আপেলের বৈজ্ঞানিক নাম হল ম্যালাস ডোমেস্টিকা এবং এই ফল সারা বছর ধরে পৃথিবীর সর্বত্র দেশগুলিতে আমদানি ও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ডাক্তারদের মতে প্রতিদিন যেসব সবজি বা ফল অবশ্যই খাওয়া উচিত তার মধ্যে আপেল হল অন্যতম।

আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং পটাসিয়াম। এসব উপাদানগুলো শারীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দেয়। তবে অতিরিক্ত আপেল খাওয়ার ফলে শরীরে একদিনেই শরীর বেশিমাত্রায় ক্যালোরি গ্রহণ করে।

প্রতিদিন একটা আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখে’ এমন একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। তবে মনে রাখতে হবে এই ফল যখন তখন খেলেই কাজে দেবে না। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, প্রতিটা ফল খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, এতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এই কারণে আপেল খাওয়ারও একটা সুনির্দিষ্ট সময় আছে।

সকাল বেলা

পুষ্টিবিজ্ঞানের রীতিতে সকাল বেলা আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ, আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিন সমৃদ্ধ। অনেকেরই অপর্যাপ্ত ঘুম, দেরিতে ঘুম ইত্যাদির কারণে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপেল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অন্যন্য ফলের তুলনায় সকালে আপেল খাওয়া অন্ত্রের ক্রিয়া সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

পেকটিন

দ্বিতীয়ত, পেকটিন ল্যাক্টিক অ্যাসিড সুরক্ষিত রাখতে এবং কোলনে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যা পরবর্তিতে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও পেকটিন টক্সিনের পরিমাণ কমাতে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান কারসিনোজেন্স দূর করতে সাহায্য করে।

অবেলায় আপেল খেলে কী হয়?

বিকাল বা রাতে আপেল খাওয়া হলে তা হজম ও অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এর অর্থ হল, রাতে আপেল খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

জৈব অ্যাসিড

আপেলের জৈব অ্যাসিড পাকস্থলির অ্যাসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে।

আপেলের উপকারিতা

সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দুপুরের খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খেলে বেশি উপকার হয়। যা পুষ্টি সরবরাহে, ওজন কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে, হজমক্রিয়া বাড়াতে এবং দীর্ঘসময় শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।

খোসাসহ আপেলের খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে – আপেলে প্রায় ৮০% পানি থাকে যা শরীরের জন্য অতীব দরকারি।

খাদ্যশক্তি—– ৫২ কিলোক্যালরি
শর্করা—– ১৩.৮১ গ্রাম
চিনি—– ১০.৩৯ গ্রাম
খাদ্যআঁশ—– ২.৪ গ্রাম
চর্বি—– ০.১৭ গ্রাম
আমিষ—– ০.২৬ গ্রাম
জলীয় অংশ—– ৮৫.৫৬ গ্রাম
ভিটামিন এ—– ৩ আইইউবিটা
ক্যারোটিন—– ২৭ আইইউ
লুটেইন—– ২৯ আইইউ
থায়ামিন—– ০.০১৭ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন—– ০.০২৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন—– ০.০৯১ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড—– ০.০৬১ মিলিগ্রাম
ফোলেট—– ৩ আইইউ
ভিটামিন সি—– ৪.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই—– ০.১৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে—– ২.২ আইইউ
ক্যালসিয়াম—– ৬ মিলিগ্রাম
আয়রন—– ০.১২ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম—– ৫ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ—– ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস—– ১১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম—– ১০৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম—– ১ মিলিগ্রাম
জিংক—– ০.০৪ মিলিগ্রাম
ফ্লোরাইড—– ৩.৩ আইইউ

পেলের বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর! আপেলের বীজ পেটে চলে গেলে তা স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। একটা বা দুটো বীজে তেমন কোনও মারাত্মক ক্ষতি না হলেও পেটে খিঁচুনি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বেশ কয়েকটা আপেলের বীজ চিবিয়ে খেলে তা থেকে শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া হতে পারে। আপেলের বীজে থাকা অ্যামিগডালিন অত্যাধিক পরিমাণে শরীরে মিশলে তা রক্তের অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয় রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক সরবরাহ। ফলে মিনিট খানেকের মধ্যেই মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!

যত খুশি আপেল খান। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উল্লেখিত এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই চলবে।