মিরু হাসান বাপ্পী, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: শহরের মানুষের আবর্জনা আমাদের কাছে আয়ের উৎস। আবর্জনা কুড়িয়ে আমার মতো আরও ৩০-৩৫ পরিবার চলে। শিশুকাল থেকেই আমি আবর্জনা কুড়িয়ে সংসার চালাচ্ছি। স্বামী আর দুই ছেলে নিয়েই আমার সংসার। কথাগুলো বলছিলেন বগুড়া রেলস্টেশন বসতির বাসিন্দা জরিনা বেগম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া পৌরসভার মানববর্জ্য শোধনাগার সেউজগাড়ি শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম রোডে অবস্থিত। এখানে তার মতো অনেকেই মানববর্জ্য ঘেটে বের করছেন প্লস্টিক পণ্য, কাচের ও প্লাস্টিকের বোতল, মেডিকেল পণ্য। যা তারা ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করেন শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রতিনিয়ত এখানে শহরের ডাস্টবিনের আবর্জনা ফেলা হয়।
আর এ আবর্জনার অপেক্ষায় ভোর থেকে অপেক্ষায় থাকে এ এলাকার জরিনা বেগম, আছমা, বেহুলা, করিম, নুরি, মনোয়ারাসহ অনেকে। ময়লার গাড়ী ময়লা ফেলে চলে গেলে তারা গামবুট জুতা পরে, অনেকে খালি পায়ে আঁকড়া আর পলিথিনের বস্তা নিয়ে আবর্জনা ঘাটতে শুরু করেন।
আঁকড়া দিয়ে আবর্জনা নেড়ে নেড়ে খোঁজ করে তাদের কাঙ্খিত মালামাল। তবে তাদের চোখ থাকে লোহা, প্লাস্টিক পণ্য, কাঁচের বোতল এবং মেডিকেল পণ্যের দিকে। মালামাল কুঁড়ানোর পর শুরু হয় ক্যাটাগরি অনুযায়ী বাছাই।
জানা গেছে, প্রতি কেজি সাদা রঙের প্লাস্টিক ৪০ টাকা, লাল রঙের প্লাস্টিক ৩০ টাকা, কাঁচের বোতল সাড়ে ৫ টাকা, লোহা-টিন ২০ টাকা, প্লাস্টিকের বোতল ১৫ টাকা, বোতলের মুখ (সিপি) ২০ টাকা দরে বিক্রি করে। এ মালামাল বিক্রি করে শহরের বিভিন্ন পাইকারি ভাঙারির দোকানে। তবে দাম একটু বেশি পেতে সপ্তাহ শেষে অনেকেই শহরের হাড্ডিপট্টি বাজার এলাকায় এ মালামাল বিক্রি করে থাকে।
শহরের হাড্ডিপট্টির ভাঙারি ব্যবসায়ি ইকবাল হোসেন জানান, “এদের কাছ থেকে মাল কিনে শহরের বড় পাইকাড়দের কাছে বিক্রি করি। তাদেরও আয় হয়, সেই সঙ্গে আমারও কিছু লাভ হয়। স্থানীয় কিছু নারী-পুরুষ আবর্জনা ঘেটে ভাঙাড়ি কুড়ান। পরে বাছাই করে বিক্রি করেন।
বগুড়া রেলস্টেশন বসতির বাসিন্দা জরিনা বেগম জানান, “প্রতি সপ্তাহে আর্বজনা ঘেটে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা আয় হয়। আর তাতেই চলে আমাদের সংসার। ভাগ্য ভালো হলে কখনো কখনো এ আবর্জনার মধ্যে মূল্যবান স্বর্ণও মিলে যায়। আবর্জনার মধ্যে অনেকে সুই, ব্লেড ফেলে।
মাঝে মাঝে তা হাতে ফোটে। তখন কষ্ট লাগে। সবার কাছে আমাদের কাজ নোংরা মনে হলেও আমাদের কাছে এ ময়লার স্তুপ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ময়লার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে এ এলাকার ৩০-৩৫টি পরিবার।”
বসতির বাসিন্দা আছমা জানান, “আমি বিধবা নারী। কাজকাম পাই না। বাসা বাড়িতে ধোয়া মোছার কাজ করতাম। করোনার কারণে গত বছর কাজ ছাড়া। তাই মানুষের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে, আবর্জনা থেকে ভাঙারি বেছে বেছে বিক্রি করে সংসার চালায়।”
বগুড়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আবর্জনা বহণের গাড়ি চালক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রত্যেক বাড়ি আর ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে ভ্যানগাড়িতে করে সেউজগারি নিয়ে আসি। ভোর থেকেই এসব লোকেরা ময়লা থেকে প্লাস্টিক, লোহা বাছাই করার জন্য এক হাতে আঁকড়া, অন্য হাতে বস্তা নিয়ে প্রস্তুত থাকে।”