আতাউর রহমান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় ১ জন মুসলমান ও ১৩ জন হিন্দু নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।
যে সব মানুষের তাজা রক্তে বাংলার স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল, যাদের আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে আজকের স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই মহান শহীদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটুকুও পায়নি।
স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হানাদার পাকবাহিনী গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়েছিল ১৪ জনকে এবং ধরে নিয়ে গিয়েছিল ছাবেদ আলী নামের একজন যোদ্ধার বাবাকে। যিনি আর কোনোদিন ফিরে আসেননি। সেদিন শালীহর গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হয়। গ্রামে ঢুকেই পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে এক মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাসকে।
শালীহর গ্রামের ১৪ জনকে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি।পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে তৎকালীন ডা: বাদল চন্দ্র কর ঘরবাড়ি সহ পিতাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পাক বাহিনীর ভয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে ছিলেন।
পরবর্তীতে ডা: বাদল চন্দ্র কর তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আমৃত্যু কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।যুদ্ধকালীন সময়ে টেকেরঘাট সাব সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বর্গীয় ডা : বাদল চন্দ্র কর এর ছেলে অমল কান্তি কর বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুদীর্ঘ এ সময়ে সরকারের পালা বদল হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় শহীদ হওয়া ১৪ পরিবার আজও স্বীকৃতি পায়নি।সম্প্রতি শহীদ পরিবারের পক্ষে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এর নাতি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর।
জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এর নাতি অমল কান্তি কর বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে একাত্তরের ২১ আগস্ট সেদিন আমার (পিতামহ) দাদা এবং তার আপন বড় ভাই মোহিনী মোহন কর শহীদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাই নি। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন সেদিন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শহীদ হওয়া সবগুলো পরিবারকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেয়ার আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।
শহীদ পরিবারের সদস্য গীরিবালা বলেন, পাঞ্জাবিরা আমার শ্বশুর কামিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকা শ্বশুর তারিনীকান্ত বিশ্বাসকে চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করে। আমাদের বয়সও এখন প্রায় শেষ। কিন্তু মৃত্যুর আগে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেলে অন্তত মনের দিক থেকে শান্তি পেতাম শহীদ জ্ঞানেন্দ্র করের ছেলের বউ শীবানী কর বলেন, আমার শশুরকে হত্যা পরে আমাদের ঘরবাড়িও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। পাক হানাদারদের ভয়ে সেদিন আমরা দেশান্তরি হয়েছিলাম।১৯৭১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ট্রেন শালীহর গ্রামে এসে থেমে যায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ওই শহীদ পরিবারগুলোর চূড়ান্ত তালিকা প্রনয়ন করে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। কারণ স্বীকৃতিটা তাদের প্রাপ্য।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।