শিশু, অভিভাবক ও ভ্রমণ পিপাসুদের নজর কাড়তে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বঙ্গবন্ধু শিশু পার্কটি দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের পৌনে দুই একর জায়গায় স্থাপিত পার্কের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে একটু বিনোদনের জন্য ছুটির দিনগুলোতে অভিভাবকরা ঘরবন্দি শিশুদের নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবেন এই বিনোদন কেন্দ্রে। এর সুবিধা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরাও ভোগ করতে পারবে। পার্কের প্রধান ফটকের সামনে থাকবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ভেতরে রোপণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আগামী এক মাসের মধ্যে পার্কটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেলদুয়ার উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদত কবীর যোগদানের পর নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। শিশুদের জন্য একটি পার্কের পরিকল্পনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় জায়গা নির্ধারণ ও বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক নামকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী ঢাকা থেকে স্থপতি রুস্তম আলী অপুকে এনে একটি সুন্দর ডিজাইন করেন। ২০২০ সালের ৪ জুলাই টাঙ্গাইলের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম পার্কটির কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ইউএনওর আকস্মিকভাবে বদলি হওয়ায় শিশু পার্কটির বাস্তবায়ন আটকে যায়।

এরপর বাস্তবে রূপ দিলেন বর্তমান ইউএনও মাহমুদা আক্তার। উপজেলার জন্য এমন উদ্যোগে প্রশংসিতও হয়েছেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে পার্কটি বাস্তবায়নে টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু সার্বিক সহযোগিতা করছেন। উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের সাথে পার্কটি নির্মাণ হওয়ায় যাতায়াত সুবিধা পাবে সব দিকের মানুষ। উপজেলার সাধারণ মানুষের ধারণা, শিশুদের এবার স্বস্তি মিলবে দৃষ্টিনন্দন এই শিশু পার্কে। পার্কটির ভেতরে থাকবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সুবিশাল হাতি, বাঘ, ঘোড়া, গরুর গাড়ি, হরিণের প্রতিকৃতি, যা সহজেই শিশুদের আকৃষ্ট করবে। এছাড়াও শিশুদের জন্য খেলনাগুলোও সাজানো হচ্ছে।

রকমারি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন এখানে প্রচুর দর্শকের আগমন ঘটবে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।শিশু পার্কটি দৃষ্টিনন্দন করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন ঢাকা ইন্টেরিয়রের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রুস্তম আলী অপু (স্থপতি অপু)। তার তৈরি ডিজাইনে পার্কটির সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়েছে। অপু উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের দেওজান গ্রামের বাসিন্দা। নিজের এলাকা এবং বঙ্গবন্ধুর নামে পার্কটি হওয়াতে অনেক সময় নিয়ে ডিজাইনটি করেছেন। গেটটির সৌন্দর্য আর প্রবেশ পথটি পার্কটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করেছে। তিন দিকের লেক পার্কটির সৌন্দর্যকে আরেক ধাপ বাড়িয়েছে। ভেতরের চলার পথ বেঁয়ে প্রতিটি ইভেন্টের কাছে যাওয়া আরও সহজ করেছে। ডিজাইনের পেছনে লম্বা সময় দিতে হয়েছে অপুকে।

তার পুরো টিম নিয়ে অসংখ্যবার সরেজমিনে আসতে হয়েছে। স্থপতি অপু বলেন, নিজের এলাকার সাবেক ইউএনও শাহাদত কবীরের সাথে বিষয়টি নিয়ে আমার কথা হয়েছিল। পরিকল্পনা হয়েছিল কিভাবে পার্কটির সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। সেই সূত্র ধরে বর্তমান ইউএনওর সাথে কাজটি করার সুযোগ হয়। অনেক সময় নিয়ে কাজটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বর্তমান ইউএনওকে কাজটির জন্য অনেক সময় দিয়েছি। আমার পুরো টিমটাকে কাজে লাগিয়েছি। পার্কটির ডিজাইন অবশ্যই দৃষ্টিনন্দন হবে। স্থপতি আরও বলেন, ইউএনও কম খরচের ডিজাইন চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরো রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নামে পার্কটির নামকরণ হওয়ায় বিনা পারিশ্রমিকে ডিজাইনটি করে দিয়েছি।

তিন বছরে হিসেব করলে আমার ২০ লাখ টাকার মতো বিল আসতো। বঙ্গবন্ধুর নামের পার্কটিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে পেরেও আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। ভিত্তিপ্রস্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় আমার নাম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। তবে, ইউএনও আশ্বাস দিয়েছেন উদ্বোধনের সময় আমার নাম দেবেন। জাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ বছর প্রবাসে ছিলাম। সেখানে শিশুদের জন্য অনেক বিনোদন কেন্দ্র দেখেছি। তবে নিজ উপজেলায় শিশু কেন্দ্র না থাকায় খুব হতাশ ছিলাম। বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক নির্মাণের খবরটি পেয়ে খুবই আনন্দিত। তবে উদ্বোধনের সময় সাবেক ইউএনও শাহাদত কবীরকে রাখলে অনেক খুশি হবো।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান খান বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমি সর্বক্ষণ পার্কটি নিয়ে কাজ করছি। জায়গাটি উপজেলা পরিষদের ছিল। এই জায়গাটার সুষ্ঠু ব্যবহার করে একটি উপযুক্ত পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন পার্ক শুধু দেলদুয়ারেই হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, দেলদুয়ার উপজেলায় তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। প্রয়োজন বোধ থেকেই পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সম্ভবত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পার্কটির উদ্বোধন করা হবে। উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের যৌথ অর্থনৈতিক জোগান থেকে পার্কটি নির্মাণ হচ্ছে।

তবে খরচ কিছুটা কমাতে পূর্বের ডিজাইনের কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পার্কটি নির্মাণে সম্ভাব্য কত টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কোনো ধারণা দেননি। উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউর ইসলাম খান জানান, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন অর্থায়নে শিশু পার্কটি নির্মাণ হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলীসহ আমাদের সমন্বয়ে স্থপতি অপু পার্কটির পূর্ণ ডিজাইন করেছেন। ব্যয় কমাতে বাউন্ডারিসহ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে পার্কটি দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মারুফ বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে বিনোদন কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে। দেলদুয়ারে কোনো পার্ক ছিল না।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদের জায়গায় নির্মিত পার্কটি অবশ্যই শিশুদের বিনোদনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এখন থেকে এ অঞ্চলের শিশুদের জেলা শহরে যেতে হবে না। ঘর থেকে বের হয়েই বিনোদনের সুযোগ পাবে। এছাড়া শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও অবসর সময় কাটাতে পারবেন।তবে নির্মাণ ব্যয় এবং এপর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান।