জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইলঃ
বিগত দিনে টাঙ্গাইল সহ উত্তরাঞ্চলে দেখা মিলতো বিভিন্ন ধরনের পেঁচার। ওইসব বিচিত্র পেঁচা নিয়ে কত কবি যে কত কবিতা লিখেছেন, তার খবর কে রাখে? কালের বিবর্তনে সময়ের পরিধিতে খাবার, বাসযোগ্য পরিবেশের অভাব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ বহুমুখী কারণে টাঙ্গাইলের পাহাড়ী অঞ্চলে তেমন দেখা মেলেনা প্যাঁচার। অতীতে ‘হুতোম পেঁচা’র ভয় দেখিয়ে শিশুদের ঘুম পাড়ানো হতো। এখন বিলুপ্তপ্রায় ওইসব পেঁচা এ নিয়ে আর কবিদের কবিতা লিখতেও দেখা যায়না বা শিশুদের ‘হুতোম পেঁচা’র ভয়ও আর দেখানো হয়না। বিচিত্র বহু ধরনের পেঁচার মধ্যে বিরল প্রজাতির একটির নাম ‘লক্ষী পেঁচা’। রোববার টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘি বাজারের পরিত্যক্ত এলজিইডি অফিসের বড় বড় গাছের ডালে প্যাঁচাদের দেখা মেলে।
সরেজমিনে জানা যায়, সাগরদিঘি বাজারের পরিত্যক্ত এলজিইডি অফিসের চারপাশে উঁচু গাছপালা থাকায় পাখিদের বসবাসের জন্য নিরাপদ এক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এলজিইডি অফিসের বড় বড় গাছের বিভিন্ন ডালে প্যাঁচাদের বসবাস দেখে আসছে এলাকাবাসী। ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত থাকায় প্যাঁচাদের জন্য এক অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে পরিত্যক্ত এই অফিসটি।
উইকিপিডিয়া সুত্রে জানান যায়, পেঁচা বা পেচক এক প্রকার নিশাচর শিকারী পাখি। স্ট্রিজিফর্মিস বর্গভূক্ত এই পাখিটির এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০টি প্রজাতি টিকে আছে। বেশীরভাগ পেঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ইঁদুর এবং কীটপতঙ্গ শিকার করে, তবে কিছু প্রজাতি মাছও ধরে। পেঁচা উপর থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরতে অভ্যস্ত। শিকার করা ও শিকার ধরে রাখতে এরা বাঁকানো ঠোঁট বা চঞ্চু এবং নখর ব্যবহার করে ঢঢ পেঁচা। এখনও পর্যন্ত যেসব পেঁচার দেখা পাওয়া যায় তাদেরকে দুটো গোত্রে ভাগ করা হয়েছে। যেমন সাধারণ পেঁচা বা স্ট্রিগিডি এবং লক্ষ্মী পেঁচা বা টাইটোনিডি। সকল প্রজাতির বিস্তৃতি কুমের, গ্রীনল্যান্ড এবং কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই পেঁচা দেখা যায়।
বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির (মতান্তরে ৮ গুণে ১৫ প্রজাতি) পেঁচা আছে যার মধ্যে ২৫টি স্থায়ী এবং ২টি পরিযায়ী। পেঁচা মূলত নিশাচর। এরা গাছের কোটর, পাহাড় বা পাথরের গর্ত বা পুরনো দালানে থাকে।
বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচার ডাক বিভিন্ন রকম। ডাকের ভিন্নতা অনুযায়ী বাংলায় বিভিন্ন পেঁচার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- হুতুম পেঁচা, ভুতুম পেঁচা,লক্ষ্মীপেঁচা, খুড়–লে পেঁচা, কুপোখ, নিমপোখ ইত্যাদি।
পেঁচার মাথা বড়, মুখমন্ডল চ্যাপ্টা এবং মাথার সম্মুখদিকে চোখ। পেঁচার চোখের চারিদিকে সাধারণত বৃত্তাকারে পালক সাজানো থাকে যাকে ফেসিয়াল ডিস্ক বলে। এদের অক্ষিগোলক সামনের দিকে অগ্রসর থাকায় এরা দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী।
পেঁচার দূরবদ্ধ দৃষ্টি থাকায় এরা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে অবস্থিত কোন বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। এরা কোন শিকারকে চঞ্চু এবং নখরে অবস্থিত বিশেষ এক ধরনের পালক দ্বারা অনুভব করতে পারে। পেঁচা তার মাথাকে একদিকে ১৩৫ ডিগ্রী কোণে ঘোরাতে পারে। তাই দুই দিক মিলে এদের দৃষ্টিসীমা ২৭০ ডিগ্রী। ফলে এরা নিজের কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে দেখতে পায়।
পেঁচার শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর। শুধু শব্দ দ্বারা চালিত হয়ে এরা নিরেট অন্ধকারে শিকার ধরতে পারে। সামান্য মাথা ঘুরালে প্যাঁচা অনুচ্চ শব্দ যেমন ইঁদুরের শষ্যদানা চিবানোর আওয়াজও শুনতে পায়। এর কারণ হচ্ছে মাথার গড়ন রূপান্তরিত হওয়ার জন্য পেঁচার দুই কানে সামান্য আগে পরে শব্দ পৌঁছায়। এরা বাতাসে উড়ার সময় কোনো রকম শব্দ করে না। পেঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক শিকারের জন্য শ্রবনে সহায়তা করে। অনেক প্রজাতির পেঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক অসমভাবে সাজানো থাকে যাতে শিকারের অবস্থান নির্ণয় করা সহজ হয়।
টাঙ্গাইল সরকারি সা’দত কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সানোয়ার হোসেন জানান, পেঁচা নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার থাকলেও বাস্তবে এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার, গাছগাছালি কমে যাওয়া, মানষের নির্মম আচরণ এসব নানা কারনে পেঁচা পাখি অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
সাগরদিঘী বন বিট অফিসের কর্মকর্তা সিদ্দিক মিয়া বলেন, পেঁচা একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। এ পাখিটি সচারাচর দেখা যায় না। সাগরদিঘীর পুরনো এলজিইডি অফিসে ঘন জঙ্গল বা বড় বড় গাছ থাকায় এরা এখানে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।