মোঃ এনামুল হক লোহাগড়া স্টাফ রিপোর্টারঃ

নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ডুটকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে গাছ কেটে সরকারি অনুদানে মন্দির নির্মান ও বিদ্যালয়ের সরকারি ঘর ভেঙে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খবর পেয়ে নড়াগাতী থানা পুলিশ ২টি মেহগনি গাছ আটক করে।

উপজেলার বাঐসোনা ইউপির সাবেক সদস্য ডুটকুরা গ্রামের শংকর বিশ্বাসসহ ২ জন গত ১২ সেপ্টেম্বর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তবে গত ৭ দিনেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া উঠেছে।

অভিযোগের বিবরনে জানা যায়, ডুটকুরা গ্রামের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে। প্রভাবশালীদের সহায়তায় প্রথমে একটি অস্থায়ী পুজা মন্ডপ স্থাপন করা হয়| তিনি শিশু শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের পাঠ দানের বিদ্যালয়ের একটি সরকারি পুরাতন টিনসেড ঘর করোনাকালীন ছুটির মধ্যে ভেঙে নির্মানাধীন মন্দিরের ছাদে ব্যবহার করেন| পরে তা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে চিত্তরঞ্জন পোদ্দার ও তার সহযোগীরা গত ১০সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধলাখ টাকা মূল্যের ২ টি মেহগনী গাছ কেটে নেয়ার সময় উপজেলার নড়াগাতি থানা পুলিশ, গাছ দুটি আটক করেছে। তারা সরকারী জমি রক্ষার দাবিও জানিয়েছেন।

ডুটকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য ওই গ্রামের পরিতোষ কুমার বাওয়ালী বলেছেন, বিদ্যালয়ের জমিতে কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস প্রথমে বাশেঁর তৈরী একটি অস্থায়ী পুজা মন্ডপ তৈরী করে। পরবর্তীতে তিনি সরকারী অনুদান নিয়ে মন্দিরের ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। মন্দিরের বারান্দার জায়গার জন্য কয়েকদিন আগে ২টি মেহগনী গাছ কাটা হয়েছে।
এর আগেও মন্দিরের ভবন নির্মানের সুবিধার জন্য জমি থেকে কিছু গাছ কাটা হয়েছিল। তবে বিদ্যালয়ের পুরাতন ঘর বিক্রির সত্যতা তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে ঘরটিতে শিশু শ্রেনীর পাঠদান করা হতো বলে তিনি জানিয়েছেন।

চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেছেন, বিদ্যালয়ের জমির গাছ কর্তনসহ জমিতে মন্দির নির্মানের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, জমিটি স্কুলের হলেও বহু বছর আগে সেখানে পুজা হত। বিভিন্ন কারনে পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ২০১৪ সালে তিনি সেখানে পুজার কাজ শুরু হয়।

সরকারী অনুদান নিয়ে তিনি মন্দিরের ভবন নির্মান করেন।চলতি বছর তিনি ১লাখ টাকা সরকারী অনুদান পেয়ে গত ৫ মাস যাবত মন্দিরের ভবন নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ বা সরকারী কর্মকর্তারা জানলেও তারা মন্দির নির্মানে তাকে কেউ নিষেধ করে নাই। অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই বলে তিনি জানিয়েছেন।

ডুটকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চঞ্চলা রানী বিশ্বাস এবিষয়ের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তিনি এই বিষয়টি লিখিত ভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।

তিনি বলেন বিদ্যালয় সম্পূর্নভাবে খুললে শিশু শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।

অভিযোগ দায়েরকৃত তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি সহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেছে, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রোকসানা খাতুন মেহগনি কাটাগাছ আটকের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করে নাই অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তিনি সহ একজন তদন্তকারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কালিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাটির বিষয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে| তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।