাবা। চিকিৎসা খচর যোগাতে তাঁর নামীয় এক শতক জায়গা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সব ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে জায়গা বিক্রি করার পর ৪৫ হাজার টাকা জমা রাখা হয় বড়ো ভাই মোস্তাকিমের কাছে। এ পর্যন্ত বাবার চিকিৎসার জন্য খরচ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। বাকি ৪০ হাজার টাকা জামা থাকে বড়ো মোস্তাকিমের কাছে। বর্তমানের ওই জমানো টাকা থেকে বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা চাইতে গেলে দিবো দিচ্ছি বলে তালবাহানা শুরু করছে বড়ো মোস্তাকিম। বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে, তাতেও কোন লাভ হয়নি।
এরই মধ্যে জানতে পারি বাবার ভরণপোষণের জন্য রাখা ৮০ শতক জমি বড়ো ভাই মোস্তাকিম ও ছোট ভাই মোকলেছুরের যোগসাজশে কৌশলে নিজ নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি গত ১১ এপ্রিল বাবাকে করোনা টিকা দিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে ৮০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় দুই ভাই।
মরিয়ম আরও বলে, আমার স্বামীর কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে, আয় রোজগার করতে পারেনা তার উপর বাবাও অসুস্থ তাঁরও মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাবার জমিটুকু চাষাবাদ করে কোন রকম সংসার চালাতাম। বর্তমানে সেটাও ভাইয়েরা লিখে নিয়েছে। আমি একা একটা মহিলা মানুষ সংসার খরচ চিকিৎসা খরচ চালাবো কি করে। তাছাড়া অন্যায় ভাবে বাবার সম্পত্তি দুই ভাই লিখে নিয়ে ৪ বোনকে বঞ্চিত করেছে। আমি এর ন্যায্য বিচার দাবী করছি।
অভিযুক্ত বড়ো ছেলে মোস্তাকিমের সাথে এবিষেয় কথা বলার জন্য গেলে তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোন ব্যবহার না করায় ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব্য হয়নি। তবে কথা হয় ছোট ছেলে মোকলেছুরের সাথে, তিনি ৮০ শতক জমি দুই ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রির কথা স্বীকার করে বলেন, বাবা আমাদের কষ্টের কথা শুনে দুই ভাইকে ৮০ শতক জমি লিখে দিয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২ লাখ টাকাও হবেনা। কিন্তু এরআগে দুই বোনকে ২ শতক করে ৪ শতক বাড়ির জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। আরও কিছু জমি বাবার নামে রয়েছে সেখান থেকে অন্য দুই বোনকে দিতে পারবে। জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে মোকলেছুর বলেন, টাকা বড়ো ভাইয়ের কাছে জমা আছে এবং বাবার সমস্ত চিকিৎসা খরচ সেখান থেকেই করা হচ্ছে।
দলিল লেখক আবু মুসা জমি রেজিস্ট্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ১১ এপ্রিল আমাদের সেরেস্তা থেকে উক্ত জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
এবিষয়ে শিরন্টি ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল বাকি বলেন, টাকার বিষয়ে আমি জানি, তাকে চিকিৎসার জন্য টাকা ফেরত দিতে বললে দিবো দিচ্ছি করে কিন্তু দেয়না। আর জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার কথা আমি শুনেছি।
সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেকুর রহমান সরকারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে, তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নাই। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।