আষাঢ়ের টানা বর্ষণ আর পদ্মা নদীর উজান ভাগের ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ির উঠোন, ঘরের ভেতরসহ চার দিকেই পানি আর পানি। গ্রামগঞ্জে গ্রীষ্ম থেকে বর্ষার মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়ে। আর বন্যার সময় এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় উপদ্রপ আরও বেড়ে যায়। এসময় লোকালয়ে প্রবেশ করে সাপগুলো। জেলাটিতে অন্তত ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়া এলাগুলোতে বিষাক্ত সাপ বেড়েছে। এরই মধ্যে উত্তরপাকা ও সেতারা পাড়ায় তিনজনকে সাপে কামড়েছে। উত্তরপাকা এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, গত ৫ দিন আমি বাড়ির উঠোনে কাজ করছিলাম, এসময় হঠাৎ করে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয়। আমি অসুস্থ হয়ে যাই, এলাকার একজন পরিচিত ডাক্তার আমাকে ইনজেকশন দেন, সঙ্গে কিছু ঔষধও দেন।

আপাতত সুস্থ আছি। সেতারা পাড়া এলাকার আছিয়া বেগম (৪৫) বলেন, গত পরশু আমাদের বাড়ির রান্না ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় লাকড়ি (রান্নার কাজে ব্যবহৃত খড়ি) আরেকটু উঁচু জায়গায় রাখছিলাম। হঠাৎ হাতটা ভারি হতে লাগল আর খুব ব্যথা করতে লাগলো। পরে লাকড়ির ভেতর থেকে হাতটা বের করে দেখি, আমাকে সাপে কামড় দিয়েছে। পরে আমার এলাকার একজন কবিরাজের কাছে গিয়ে গাছামু (ভেষজ) ওষুধ খেয়ে ভালো আছি। পাকা এলাকারই দশ রশিয়ায় গত চার দিনে ১২টি কয়েক প্রজাতির সাপ মেরেছেন এলাকাবাসী। ওই এলাকার সাজেমান নামের এক যুবক বলেন, আমাদের খেলার মাঠে বন্যার পানি থাকায় এলাকার ছেলেরা একসাথে হয়ে একটি উঁচু জায়গাতে বসেছিলাম, হঠাৎ দেখি দুইটা সাপ আমাদের দিকে তেড়ে আসছে।

পরে আমরা সাপ দুটোকে মেরে ফেললাম। এমন দিন আছে, সাপের ভয়ে রাতে ঘুমাতেও পারি না। দুর্লভপুর এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি গত ৩০ বছর ধরে বাড়ি ভাঙছি আর বন্যার কবলে পড়ছি। বন্যার সময় গর্তগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সাপেরা আমাদের ঘর ছাড়া হয়ে পড়ে। তখন তারা নিরাপদ জায়গার খোঁজে লোকালয়ে প্রবেশ করে।এসময়ে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপের দেখা পাওয়া যায়। যে সাপগুলো টেলিভিশনে (টিভি) দেখায়, সেগুলোও এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ৪টি, শিবগঞ্জ উপজেলার ৩টি, মোট ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ও আলাতুলি ইউনিয়ন। বিশেষ করে চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। শনিবার (২১ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল শরীফ জানান, বর্তমানে পদ্মায় ২২ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ও মহানন্দাতে ২০ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার পানি আছে।